বৃহস্পতিবার বিকেলে নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন এবং ওয়াশিংটন পোস্টসহ বেশ কিছু সংবাদকর্মীর অ্যাকাউন্ট টুইটারে কোনো নোটিশ ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায়। ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত প্লেনের সর্বজনীনভাবে উন্মুক্ত বিভিন্ন তথ্য অনুসরণ করে “ইলনজেট” নামক এক টুইটার অ্যাকাউন্ট। ইলনজেট’ নামের এক টুইটার অ্যাকাউন্ট নিয়ে তৈরি মতামতের অমিল থেকে ঝামেলার শুরু। বুধবার, ওই অ্যাকাউন্ট’সহ ব্যক্তিগত জেট সম্পর্কিত অন্যান্য সকল অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় টুইটার।
তবে, এর আগের টুইটে বাক স্বাধীনতার কারণ দেখিয়ে ইলনজেট এর অ্যাকাউন্টে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার কথা বলেছিলেন ইলন মাস্ক। পরপরই, নিজস্ব ‘লাইভ লোকেশন’ তথ্য শেয়ারিং সংশ্লিষ্ট প্রাইভেসি নীতিমালায় পরিবর্তন আনে টুইটার। টুইটারের নিরাপত্তা প্রধান এলা আরউইন এক ইমেইল বার্তায় রয়টার্সকে বলেন, ইলনজেটের অ্যাকাউন্টের সরাসরি লিংক পোস্টের মাধ্যমে নতুন প্রাইভেসি নীতিমালা লঙ্ঘন করা সকল অ্যাকাউন্ট নিজ হাতে পর্যালোচনা করে দেখেছে তার দল।
ইমেইল বার্তায় তিনি বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন এর সকল ফোকাস মূলত সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্টের দিকে। তবে, আজ সাংবাদিক-অসাংবাদিক, সব অ্যাকাউন্টে সমানভাবে এই নীতিমালা প্রয়োগ করছেন। সংবাদকর্মীদের উপস্থাপনায় টুইটার স্পেসেস নামে পরিচিত এক অডিও আলাপচারিতায় অল্প সময়ের জন্য উপস্থিত ছিলেন মার্কিন ইলন মাস্ক। এর ফলে সাংবাদিকরা মাস্কের রিয়েল-টাইম লোকেশন প্রকাশ করে নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
মার্কিন সংগঠন সোসাইটি ফর অ্যাডভান্সিং বিজনেস এডিটিং অ্যান্ড রাইটিং শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, টুইটারের আচরণ প্রথম সংশোধনীর চেতনার পাশাপাশি সামাজিক প্ল্যাটফর্মের ওই নীতির লঙ্ঘন করেছে, যা সবার কাছে সমানভাবে তথ্য পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে নিজের রিয়েল টাইম লোকেশন পোস্ট করার অভিযোগ তুলেছেন মাস্ক, যা তার পরিবারের জন্য হত্যার ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন মাস্ক বলেন, তাকে কেউ ‘ডক্স’ করলে নিষিদ্ধ হবেন। এটাই শেষ কথা। ‘ডক্স’ বলতে অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করাকে বোঝায়। ওই অডিও চ্যাটে আরও ছিলেন টুইটারে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ড্রিউ হারওয়েল। ইলনজেটের লিঙ্ক পোস্ট করে মাস্ক বা তার পরিবারের সঠিক লোকেশন শেয়ারের ধারণা তিনি পুরোপুরি নাকচ করেন। এর পরপরই, স্পেসেস চ্যাট উপস্থাপন করা মার্কিন গণমাধ্যম বাজফিডের প্রতিবেদক কেটি নটোপলোস টুইট করেন, অডিও সেশনটি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ও এর রেকর্ডিং মিলছে না।
ওই ঘটনা সম্পর্কিত এক টুইটের জবাবে মাস্ক বলেন একটি লিগাসি বাগ নিয়ে কাজ করছে তার টিম। কাল থেকে এটি কাজ করবে।
ব্যান হওয়া সংবাদকর্মীদের ফিরিয়ে আনেন ইলন মাস্ক
নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার এক দিনের মাথায় অনলাইনে সমালোচনার মুখে পড়ে টুইটারে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীর অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে এনেছেন সামাজিক প্ল্যাটফর্মটির মালিক ইলন মাস্ক। সাম্প্রতিক এই ঘটনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে টুইটার বিপদের মুখে ফেলছে বলেও সমালোচনা উঠে এসেছে। শুক্রবারের ওই নজিরবিহীন স্থগিতাদেশের বিপরীতে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশের সরকারী কর্মকর্তা, আইনজীবি দল ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অ্যাকাউন্টগুলো পুনর্বহাল করেছে টুইটার।
২০২০ সালের মার্চের পর থেকে সাপ্তাহিক হিসাবে সবচেয়ে বড় লোকসানের মুখে পড়েছে মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলার শেয়ার। শুক্রবার, এর শেয়ারের দাম কমেছে চার দশমিক সাত শতাংশ। এই বিষয়ে মাস্কের বিক্ষিপ্ত মনোভাব ও তুলনামূলক মন্থর বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে শঙ্কা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও। শুক্রবার ফ্রান্সের শিল্পমন্ত্রী রঁলা লেসকিউর টুইট করেন, সাংবাদিকদের ওপর মাস্কের স্থগিতাদেশের পর তিনি নিজেও টুইটারে কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন।
জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর টুইটারকে সতর্ক করেছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপদের মুখে ফেলবে এমন পদক্ষেপে তাদের আপত্তি আছে। জাতিসংঘের যোগাযোগ প্রধান মেলিসা ফ্লেমিং টুইট করেন, স্থগিতাদেশের কারণে তিনি অত্যন্ত বিরক্ত ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোন খেলনা নয়।
শুক্রবার ফ্রান্সের শিল্পমন্ত্রী রঁলা লেসকিউর টুইট করেন, সাংবাদিকদের ওপর মাস্কের স্থগিতাদেশের পর তিনি নিজেও টুইটারে কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন।
এর পরপরই মাস্ক টুইটারে এক জরিপ চালিয়ে দেখেন, বেশিরভাগ উত্তরদাতাই তাদের অ্যাকাউন্ট তাৎক্ষণিকভাবে ফেরানোর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। জনগণ কথা বলেছে। তার লোকেশনে থাকা অ্যাকাউন্টগুলো থেকে শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে বলেনশনিবার এক টুইটে জানান মাস্ক। এর আগে, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মকর্তা এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে টুইটারের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারেনি রয়টার্স।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্টের বিভিন্ন সাংবাদিকের নিষিদ্ধঘোষিত অ্যাকাউন্ট পুনর্বহালের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এই ঘটনাকে থার্সডে নাইট ম্যাসাকার বলে আখ্যা দিয়েছেন এক সুপরিচিত নিরাপত্তা গবেষক। আর সমালোচলকদের কাছে এটি বিবেচিত হচ্ছে নিজেকে বাক স্বাধীনতার ধারক দাবি করা মাস্কের দ্বিমুখী আচরণের জলজ্যান্ত প্রমাণ হিসেবে। কারণ, এতে তিনি নিজেই ব্যক্তিগত অপছন্দের বিভিন্ন বক্তব্য ও ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছেন।