Reading Time: 2 minutes

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেসবুকে চীন থেকে পরিচালিত প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্ক মুছে দেওয়ার দাবি করছে। মেটা জানায় যে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররাই চীনা প্রচারণার মূল লক্ষ্য ছিল। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম সহ টুইটারেও ওই নেটওয়ার্কটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতো বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে, আকারে বেশি বড় ছিল না এবং খুব বেশি ব্যবহারকারীকেও আকৃষ্ট করতে পারেনি নেটওয়ার্কটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায় যে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সরাসরি প্রভাবিত করার চেষ্টা হিসেবে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে মেটার গ্লোবাল থ্রেট ইন্টেলিজেন্স প্রধান বেন নিমো বলেন, আগে যে চীনা অপারেশনগুলোকে মুছে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে কথা বলতো, বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকায়। সরাসরি মার্কিন নাগরিকদের তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নয়। বেন আরও বলেন, আগের চীনা অপারেশনগুলোর মূল বার্তা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র খারাপ আর চীন ভালো।

তবে, চীনা ভূখণ্ড থেকে কে বা কারা মেটার প্ল্যাটফর্মে এই প্রচারণা চালাচ্ছিল, সেটা নির্দিষ্ট করে বলার মতো যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন মেটার আরেক নির্বাহী। কিন্তু সম্প্রতি মুছে দেওয়া প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্কটি গর্ভপাত এবং ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকারের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে মার্কিনীদের মধ্যে আরও বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছিল বলে বেন জানিয়েছেন। অন্যদিকে, মেটার প্রতিবেদন সম্পর্কে অবহিত আছেন এবং চীনা অ্যাকাউন্টগুলো নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকে মুছে দেওয়ার তথ্য রয়টার্সকে জানিয়েছেন এক টুইটার মুখপাত্র।

মেটার নিজস্ব প্রতিবেদন বলছে, প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্কের ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো অঙ্গরাজ্যভেদে কখনো উদারপন্থী আর কখনো বা রক্ষণশীল দলের সমর্থকের ছদ্মবেশ ধারণ করছিল। ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলো রাজনৈতিক মিম ব্যবহার করে প্রচার চালাচ্ছিল এবং জনপ্রতিনিধিদের পোস্টের মন্তব্য অংশে বিতর্ক উসকে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল।

উদাহরণ হিসেবে একটি অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট দেখিয়েছে মেটা। রিপাবলিকান দলের সিনেটর মার্কো রুবিওর ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করে তাকে আগ্নেয়াস্ত্র কেন্দ্রীক সহিংসতা থামাতে বলেছিল। একটি ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট কমেন্টে হ্যাশট্যাগ “RubioChildrenKiller” ব্যবহার করেছিল।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

একই নেটওয়ার্ক চেক রিপাবলিকের নাগরিকদের ছদ্মবেশ নিয়ে একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে চীনের প্রতি দেশটির সরকারের আচরণের সমালোচনা করছিল বলে উঠে এসেছে মেটার প্রতিবেদনে। প্রোপাগান্ডা প্রচারে অন্তত ৬০টি ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রায় চার হাজার ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে উক্ত নেটওয়ার্ক। এ ছাড়াও বড় পরিসরের একটি জটিল রুশ অপারেশন চিহ্নিত করার দাবিও করেছে মেটা কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানিটি বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এটাই ছিল জনমত পরিবর্তনের লক্ষ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় চেষ্টা। মেটার অভিযোগের প্রতিক্রিয়া ওয়াশিংটনে অবস্থিত রুশ দূতাবাস বলেছে, মেটা মার্কিন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে কাজ করছে এবং বাকস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করছে। এটা ইঙ্গিত করছে যে মার্কিন টেক জায়ান্ট, যাদের মালিকানায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো আছে, তারা মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাসে পরিণত হয়েছে এবং ভিন্নমতকে চাপা দেওয়ার কৌশল বেছে নিয়েছে।

নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেলে রুশ দূতাবাস বিষয়টি জানায়। মেটা আরও জানিয়েছে, উক্ত প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্কের মূল লক্ষ্য ছিল জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ইউক্রেন এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা। রাশিয়া সমর্থক বার্তা প্রচারের অংশ হিসেবে বিজ্ঞাপনের পেছনে এক লাখ ডলারও খরচ করেছে নেটওয়ার্কটি। ক্ষেত্রবিশেষে, প্রোপাগান্ডা কনটেন্ট প্রচারে অংশ নিয়েছে ইউরোপ ও এশিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাসগুলো। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিদেশি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে উঠে আসায় বিষয়টি নিয়ে তার কার্যালয় শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড।

নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা বেশ কিছুদিন আগেই শুরু হয়েছে এবং এখনও চলছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.