Reading Time: 3 minutes

আমরা যখন কোন পন্য কিনি অর্থের বিনিময়ে, আমরা আশা করি যে সেই পন্যটির আমরা সম্পূর্ন মালিকানা পাবো। এটিই তো হওয়ার কথা, আমরা কোন জিনিস কিনে সেটার মালিক আমরা হব। কিন্তু বর্তমান যুগে মালিকানার ধারনা অনেকটা ফিঁকে হয়ে গেছে। আপনি মালিক হিসেবে আপনার কেনা সকল পন্যের নিয়ন্ত্রন আপনার হাতে থাকার কথা। ব্যবহার, এর সফটওয়্যার এর খুঁটিনাটি দেখা ও নিয়ন্ত্রন করা, এবং নষ্ট হলে এটি নিজের ইচ্ছামোতাবেক ঠিক করার অধীকার আপনার থাকার কথা। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে এমনটি দেখা যাচ্ছে না।

বলছি রাইট টু রিপেয়ার অর্থাৎ যন্ত্রাংশ মেরামত করার অধীকার এর কথা। আজ থেকে অর্ধ শতক আগেও এমন একটি শব্দ নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়নি। এক সময় সকল যন্ত্রের সাথে একেবারে নিখুতভাবে লেখা ম্যানুয়াল বা নির্দেশনার বই, এবং সার্কিট ডায়াগ্রাম পাওয়া যেত। যার ফলে আমরা সহজেই কোন একটি যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেলে সেটা ঠিক করতে পারতাম। মানুষজন এক সময় সফটওয়্যারের পাশাপাশি নির্দিধায় হার্ডওয়্যারেও দক্ষ হতে পারতো এই যন্ত্রাংশ মেরামতের অধীকার এর মাধ্যমে।

বর্তমানে যা হচ্ছে তা খুবই দু:খজনক। বিগত সময়ে “অ্যাপল” তাদের নতুন চিপ উদ্বোধনের সময় বলেছিলো, যে তারা ই-ওয়েস্ট সম্বন্ধে সচেতন হতে আইফোনের বাক্সে চার্জার দেয়া হতে বিরত থাকবে। কিন্তু তারাই আবার ব্যবহারকারীদের ইচ্ছামতো তাদের পছন্দের রিপেয়ার শপ হতে ফোন ঠিক করাতে বাঁধা প্রদান করে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ আইফোন নষ্ট হয়ে ভুমি দুষন করে এবং ই-ওয়েস্টে পরিনত হয়। অ্যাপলের এই দ্বিমুখী মনোভাব অনেকেরই পছন্দ হয়নি।

অ্যাপলের ছলচাতুরী

Right to Repair – Art and Adventure for Ape Conservation

অ্যাপল তাদের যন্ত্রাংশ এমনভাবে বানায়, যাতে একজন ব্যবহারকারী অ্যাপল ব্যাতীত অন্য কারো কাছ থেকে মেরামত না করতে পারে। তাদের ডিস্প্লে এমনভাবে তৈরী যা পরিবর্তন করলেও আপনার আইফোন সচল হবে না। এর সঠিক সমাধান শুধুমাত্র পাওয়া যাবে অ্যাপলের নিজস্ব জিনিয়াস বারে। কিন্তু জিনিয়াস বার অ্যাপলের পয়সা উপার্জনের আরেকটি চাল। মানুষ যদিও ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে সেখানে যায়, কিন্তু জিনিয়াস বারের জিনিয়াসরা এমনকিছু সমস্যার কথা বলে যে, পরে দেখা যায় ৫০ টাকার একটি সমস্যা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়ে দাঁড়ায়। অ্যাপল এইভাবে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে নেয়।

অপরদিকে আপনি যদি অ্যাপলের বাইরে হতে কোন জিনিস মেরামত করান, তবে আপনার অনেক টাকা বেঁচে যাবে। অ্যাপল জিনিয়াস বারে যদি বলা হয় এই ফোন আর ঠিক হবে না, তবে তৃতীয় পক্ষ কোন মেরামত শপ আপনার ফোন ঠিকই মেরামত করে দিবে, তাও আবার কম টাকায়। কিন্তু অ্যাপলের সেটা আর সহ্য হয় না। তারা বারবার চাইছে এই তৃতীয় পক্ষ মেরামতকারীদের বাঁধাপ্রদান করতে। হার্ডওয়্যার লকডাউন, পার্টস এর মধ্যে ফার্মওয়্যার লাগান‌ো সহ বিভীন্ন ছলচাতুরী করে তারা বারবার মানুষদের প্রকৃতভাবে মালিক হতে বাঁধা প্রদান করছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

শুধুই এপল নয়

এইরকম দুষ্টকর্ম শুধু অ্যাপল নয়, অন্যান্য কোম্পানীও করে থাকে। জন ডিয়ার নামের কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান তাদের বানানো যন্ত্র নিজেরা মেরামত করা থেকে বিরত রাখতে সফটওয়্যার লক-ইন করে রাখে। কৃষকেরা এর প্রতিবাদ জানান, এবং কিছু কৃষক সেসব যন্ত্র হ্যাক করে নিজেরা মেরামত করে নেন। এই উপায় ছাড়া কৃষকরা তাদের যন্ত্র ঠিক করতে পারেন না, এবং তার ফলে জন ডিয়ার তাদের রিপেয়ার ফ্যাসিলিটি দিয়ে দুষ্ট উপায়ে অনেক অর্থ জরিমানা ঘটান কৃষকদের।

বিরুদ্ধাচারণ

বিগত সময়ে এটি নিয়ে আইনগত অনেক আালোচনা হয়। এবং এখানে অনেক রাষ্ট্রীয় আইনজীবিগন, সাধারন মানুষ এবং অনেক রাজনীতিবিদগন সমর্থন প্রকাশ করেন। দুদিন আগেই কংগ্রেসম্যান “জো মোর‍্যেলে” কংগ্রেসে ফেয়ার রিপেয়ার এক্ট বিল উত্থাপন করেন। এই বিলটি সম্পূর্ন আমেরিকায় পাশ করা হবে বলে অনেকে আশা রাখছেন। তিনি বলেন:

“সাধারণ জ্ঞানের এই আইনটি মোবাইল ফোন থেকে ল্যাপটপ থেকে ফার্মের সরঞ্জামগুলিতে আইটেমগুলির জন্য প্রযুক্তি মেরামতগুলিকে আরও অ্যাক্সেসযোগ্য এবং সাশ্রয়ী করে তুলতে সহায়তা করবে, অবশেষে ব্যক্তিদের তাদের স্বায়ত্তশাসন দেবে”

পরিশেষ

রাইট টু রিপেয়ার আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ন। এর মাধ্যমে আমরা ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক উপায় পাবো এবং মানুষজন তাদের যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিন ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এর ফলে কমবে দুষন, অতিরিক্ত ব্যয় এবং বড় বড় কোম্পানীদের দৌড়াত্ব। রাইট টু রিপেয়ার যাতে সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটিং আমি প্রার্থনা করি।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.