2018/9/30
Photo by Michael Lee on Unsplash
Reading Time: 3 minutes

বিবিসির এক প্রতিবেদনে ক্লাবভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি ও টোকেন লেনদেন নিয়ে একটি চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। ইউরোপ ফুটবল ক্লাবগুলো ভক্তদের কাছে ক্রিপ্টো টোকেন বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে। মূলত এই ক্লাবভিত্তিক ক্রিপ্টোর পেছনে আনুমানিক ৩৫ কোটি ডলার খরচ হয়েছে, এর মধ্যে কিছু ক্রিপ্টো টোকেন ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে বাজারজাত করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে ব্যয়বহুল ক্রিপ্টো টোকেন থেকে যে বাস্তব সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে, তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। স্টেডিয়ামে কোন গান চালানো হবে, সেটি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় ক্রিপ্টো টোকেন থেকে ভোট করার সুযোগের মতো প্রয়োজনীয় সুবিধা মিলছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ও টোকেন, দুটোই হচ্ছে ক্লাবভিত্তিক। ভার্চুয়াল মূদ্রার মূল ধারার আদলে ক্লাবভিত্তিক ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেন হচ্ছে। সেই সাথে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে দামের ওঠা নামাও চলছে। বিবিসি জানিয়েছে যে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ইউরোপিয়ান লিগের মধ্যে অন্তত ২৪টি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাব হয়তো ইতোমধ্যেই ক্রিপ্টো-টোকেন প্রচলন করেছে নয়তো খুব শিগগিরই এটি করার কথা ভাবছে। প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোও ক্রিপ্টো-টোকেন প্রযুক্তিতে সংযুক্ত হয়েছে। এছাড়াও বিবিসি জানিয়েছে যে ম্যানচেষ্টার সিটির মতো কয়েকটি ক্লাব এরই মধ্যে এনএফটি বা নন-ফাঞ্জিবল টোকেনও বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছে।

বিবিসি আরও বলেছে যে সোশিওস নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে ২৭ থেকে ৩০ কোটি ডলারের টোকেন বিক্রি করার দাবি করেছে। তবে ফুটবল ক্লাবগুলো এখান থেকে কী পরিমাণ অর্থ অর্জ করেছে সে প্রসঙ্গে এখনো প্রতিষ্ঠানটি কিছু বলেনি। সোশিওস নামের প্রতিষ্ঠানটি ক্লাবভিত্তিক ক্রিপ্টো মুদ্রা ও টোকেনের প্রচলন এবং পরবর্তী লেনদেনের বিষয়গুলো দেখছে। তবে এ খাতে বাইন্যান্স এবং বিটসির মতো ডিজিটাল মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিও বাড়ছে। ফুটবল ক্লাবের অর্জন বিষয়ে অজানা থাকার কারনে ভক্ত বা ক্রেতাকে প্রথমে নিজের অর্থ সোশিওসের নিজস্ব ডিজিটাল টোকেন ‘চিলিজ’ এ রূপান্তর করতে হয়।

এনএফটি-নন-ফাঞ্জিবল-টোকেন-ক্রিপ্টো

তবে প্রতিবেদন বলছে যে ক্লাবভিত্তিক ফ্যান টোকেনগুলোর রিলিজের পর থেকেই দাম পড়েছে। রিলিজের পর থেকে দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে ম্যানচেষ্টার সিটি এবং লাজিও টোকেনের। দুই ক্লাবের ফ্যান টোকেনের দামযথাক্রমে ৫০ ও৭০ শতাংশ কমেছে। ফ্যান টোকেন বিক্রি করে লাজিও, পোর্তো, ম্যানচেস্টার সিটি এবং সান্তোস সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করছে। লাজিও টোকেন থেকে সবচেয়ে বেশি কামাই করেছে, যার পরিমাণ ১৩ কোটি ডলার। আরেকটি বিষ্ময়কর বিষয় হলো ইন্টার মিলান ও তুরস্কের ক্লাব ট্যাবজোনস্পোরের ফ্যান টোকেনের দাম বেড়েছে।

বছর জুড়ে দুই ক্লাবের ফ্যান টোকেনের মূল্য বৃদ্ধির হার মূল ধারার বিটকয়েনের চেয়েও বেশি ছিল। ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাব ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ আলবিয়নের এক মুখপাত্র টোকেন প্রসঙ্গে বলেন যে তারা এই পণ্যগুলো বিক্রি করেনি এবং এই বাজারে প্রবেশের কোনো পরিকল্পনাও তাদের নেই। প্রিমিয়ার লিগের সবগুলো দল এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে এই প্রসঙ্গে বিবিসি যোগাযোগ করেছে। কিন্তু কেবল একটি ক্লাবের মুখপাত্র খুশি মনেই বার্তাসংস্থাটির অনুসন্ধানের উত্তর দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন যে ভক্তদের হাতের মুঠোয় থাকবে এমন পণ্যের বিবেচনায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফ্যান টোকেনগুলো নিয়ে লেনদেন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

ক্লাবভিত্তিক ক্রিপ্টো-টোকেন লেনদেনের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে সমালোচনাও চলছে। লেনদেন প্রসঙ্গে সমালোচনার আরেকটি বিষয় হলো ক্লাবগুলোর কর্মকাণ্ড। বেশিরভাগ টোকেন ভক্তদের কাছে বিক্রি না করে ক্লাবগুলো নিজের হাতেই রাখছে এমনটি শোনা যাচ্ছে। ফলে উক্ত বাজারগুলো আরও অস্থিতিশীল হচ্ছে। ১৩টি ক্লাবের হাতে অন্তত একশ নব্বই কোটি ডলারের ফ্যান টোকেন রয়েছে। কিন্তু ভক্ত ক্রেতাদের হাতে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের টোকেন রয়েছে। গড়ে ফ্যান টোকেনের ৮০ শতাংশই ক্লাবগুলোর কাছে থাকছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তির মাধ্যমে কামাই বাড়াতে বেশ কয়েকটি ক্লাব এনএফটি ও বিক্রি করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নিজস্ব এনএফটি বিক্রি করা শুরু করেছে জুভেন্টাস, ম্যানচেস্টার সিটি এবং রেঞ্জারস। ভক্তদের কেউ কেউ ক্ষেত্রবিশেষে ছবি ও ভিডিওর ডিজিটাল কপিগুলোর পেছনে হাজার হাজার ডলার খরচ করছেন। এনএফটি সংগ্রহকারী মাইক বাওসিস জানান যে পাঁচটি এনএফটি’র পেছনে তিনি ৪০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করেছেন। বিবিসি জানিয়েছে যে শুধু দুটি এনএফটি বেচে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড ৮০ হাজার ডলার আয় করেছে এমন ইঙ্গিতও মিলছে।

অন্য যে কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে সোশিওসের অ্যাপটিতে ক্লাব ভিত্তিক টোকেনের তথ্য দেখানো হয়। তবে, সোশিওসের কর্মকর্তা ম্যাক্স রবিনোভিচ বলছেন যে অ্যাপটির লেনদেন ব্যবস্থা এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যেন টোকেন দ্রুত বিক্রি করে মুনাফা কামানোর বদলে ভক্তরা যেন লম্বা সময় ধরে রাখতেই আগ্রহী হন। বিবিসি’র কাছে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের সমর্থক সু ওয়াটসন ক্রিপ্টো-টোকেন লেনদেনকে নিরাপদ এবং ভক্তদের জন্য কী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছে ক্লাবগুলো প্রশ্ন তুলে ধরে মন্তব্য করেছেন।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.