সম্প্রতি জার্মানিতে মেসেজিং সেবা টেলিগ্রামের ৬৪টি চ্যানেল ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে যে চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জার্মানির ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিস টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জার্মানি কোভিড টিকাবিরোধী ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের অবাধ মিথ্যাচারের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য টেলিগ্রামকে দোষারোপ করছে। জার্মানি দাবি করছে যে দেশটিতে প্লাটফর্মটি কোভিড মহামারী নিয়ে মিথ্যাচার ও ভুয়া খবর প্রচারের শীর্ষ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিভিন্ন সময়ে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে ওই ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা, এমন বেশি কয়েকটি ঘটনা সহিংসতাও গড়িয়েছে বলে জানা গেছে। জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত এক বক্তব্যে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন যে জার্মানিতে টেলিগ্রাম নিষিদ্ধ করা হতে পারে এবং দেশটির সরকার মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটিকে নীতিমালার অধীনে আনতে ইউরোপিয়ার ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। রয়টার্সর প্রতিবেদন বলছে, ব্লক হয়ে যাওয়া চ্যানেলগুলোর মধ্যে সেলিব্রেটি শেফ আটিলা হিলডাম্যান-এর টেলিগ্রাম চ্যানেল ও রয়েছে।
তিনি টেলিগ্রাম চ্যানেলটি ব্যবহার করে কোভিড টিকা প্রসঙ্গে ষড়যন্ত্র তত্বের প্রচার করছিলেন বলে গুজব শোনা গেছে। উক্ত শেফ এর মেসেজিং সেবাটিতে প্রায় এক লাখের বেশি ফলোয়ার ছিল। জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেই টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছিল বলে জানিয়েছে। তবে, রয়টার্স ৬৪টি চ্যানেল ব্লক হওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে টেলিগ্রাম তাদের নিয়ে অভিযোগকে ভুল বলে দাবি করে। গত বছর ভ্যাক্সিন বিরোধী প্রচারনার অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে।
যার ফলে টেলিগ্রাম অ্যাপটির উপর অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ভ্যাকসিন বিরোধীর ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা ভ্যাকসিন বিরোধী নানা কন্টেন্ট আদান-প্রদান এবং জনসমক্ষে প্রতিবাদ সংগঠনের কাজে অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। এর ফলে জার্মানির এক রাজনীতিবিদ উগ্রপন্থী কন্টেন্ট ট্র্যাক করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা না করলে মেসেজিং অ্যাপ ‘টেলিগ্রাম’ অ্যাপল ও গুগলের অ্যাপস্টোর থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষ বলছে ‘সরকারি সেন্সরশিপের’ সামনে তারা মাথা নত করতে চান না।
ফেসবুকের মতো অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন দেশের সরকারের চাপের মুখে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মোকাবেলায় প্রতিবাদ গড়ে তোলায় টেলিগ্রামের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অধিকারকর্মী আর প্রতিবাদকারীদের অ্যাপটির অন্যরকম জনপ্রিয়তা রয়েছে। লোয়ার স্যাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিয়া বলছেন যে টেলিগ্রামের গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোতে যা হচ্ছে তা অ্যাপল ও গুগলের নীতিমালা লঙ্ঘন করে, তারাই নিজেদের স্টোরে অ্যাপটি রেখেছে। তিনি আরো বলেন যে জরুরীভিত্তিতে তাদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং টেলিগ্রাম বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে তাদের রাজি করাবেন।
নভেম্বর মাসেই স্যাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসস্থানের সামনে একদল প্রতিবাদকারী মশাল জ্বালিয়ে হাজির হয়েছিলেন। রয়টার্স বলছে যে উক্ত ঘটনাকে স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর প্রতি সহিংসতার হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। টেলিগ্রাম বাজারজাত বন্ধ করার কথা উঠলেও এই ব্যাপারে টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষ রয়টার্সকে তাৎক্ষণিক কোনো কিছু জানায়নি। প্ল্যাটফর্মে উগ্রপন্থী কন্টেন্টের উপস্থিতি থাকলে সে বিষয়ে দ্রুত পদেক্ষেপ নিতে বাধ্য প্রতিষ্ঠানগুলো। জার্মানিতে যেকোন সামাজিক মাধ্যমের বেলায় বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর বেশ কয়েকটি নীতিমালা রয়েছে।
টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষ মূল ধারার সামাজিক মাধ্যমের বিকল্প হিসেবে নিজস্ব অ্যাপ বাজারজাত করে আসছে। বেলারুশ এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলোতে কর্তৃত্ববাদী সরকার বিরোধী অধিকারকর্মীদের কাছেও অ্যাপটির জনপ্রিয়তা আছে। অ্যাপটির নিজস্ব সাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুরুটা সেইন্ট পিটার্সবার্গে হলেও প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দুবাই থেকে পরিচালিত হচ্ছে। জার্মানীর বিচার মন্ত্রণালয় থেকে উগ্রপন্থী কন্টেন্টের লেখকদের চিহ্নিত করতে একাধিকবার সাহায্যের আবেদন পেলেও টেলিগ্রাম টিম তাতে সারা দেয়নি। এ ব্যাপারে টেলিগ্রাম টিম জার্মান সরকারকে কোন সহযোগিতা করছেনা বলে দাবি করা হচ্ছে।
সত্যি বলতে টেলিগ্রাম একটি ওপেন সোর্স এবং ওপেন প্লাটফর্ম। যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিশাল সাইজের ডেটা সহজেই আদান প্রদান করা সহজ। এছাড়াও টেলিগ্রামে রয়েছে যথাযথ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার সুবিধা। অ্যাপটিতে ফুল এইচডি অডিও কলসহ ভিডিও কলের সুবিধা ও রয়েছে। ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম হবার কারনে নানা রকম অসদুপায়ে অনৈতিক কাজকর্ম করে যাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবহারকারীরা। অ্যাপটির সুবিধাকে তারা নানানভাবে দূর্ব্যবহার করে এর জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করতে চাচ্ছে। যার ফলে ফেসবুকের মত একটি জঘন্য এবং অসৎ প্লাটফর্মের সাথে তুলনা করা হচ্ছে অ্যাপটিকে।