এক পরামর্শপত্রে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা জিসিএইচকিউ এর অংশ ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার বলেছে, নিজের শিকার নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি বিভিন্ন জাল ইমেল ঠিকানা ও সামাজিক মাধ্যম প্রোফাইল ব্যবহার করে তার আশপাশের লোকজনের ছদ্মবেশ ধারণ করে রাশিয়া ভিত্তিক এক হ্যাকার দল। যুক্তরাজ্যের দাবি, দেশটির সরকারী, রাজনৈতিক, শিক্ষা বিষয়ক, প্রতিরক্ষা, সাংবাদিকতা ও সামাজিক খাতের বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছে সাইবার অপরাধীদের দল।
উক্ত দলটির নাম ‘কোল্ড রিভার’। বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে গেল বৃহস্পতিবার। এনসিএসসির দাবি সম্পর্কে মতামত জানতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স লন্ডন ও ওয়াশিংটনে রাশিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে কেউ সাড়া দেয়নি। তবে, পরামর্শপত্রে এই ডিজিটাল আক্রমণের পেছনে সরাসরি রাশিয়ার সরকারকে দায়ীও করা হয়নি। উক্ত পরামর্শপত্রে উল্লেখ রয়েছে যে, নিজের ও শিকারের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির উদ্দেশ্যে আক্রমণকারী প্রায়ই প্রোফাইলে কিছু সাদৃশ্য রাখে।
রয়টার্সকে পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন কর্মকর্তা ও সাইবার নিরাপত্তা গবেষক বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের পর থেকেই কিইভের মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে হ্যাকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে কোল্ড রিভার। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, বৈশ্বিক হ্যাকিং কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেয় রাশিয়া। আর বিভিন্ন বিদেশী সরকার ও শিল্পের ওপর নিজস্ব দাপট বজায় রাখতে তারা সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির সহায়তা নেয়। এই হ্যাকিং কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ বরাবরই নাকচ করে আসছে মস্কো।
পরামর্শপত্র অনুসারে, শিকার ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পর তাকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক লিঙ্কে ক্লিক করতে প্রলুব্ধ করে কোল্ড রিভারের হ্যাকাররা। এই জালে পা দিলে কৌশলে তার সকল লগইন তথ্য চলে যায় হ্যাকার দল নিয়ন্ত্রিত এক ওয়েবসাইটে। এইসব হাতিয়ে নেওয়া তথ্যের মাধ্যমে হ্যাকাররা শিকার ব্যক্তির ইমেইল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে, ভুক্তভোগীর ইনবক্স থেকে তারা বিভিন্ন ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য চুরি করে। এনসিএসসির তথ্য অনুযায়ী, একই ধরনের ফিশিং কৌশল ব্যবহার করে তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে চার্মিং কিটেন নামে পরিচিত ইরানভিত্তিক এক হ্যাকার দল।
জাতিসংঘের নিউ ইয়র্ক দপ্তরে ইরানের কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই দল সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না দেশটির সরকারের। কোল্ড রিভার নামের হ্যাকার দলটি “ক্যালিস্টো ও সিবোর্গিয়াম” নামেও পরিচিত। রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি পারমাণবিক গবেষণাগার ও মে মাসে সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিচার্ড ডিয়ারলাভের গোপন ইমেইল বার্তা ফাঁস করে দেয় হ্যাকার দলটি। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পারমানবিক ল্যাবের ঘটনার সমালোচনা করে একে রাশিয়া বিরোধী প্রচারণা কার্যক্রম হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।