Reading Time: 3 minutes

সম্প্রতি ফেসবুকের মালিক সংস্থা মেটা বলছে যে তাদের ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের উপর কিছু সংস্থা গোপন নজরদারি চালাচ্ছে। গোপন নজরদারি চালানোর জন্য সাতটি সংস্থাকে মেটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মেটা এই গোপন নজরদারি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে তার মধ্যে রয়েছে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা, যাদের টার্গেট করা হয়েছে তাদের ফেসবুক বন্ধুদের সরিয়ে দেয়া এবং হ্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এই ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে তথ্য বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো। মেটা তাদের এক রিপোর্টে বলছে যে এধরনের অপ্রীতিকর কাজকর্ম সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার ব্যবহারকারী তাদের কাছ থেকে সতর্কবার্তা পাবে।

মেটা বলছে যে কয়েক মাস ধরে তদন্ত চালানোর পর বিভিন্ন দেশে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এর প্রায় দেড় হাজার পেজ মেটা সরিয়ে ফেলেছে। মেটার অভিযোগ ছিল যে এই সাইবার গুপ্তচর কোম্পানিগুলো সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে এসব নজরদারি চালিয়েছে। মেটার মতে এসব নজরদারি সংস্থাগুলো যারা নিয়োগ করেছিল তাদের হয়ে ১০০-টির বেশি দেশে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে এই গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে গিয়েছে। মেটার নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক প্রধান ন্যাথানিয়েল গ্লেইশার এক রিপোর্টে জানিয়েছেন যে নজরদারির এই ব্যবসা শুধু একটা প্রতিষ্ঠানে সীমিত নয়, এটি অনেকখানিই বিস্তৃত।

বৃহস্পতিবার মেটা সংস্থার প্রকাশিত উক্ত রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে এ বছরের গোড়ার দিকে ইসরায়েলে তৈরি একটি স্পাইওয়্যার পেগাসাস হাজার হাজার মানুষকে টার্গেট করেছে এমন অভিযোগের পর তারা সামাজিক মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এই গোপন নজরদারি সংস্থাগুলোর কার্যকলাপের ওপর বাড়তি নজর রাখার কাজ শুরু করে। পেগাসাস-এর মালিক সংস্থা ইসরায়েলের এনএসও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাদের সফটওয়্যার ছড়িয়ে দেবার অভিযোগে ফেসবুক ইতোমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।

নয়াথানিয়েল গ্লেইশার আরও বলেছেন যে তাদের তদন্তে যেটা উঠে এসেছে সেটা হল সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মানবাধিকার প্রবক্তাদের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরই যে শুধু টার্গেট করা হয়েছে তা নয়, এমনকি তারা নির্বিচারে সাধারণ মানুষকেও লক্ষ্য করে নজরদারি চালিয়েছে। আমেরিকান সরকার গত মাসে এনএসও এবং গোপন তদন্ত চালানো অন্যান্য সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমেরিকা অভিযোগ এনেছে যে ব্যক্তিবিশেষকে অন্যায়ভাবে লক্ষ্য করে নজরদারি চালানোর জন্য তারা বিদেশী সরকারগুলোকে এই স্পাইওয়্যার দিয়েছে।

মেটার কর্মকর্তারা বলছেন যে ফেসবুক ব্যবহারকারী যারা গোপন নজরদারির শিকার হয়েছেন তাদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্ক নোটিশ পাঠানো হবে, তবে কী ধরনের নজরদারি চালানো হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে না। মেটা যেসব সংস্থার নাম উল্লেখ করেছে তাদের মধ্যে ইসরায়েলি কোম্পানি ব্ল্যাক কিউব একটি। আমেরিকায় হলিউড প্রযোজক হার্ভি ওয়েনস্টেইন যেসব নারী তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করছে তাদের ওপর গোপন নজরদারির জন্য এই সংস্থাকে ভাড়া করার পর ব্ল্যাক কিউবের নাম সামনে আসে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে দেয়া একটি বিবৃতিতে ব্ল্যাক কিউব কারোর অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা ফিশিং করার অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলে তাদের হয়ে কাজ করা প্রত্যেক গুপ্তচর সংশ্লিষ্ট দেশের স্থানীয় আইন পুরোপুরি মেনেই তাদের কার্যকলাপ চালিয়েছে। যদিও মেটা সংস্থাগুলোর এরকম অবৈধভাবে ব্যবহারীদের উপর নজর রাখছে এবং সংস্থাগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এই বিষয়টি অনেকটাই হাস্যকর। ব্যবহারকারীদের গোপনে তথ্য চুরির শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এই সাবেক ফেসবুক প্রতিষ্ঠান (বর্তমানে মেটা)।

সংস্থাগুলো কালো তালিকায় রাখার আস্বস্ত করলেও মেটা তার কিছুই এখনো করেনি। সম্প্রতি মেটার বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ উঠে এসেছে। ভ্যাক্সিন সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য, রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ছড়ানোসহ আরো বিভিন্ন কুকর্ম ও মিথ্যাচার ছড়ানো ব্যাপার নিয়ে মেটাকে বিরম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে। মেটার সাবেক কর্মী দ্বারা কোম্পানির ভেতরকার কর্ম ফাস হবার পর ও মেটার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। অর্থাৎ মেটা সম্পর্কে অগণিত অভিযোগ ব্যাপারে সমাধানের কথা উল্লেখ করলেও পরবর্তিতে তারা কোন সমাধান করেনি।

তারা নিজেরাই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অবৈধভাবে ডেটা সংগ্রহ করছে ব্যবহারকারীদের কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। নিজস্ব নিয়ন্ত্রনে এবং বিনা অনুমতিতে তারা ব্যবহারকারীদের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তারা অবৈধ কাজে ব্যবহারকারীর পরিচয় এবং ছবি ব্যবহার করে নানান রকম কূকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এরপর ফেসবুকে প্রতিষ্ঠানের নাম পালটে মেটা নামকরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের কূকর্মের ইতিহাস ঢাকার চেষ্টা করেও তাতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও কালো তালিকাভূক্ত সংস্থাগুলোর গোপন তদন্তের ব্যাপারে ব্যবহারকারীদের সতর্ক বার্তা পৌছে দেয়ার কথা ফেসবুক জানালেও তারা নিজেরাই ব্যবহারকারীর অজান্তে নানান রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে।

আর এজন্য ব্যবহারকারীদের কোন প্রকার সর্তক বার্তা দেয়া হয় না। এমনকি তৃতীয় পাক্ষিক ও বেশ কয়েকটি সরকারী গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহারকারীদের উপর নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রে স্থান দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ হ্যাকিং এবং রাজনৈতিক ইস্যুতেও ফেসবুক জড়িত রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.