Reading Time: 4 minutes

মার্কটেক্সট : ওপেনসোর্স মার্কডাউন টেক্সট এডিটর

ব্লগিং এর জন্যে স্ট্যাটিক সাইট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই প্রয়োজন পড়েছিলো পছন্দসই একটা মার্কডাউন টেক্সট এডিটর এর। ছিমছাম ইউজার ইন্টারফেস আর সেইসাথে দরকারি সুবিধাসমেত এডিটর এর খোঁজ করতে গিয়ে হদিস পাই Marktext এর। ওপেনসোর্স ও ক্রস প্লাটফর্ম এই টেক্সট এডিটরটি দেখতে যেমন চমৎকার তেমনি প্রয়োজনীয় সব ফিচারে ঠাঁসা।

মার্কডাউন কী?

Marktext কে আমি শুরুতেই পরিচিত করিয়ে দিয়েছি মার্কডাউন টেক্সট এডিটর হিসেবে। এটি কী ধরণের টেক্সট এডিটর সেটি বুঝতে হলে মার্কডাউন সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকাটা জরুরি। মার্কডাউন একটি মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ এর নাম। HTML যেমন একটি মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ, মার্কডাউনও সেরকমই একটি ল্যাঙ্গুয়েজ। তবে অন্যান্য মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ এর থেকে এটি সহজবোধ্য এবং হালকা। মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ বলতে সেসকল ল্যাঙ্গুয়েজকে বোঝানো হয় যেগুলো ব্যবহার করে লেখার ফরম্যাটিং করা যায়। ফরম্যাটিং বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে লেখার সাজসজ্জার কথা। যেমন: কোনো শব্দ বোল্ড করা, টেক্সট এর আকার পরিবর্তন করার মতন কাজ। মার্কডাউন দিয়ে ফরম্যাটিং এর কাজ দ্রুত করা যায়, শিখে ফেলতেও খুব একটা সময় লাগে না তাই ব্লগারদের কাছে মার্কডাউন বেশ জনপ্রিয়। মার্কডাউন দিয়ে লেখার কাজকে আরো দ্রুত ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলে মার্কটেক্সট। তবে মার্কডাউন সিনটেক্স না জেনেও মার্কটেক্সট দিয়ে সহজেই লেখা যাবে এর ইনলাইন টুলসগুলো দিয়ে।

উল্লেখযোগ্য ফিচার

ইউজার ইন্টারফেস

মার্কটেক্সট এর ইউজার ইন্টারফেস সাদামাটা এবং সহজেই ব্যবহারযোগ্য। প্রথমবার ব্যবহার করতে গিয়ে খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হয় না। এছাড়াও অন্যান্য মার্কডাউন এডিটর গুলো থেকে মার্কটেক্সট দেখতে শুনতেও বেশ চমৎকার। ছয়টি ভিন্ন থিম মার্কটেক্সট এ প্রিসেট হিসেবে থাকে মার্কটেক্সটে। যার তিনটি ডার্ক ও তিনটি লাইট কালার স্কিমের। ইউজাররা তাদের পছন্দসই কালার স্কিম নির্বাচন করে ব্যবহার করতে পারবেন। এই ছয়টি থিম ছাড়াও পছন্দমত থিম তৈরি করে ব্যবহারের সুযোগও থাকছে। ইন্টারফেসকে প্রয়োজনমত সাজিয়ে নেয়ার সুযোগও থাকছে এতে। আরও রয়েছে সার্চ করার অপশন, ফাইল সার্চ করার পাশাপাশি ডকুমেন্ট এর অভ্যন্তরীণ কন্টেন্ট সার্চ করা যায় এখানে।

মার্কটেক্সট এ থাকা প্রিসেট থিম ছয়টি –

  • Cadmium Light
  • Ulysses Light
  • Graphite Light
  • Dark
  • One Dark
  • Material Dark
রাইটিং মোড

থাকছে তিন রকমের রাইটিং মোড। মেনুবারের View অপশন থেকে মোডগুলো সিলেক্ট করে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে।

  • সোর্সকোড মোড সোর্সকোড মোডে মার্কডাউন সিনটেক্স সরাসরি দেখা যায়। যারা WYSIWYG এর থেকে মূল কোডেই লিখতে পছন্দ করেন তাদের জন্যে এই মোডটি কাজের।
  • ফোকাস মোড ফোকাস মোড চালু করলে চলমান প্যারাগ্রাফটি হাইলাইট হবে, এ ছাড়া অন্য প্যারাগ্রাফগুলো কিছুটা কালো হয়ে যায়।
  • টাইপরাইটার মোড টাইপরাইটার মোডে লিখতে থাকার সাথে সাথে কন্টেন্ট গুলো উপরের দিকে উঠে যাবে যেমনটা টাইপরাইটারে লেখার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
রিয়াল টাইম প্রিভিউ

রিয়াল টাইম প্রিভিউ বলতে WYSIWYG বা What You See Is What You Get বোঝানো হচ্ছে। ইনপুট দেয়ার সাথে সাথে আউটপুট পাওয়ার ব্যাপারটিকেই রিয়াল টাইম প্রিভিউ বলে। অন্যান্য মার্কডাউন এডিটরগুলোতে সাধারণত একটি ভিন্ন কলাম বা উইন্ডোতে আউটপুট দেখানো হয়ে থাকে। মার্কটেক্সট এ সরাসরি ইনপুট দেয়ার সাথে সাথেই সেটি মার্কডাউনে ফরম্যাটেড হয়ে দেখায়। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার, যা ডিস্ট্র্যাকশন কমায় ও লেখায় মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। অবশ্য সোর্সকোড মোড চালু করে লিখলে এই ফিচারটি বন্ধ করা সম্ভব।

ট্যাব

একই সাথে একাধিক ট্যাব চালু করে রাখার সুবিধা থাকছে মার্কটেক্সটে। প্রতিটি ডকুমেন্ট এর জন্যে ভিন্ন ভিন্ন উইন্ডো খোলাটা বেশ বিরক্তিকর একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় প্রায়সময়। ভিন্ন ডকুমেন্টগুলো ভিন্ন ট্যাবে ওপেন করে গুছিয়ে লেখার কাজ সেরে ফেলা যায় ট্যাব সাপোর্ট থাকার সুবাদে।

HTML ও PDF সাপোর্ট

মার্কটেক্সট এর লেখার সকল কাজ মার্কডাউন ফরম্যাটে হয়ে থাকলেও, ডকুমেন্টকে HTML কিংবা PDF রুপান্তর করার সুবিধা থাকছে এতে। ব্লগিং বা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট তৈরির কাজও মার্কটেক্সট থেকেই করা সম্ভব অন্য কোনো অ্যাপ্লিকেশনের কাছে দারস্থ না হয়ে।

KaTeX ও ইমোজি সাপোর্ট

KaTex হলো একটি জাভাস্ক্রিপ্ট লাইব্রেরি, গাণিতিক চিহ্ন রেন্ডার করার কাজ করা হয় এই লাইব্রেরি দিয়ে। KaTex সাপোর্ট থাকায় গাণিতিক এক্সপ্রেশনগুলো লেখার কাজ করা যায় মার্কটেক্সটে। সেইসাথে সাথে ইমোজি ব্যবহারের সুবিধা।

অটোসেভ

নিজ থেকে বার বার পরিবর্তনগুলো সেভ করার প্রয়োজন পড়বে না অটোসেভ অপশনটি চালু করে নেয়া হলে। ভুলবশত কোনো কারণে এপ্লিকেশন ক্লোজ হয়ে গেলে লেখাগুলো মুছে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে এই অপশনটি চালু করে নেয়াই ভালো। কত সময় পর পর নিজ থেকে ডকুমেন্ট এ করা পরিবর্তনগুলো সেভ হবে সেটিও নির্ধারণ করে দেয়া সম্ভব।

একাধিক মার্কডাউন সিনটেক্স সাপোর্ট

মার্কডাউন এর বেশকিছু সংস্করণ রয়েছে, বিভিন্ন পরিবর্তন করে হালনাগাদ করার কারণে এই সংস্করণগুলো মূল মার্কডাউন সিনটেক্স থেকে সামান্য ভিন্ন হয়ে থাকে। বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি মার্কডাউন সিনটেক্স যেমন – CommonMark, Github Flavoured Markdown, Pandoc Markdown মার্কটেক্সটে সাপোর্ট করে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)
বানান যাচাইকরণ

বানান যাচাইকরণ বা স্পেলচেক এর সুবিধা রয়েছে এখানে। ডিফল্ট ডিকশনারির বাইরে Hunspell ডিকশনারি যুক্ত করার অপশন রয়েছে। স্পেলচেকার এখনো পরীক্ষামূলক অপশন হিসেবে রয়েছে, তাই ব্যবহার করার সময় ত্রুটির সম্মুখীন হতে পারেন।

এডিটর কাস্টোমাইজেশন

এডিটর এর থিম পরিবর্তন করা ছাড়াও ফন্ট, ফন্টের সাইজ ও আনুসাঙ্গিক বিষয়বস্তু পরিবর্তন করা সম্ভব।

ইমেজ আপলোডার

লোকাল ইমেজ ফাইল বা ক্লিপবোর্ড থেকে ছবি সংযুক্ত করার সুবিধা ছাড়াও ক্লাউডে ছবি সংরক্ষণের অপশন রয়েছে। ছবি ক্লাউডে সংরক্ষণ করার জন্যে মার্কটেক্সটে দুই ধরণের পদ্ধতি রয়েছে। একটি হলো গিটহাব রেপোতে ছবি সংরক্ষণ ও অন্যটি হলো থার্ড পার্টি ইমেজ শেয়ারিং সাইটে সংরক্ষণ। গিটহাবে ছবি সংরক্ষণ করাটাই সবথেকে উত্তম উপায়, তবে এটি কনফিগার করার প্রক্রিয়াটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে জটিল বলে মনে হবে।

টেবিল, চার্ট, ডায়াগ্রাম

মার্কটেক্সটে বেশকিছু ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়েছে টেবিল, ফ্লো চার্ট, ভেগা চার্ট ডায়াগ্রাম সংযুক্ত করার জন্যে। এগুলো সংযুক্ত করার জন্যে প্রথমে @ লিখতে হবে প্যারাগ্রাফের শুরুতে টেবিল, চার্ট-সহ আরো বেশ কিছু ব্লক যুক্ত করার অপশন দেখাবে এসময়। ওয়ার্ডপ্রেস এর গুটেনবার্গ ব্লক এডিটর এর সাথে এই অপশনটির সাদৃশ্যতা রয়েছে।

মার্কটেক্সটের অসুবিধাগুলো

  • কদাচিৎ আপডেট পাওয়া যায়। সর্বশেষ রিলিজটি এসেছিলো গত বছরের ডিসেম্বর মাসে।
  • ডেস্কটপ প্লাটফর্মগুলোর জন্যে এটির ক্লায়েন্ট থাকলেও এন্ড্রয়েড ও আইওএস ক্লায়েন্ট নেই।
  • ক্লাউড সিংক্রোনাইজেশন এর সুবিধা নেই।
  • ইলেক্ট্রন অ্যাপ হওয়ায় তুলনামূলক ভারী।
  • ছোটখাটো কিছু বাগ রয়েছে যা সংশোধণ করা জরুরি।

মতামত

মার্কটেক্সট সব মিলিয়ে বেশ চমৎকার টেক্সট এডিটর। শুধুমাত্র মার্কডাউন টেক্সট এডিটর হিসেবেই না, সাধারণ টেক্সট এডিটিং ও আরামসে করা সম্ভব এটি দিয়ে। জার্নাল লেখা, প্রুফ লেখা, ব্লগিং, অফিসিয়াল ডকুমেন্ট তৈরির মতন কাজগুলো করে ফেলা সম্ভব এক এডিটর দিয়েই। মার্কটেক্সট এর কিছু দিক থেকে ঘাটতিও রয়েছে, তবে পরবর্তি আপডেটগুলোতে সেগুলো পূরণ হওয়ার আশা আমরা করতেই পারি।

ইনস্টলেশন

Ubuntu ও Ubuntu-ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশনের জন্যে

wget https://github.com/marktext/marktext/releases/download/v0.16.3/marktext-amd64.deb
sudo dpkg -i marktext-amd64.deb

Arch ও Arch-ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশনের জন্যে

yay -S marktext-bin

অথবা,

yay -S marktext

যেকোনো লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনে ইন্সটল করার জন্যে অ্যাপইমেজ ফাইলটি রান করুন

wget https://github.com/marktext/marktext/releases/download/v0.16.3/marktext-x86_64.AppImage

chmod +x marktext-x86_64.AppImage

./marktext-x86_64.AppImage

MacOS, Windows ও অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের জন্যে এক্সিকিউটিবল ফাইলটি ডাউনলোড করতে মার্কটেক্সট এর রিলিজ পেইজটি ভিজিট করুন।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.