Reading Time: 3 minutes

HalloApp একটি নতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যা হোয়াটসঅ্যাপ এর সাবেক দুইজন কর্মকর্তা দ্বারা নির্মিত। এটি একটি ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যা ফেসবুক অথবা টুইটারের চাইতে হোয়াটসঅ্যাপের সাথে বেশি মেলে। কারন এটিতে শুধুমাত্র নিজের কনট্যাক্ট এ থাকা ঘনিষ্ট মানুষদের সাথেই হালনাগাদ ভাগ এবং চ্যাট করা সম্ভব। HalloApp এর দাবী এর দ্বারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি সহ নানা বিরক্তিকর ঝামেলা দূরে থাকা যাবে। তাদের দাবী এতে গোপনীয়তা রক্ষা হবে এবং ইতোমধ্যে বেশকিছু অনলাইন ম্যাগাজিন যেমনঃ দ্যা ভার্জ এটিকে প্রাইভেসি ফ্রেন্ডলি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই?

HalloApp এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ

হোয়াটসঅ্যাপের সাবেক দুই কর্মকর্তা নিরাজ অরোরামাইকেল ডনোহিউ একটি পডকাস্টে তাদের নতুন এই প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলেন। এই এ্যাপটির সাথে হোয়াটসঅ্যাপের বেশ মিল রয়েছে কারন হোয়াটসঅ্যাপের মত এটিও শুধু আপনার কন্টাক্টের সাথে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করে। অপরদিকে যেখানে ফেসবুক বা টুইটার আপনার কন্টাক্টের বাইরে অন্যদের অনুসরন করতে দেয়। এটির ইন্টারফেস খুবই সরল এবং এতে কোন সর্টিং এলগরিদম নেই। অর্থাৎ, এটি আপনাকে বাছাই করে পোস্ট দেখাবেনা যেমনটা ফেসবুক করে। বর্তমানে HalloApp কোম্পানীর ১২ জন কর্মকর্তা এ্যাপটি পরিচালনা করছে। স্বাভাবিকভাবেই এটিতে কোন মডারেশন সিস্টেম নেই। কিন্তু স্প্যাম কিভাবে এই অ্যাপ নিয়ন্ত্রন করে তা দেখার বিষয়।

ভালো দিকসমূহ

HalloApp সাইন আপ করার সময় বেশি তথ্য নেয় না। ফেবুকের মত ওতো লম্বা ফর্ম পূরণ করে এতে সাইন আপ করতে হয়না। যেহেতু এই অ্যাপ শুধু কন্টাক্ট এর উপর ভিত্তি করে কন্টেন্ট সাজায় সেহেতু এতে আসলেই পরিচিত স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকা যায়। দাবী করা হয়, এতে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কমে। এর ইন্টারফেস বেশ সরল এবং পরিচ্ছন্ন তাই এটি দেখতে বেশ সুন্দর। এর হোমস্ক্রিন চার বিভাগে বিভক্ত যেখানে বন্ধু, গ্রুপচ্যাট, সাধারন চ্যাট এবং সেটিংস রয়েছে। এর সেটিংস অত্যন্ত সোজা যাতে মাত্র কয়েকটি অপশন রয়েছে। সেটিংস হতে চাইলে সরাসরি একাউন্ট ডিলিট ও করা যায়। বন্ধু ট্যাবে হালনাগাদ ভাগ করা যায় যেমনঃ ছবি ও বার্তা এবং একই ট্যাবে আপনার কন্টাক্ট হতে ভাগ করা পোস্টসমূহ কমেন্ট এবং ভাগ করা যায়। তাছাড়া এতে আর তেমন কিছু নেই।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

খারাপ দিকসমূহ

এখন আসি এর অসুবিধাসমূহে। সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হচ্ছে, এই অ্যাপের অন্যতম বড় দাবী যা হচ্ছে এর প্রাইভেসি। যদিও এতে এনক্রিপশন এবং সহজ প্রাইভেসি কন্ট্রোল রয়েছে তবুও এটি মোটেও প্রাইভেসি ফ্রেন্ডলি নয় অন্তত এর প্রাইভেসি পলিসি অনুযায়ী। প্রাইভেসি পলিসি অনুযায়ী HalloApp আপনার তথ্য পড়তে পারে এবং জমা রাখতে পারে। এমনকি তা চাইলে আইন এবং রাষ্ট্রের সরকারের কাছে সেই তথ্য ভাগ ও করতে পারে। আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ভবিষ্যতে যদি কোন কোম্পানি অ্যাপটি কিনে নেয় তবে জমা থাকা তথ্যগুলি তাদের কাছে চলে যাবে। যদিও অ্যাপটি তত্তা তথ্য সাইন আপের সময়ে চায় না কিন্তু এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস সংগ্রহ করে যা হচ্ছে আপনার মোবাইল নাম্বার। এর মাধ্যমে যে কাউকে শনাক্ত এবং টার্গেট করা অত্যন্ত সোজা। তাছাড়া এটি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আপনার তথ্য সংগ্রহ করে। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এটি স্পষ্টভাবে তৃতীয় পক্ষের সাথে তথ্য ভাগ করে। এতে গুগল এ্যানালিটিক্স ব্যবহার করা হয়েছে যা আপনার অ্যাপের বাইরেও অন্যান্য অ্যাপে এবং ওয়েবসাইটে আপনাকে অনুসরন করে। অর্থাৎ যেইভাবে অ্যাপটি দাবী করছে সেভাবে তারা গোপনীয়তা মানছে না।

এছাড়াও অ্যাপটিতে তুলনামূলকভাবে অনেক কম ফিচার রয়েছে। অনেকের কাছে এটি একটি সাধারন চ্যাট অ্যাপ ছাড়া আর কিছু মনে হবে না। এতে অডিও বা ভিডিও কলের সুযোগ নেই। যেখানে টেলিগ্রামের মত উন্নত এবং বেশি ফিচারযুক্ত অ্যাপ রয়ছে সেখানে HalloApp কিভাবে টিকবে সেটিই দেখার বিষয়। শুধুমাত্র আসক্তি নিরসন এর ব্যানারে এই অ্যাপ প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। বিগত সময়ে টেলিগ্রামেও পাবলিক চ্যানেলে কমেন্ট করার সুবিধা যুক্ত হয়েছে যা অন্তত HalloApp এর চাইতে কয়েকগুন সুবিধাসম্পন্ন। টেলিগ্রাম একদিকে চ্যাট-নির্ভর সোশ্যাল প্লাটকর্ম চেষ্টা করছে যাতে তারা সফল ও হচ্ছে। অপরদিকে HalloApp সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর চ্যাট অ্যাপ হওয়ার চেষ্টা করছে যা বেশ একটা আদর্শ উপায় নয়।

উপসংহার

HalloApp একটি নতুন অ্যাপ্লিকেশন যার নির্মাতারা এইরকম চ্যাটনির্ভর অ্যাপ তৈরীতে দক্ষ। যেহেতু তারা হোয়াটসঅ্যাপ এর সাবেক কর্মকর্তা। নতুন এই অ্যাপটির মূল উদ্দেশ্য আসক্তি দূর করা এবং কাছের আত্বীয়দের সাথে হালনাগাদ ভাগাভাগি করা। যদিও ফেসবুক বা টুইটারকে সরাসরি প্রতিদ্বন্দি ভাবছে না HalloApp, তবুও চ্যাট দুনিয়ায় প্রতিযোগীর তালিকা বেশ বড়। এটি অত্যন্ত সরল এবং বেশ শক্তপোক্ত একটি অ্যাপ্লিকেশন যার ফিচার-তালিকা বেশী একটা বড় নয়। অনেকে একে স্বাগত জানালেও অনেকে একে বেশ একটা নতুন কিছু মনে করছে না। এর আগেও Path অ্যাপ একই ধারনা নিয়ে কাজ করে ব্যর্থ হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা এই অ্যাপের দাবি, যেখানে তাদের প্রাইভেসি পলিসির সাথে তাদের গোপনীয়তা নিয়ে দাবির কোন মিল নেই। আপাতত প্রাইভেসী খোঁজকারীরা এই অ্যাপকে সঠিক আশ্রয়স্থল মনে করছে না।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.