Reading Time: 5 minutes

হাইকু ওএস বেটা ৪ এই মাসেই প্রকাশিত হয়েছে। হাইকু ওএস একটি ২২ বছর পুরাতন অপারেটিং যার এখনও কোন স্টেবল ভার্সন বের হয়নি। তবুও এই অপারেটিং সিস্টেম এর একটি বিশেষত্ব আছে। এটি একদা সময়ের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম beOS এর একটি রিবিল্ট সংস্করন। beOS ৫ এর ওপর ভিত্তি করে তৈরী করা হাইকুওএস এখনো বেটা পর্যায়ে আছে, অফুরন্ত উইনরার ট্রায়াল এর মত। 

beOS এবং হাইকু ওএস এর সম্পর্ক

beOS একটুর জন্যে এপল ম্যাকিন্টোশ এর ওএস হতে চলেছিল ১৯৯৬ সালের দিকে। কিন্তু কোম্পানীর দরে নাখোশ এপল, স্টিভ জবস এর NeXT কিনে নেয় এবং তখনকার গ্রাফিকেল ম্যাকওএস এর সূচনা ঘটায়। beOS তখন ক্লাসিক ম্যাকওএস এর বিকল্প হিসেবে বিভীন্ন কম্পিউটার এ আসতে শুরু করে। কিন্তু এককালে ঋনের বোঝা বাড়ায় Be Inc (beOS এর মালিক প্রতিষ্ঠান) ধীরে ধীরে এর ডেভেলপমেন্ট এ ভাটা দিতে থাকে, ও মনযোগ অন্যত্র সরাতে থাকে। 

২০০২ এর পরে beOS এর অনেক ক্লোন তৈরী হয়, বেশিরভাগ শুধুমাত্র সংরক্ষনের উদ্যোগ হিসেবে। কয়েকটি ক্লোনের মধ্যে শুধুমাত্র একটি বাদে প্রায় সবগুলি ক্লোনই লিনাক্স কার্নেল এর ওপর চলত। হাইকু ওএস ই একমাত্র beOS পোর্ট যা সম্পূর্ন beOS কম্পেটিবল এবং এটি লিনাক্স নির্ভর কার্নেল এর ওপর চলে না। হাইকু এর প্রথম বেটা সংস্করন আসে ২০১৮ তে, বর্তমানে এটি চতুর্থ বেটা রিলিজ পেয়েছে। 

হাইকুওএস এর বেশিরভাগ জীবন আলফা পর্যায়ে ছিলো, তারপর বেটা। এর এখনো কোন স্টেবল রিলিজ বের হয়নি। কেন বের হয়নি সেটা ধারনা করা সহজ। এটি কোন ধরনের বড় কমার্শিয়াল প্রজেক্ট নয়, এবং এটির তেমন কোন মেইনস্ট্রিম ব্যবহার ও নেই। তাই বলে এটি অস্বীকার করা যাবে না যে এটি একটি অসাধারন সংরক্ষনযোগ্য অপারেটিং সিস্টেম যেটি হারিয়ে যেতে দেয়া উচিৎ না। 

হাইকুওএস বেটা ৪

হাইকু ওএস এর চার নম্বর বেটা রিলিজ এ বেশ কিছু স্বস্তিদায়ক আপডেট যোগ করা হয়েছে, যেমন ইউএসবি ৩ সাপোর্ট এবং আরো উন্নত ডিফল্ট ড্রাইভার। এখন থেকে আপনার ডিফল্ট নেটওয়ার্ক কার্ড এবং ওয়াফাই চিপ শুরু থেকেই ডিটেক্ট করবে এবং রয়েছে অডিও এবং ব্লুটুথ এর উন্নতি। হাইকু ওএস এর ৬৪ বিট ভার্সন এ রয়েছে আপ-টু-ডেট জিসিসি, কিন্তু beOS R5 এর কম্পেটিবিলিটি শুধুমাত্র ৩২ বিট ভার্সনেই পাওয়া যাবে। 

ওয়াইফাই শুধুমাত্র বোর্ড হতে নয়, ইউএসবি ওয়াইফাই এবং টেদারিং করা অ্যান্ড্রয়েড হতে ইন্টারনেট কানেকশন এর সক্ষমতাও এই রিলিজ এ যোগ করা হয়েছে। ওয়াইফাই কানেক্টিভিটির জন্যে হাইকু ওপেনবিএসডি হতে ড্রাইভার সংগ্রহ করেছে। ইন্টারনেট এর ব্যাপারে চলে আসে ওয়েব ব্রাউজিং এর কথা, এবং সত্যি বলতে আপ-টু-ডেট ওয়েবকিট দেয়া সত্যেও এই ভার্সনেও ইউটিউব ভিডিও প্লেব্যাক পাবেন না। তবুও দু:খের কোন কারন নেই, কারন এতে আপনি চাইলে পূর্ন জিটিকে সমর্থন সহ জিনোম ওয়েব (এপিফেনি) ব্রাউজার ইনস্টল করতে পারবেন। 

ডিসপ্লে উন্নতি

জিটিকের ব্যাপারে বলতে হলে আরো সু:সংবাদ চলে আসে, কারন এই রিলিজ এ অনেক অনেক ডিসপ্লে এবং জি-ইউআই সুবিধা যোগ করা হয়েছে। হাইডিপিআই সমর্থন একটি স্বাগত ফিচার, এবং তার সাথে এই রিলিজে আছে এক্স১১ এবং ওয়েইল্যান্ড কম্পেটিবিলিটি লেয়ার। অর্থাৎ, সম্পূর্নরুপে এক্স সার্ভার এবং ওয়েইল্যান্ড সমর্থনের পরিবর্তে তারা এই দুটি লেয়ারের সিস্টেম কলগুলি ট্রান্সলেট করে হাইকু এপিআই কল এ পরিবর্তন করে। এর মাধ্যমে মাত্র একটি ছোট লাইব্রেরির মাধ্যমেই জিটিকে এপগুলি রান করা যায়। 

স্টোরেজ সুবিধা সমূহ

হাইকু ওএস বেটা ৪ এ এনভিএমই ড্রাইভার এর উন্নতি করা হয়েছে, এবং এই ভার্সনে আপনার এনভিএমই ড্রাইভ “TRIM” সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া এবারে যোগ করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ এনটিএফএস সুবিধা, যার ফলে আপনার এটাচকৃত উইন্ডোজ ড্রাইভ হতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফাইল সরানো এবং রাখতে পারবেন, তাছাড়া ডিস্ক ব্যাকাপ এবং দ্রুত এক্সেস ও করতে পারবেন। আরেকটি জিনিস, হাইকুর ফাইল ম্যানেজারে ফাইল প্রিভিউ থাম্বনেল ফিচার যোগ করা হয়েছে, যেটি খুবই স্বাগত একটি ফিচার। 

হাইকুওএস কি নিত্যদিনের জন্যে তৈরী?

হাইকুওএস এখনো ডেইলি ড্রাইভ এর জন্যে তৈরী নয় সেটা নিশ্চিন্তে বলতে পারি। কিন্তু এই অপারেটিং সিস্টেমের অন্যরকমের একটা মোহ আছে। হাইকুর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে এর গতি। আপনি যেই ধরনের হার্ডওয়্যারই চালান না কেন, হোক না সে পূরাতন ৩২ বিট আমলের! হাইকু অসাধারন গতিতে চলে। হাইকু একটি স্বাধীন অপারেটিং সিস্টেম, তাই এর ভিত্তি থেকে শুরু করে সবখানেই অনেকটা ক্লাসিক ছোয়া পাওয়া যায়। হাইকু ব্যবহারের আনন্দ অনেকটা আমাদের প্রথমকালের ডস এবং এপল মেশিনের অনুভুতির সাথে তূলনা দেয়া যায়। 

বিজ্ঞাপন (কেন?)

তবে নস্টালজিয়া দুরে রাখলে, আপনি এতে সত্যি করেই অনেক মডার্ন ফিচার পাচ্ছেন। যেমন ওয়াফাই এবং ইউএসবি৩ সাপোর্ট। সাথে এক্স১১ এবং ওয়েইল্যান্ড থাকায় অনেক পোর্ট করা লিনাক্স এপ চালাতে পারছেন। অর্থাৎ ভবিষ্যতে আমরা একটি পূর্নাঙ্গ সিস্টেম পেতেও পারি। কিন্তু বর্তমানে সত্যিই হাইকু ডেইলি ব্যবহারের উপযোগী না। সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি আমি দেখেছি এই কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারের পর, অনেকগুলিই সমাধান করা যাবে কিন্তু কয়েকটি বাদে। 

ব্রাউজার সমস্যা

প্রথমেই আসি ব্রাউজারে। হাইকুতে কোন ধরনের মডার্ন ব্রাউজার নাই। অর্থাৎ ডকুমেন্ট ক্লাউড, ওয়েব অ্যাপস এতে ব্যবহার করা যায় না বললেই চলে। সাথে ব্রাউজারে কোন মডার্ন কোডেক না থাকায় স্ট্রিমিং অসম্ভব। এতে এইচটিএমএল৫ ভিডিও সাপোর্ট করলেও আমি এখনো কোন ভিডিও প্লেবেক করতে পারিনি। তবে অফলাইন ভিডিও প্লেয়ার মোটামুটি জনপ্রিয় সব কোডেক ডিকোড করতে পারে। সাথে অডিও এর ভালো সাপোর্ট আছে। 

ব্রাউজারের ঝামেলা জিনোম ওয়েব দিয়ে সারা গেলেও হাইকুর নেটিভ না হওয়ায় পূর্ন স্বাদ পাওয়া যায় না। হাইকুর ব্রাউজারে কোন ধরনের মডার্ন ইঞ্জিন দিয়ে হাইকু নেটিভ প্যাকেজ পেলে ভালো হত। তাছাড়া আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, এর ৬৪ বিট ভার্সন পূরাতন মেশিনগুলিতে ভালোভাবে চলে না। আপনাকে সেইক্ষেত্রে ৩২ বিট ভার্সন দিয়ে কাজ চালাতে হবে, যেটি অবশ্য beOS R5 কম্পেটিবল। আরেকটি ব্যপার হচ্ছে ৬৪ বিটে মডার্ন কম্পাইলার আছে এবং এতে কোন beOS ব্যাকওয়ার্ড কম্পেটিবিলিটি নাই। 

অন্যান্য সমস্যা

এর নেটওয়ার্কিং বিভাগে বেশ উন্নতি হওয়ার পরেও বেশকিছু গ্যাপ রয়ে গেছে। আইপিভি৬ সমস্যাসহ অনেক নেটওয়ার্কিং সমস্যা এখনো বিদ্যমান যার ফলে এটি আপনি বিশ্বস্ত সার্ভার বা হোম সার্ভার ওএস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। যদিও এই কাজের জন্যে বিএসডি বা লিনাক্স টাইপের ওএস সবচেয়ে ভালো। কিন্তু কেমন হত যদি আসলেই এইসব কাজ হাইকুর মাধ্যমে করা যেত?

এই ভার্সনে ওয়াইন যোগ করা হলেও এটিতে নেই প্রোটন, নেই ৩২ বিট সাপোর্ট এবং এর গতি লিনাক্স ভ্যারিয়েন্ট এর চাইতে বহুগুনে কম। একটি ব্যাপার ভালো যে এটি এক্স১১ ব্যবহার করে না বরং নেটিভ হাইকু উইন্ডো সিস্টেম ব্যবহার করে। তারপরেও ৩২ বিট না থাকায় এতে পূরাতন ডস এপ্লিকেশন এবং গেমগুলি খেলা যাবে না। 

গেমের ব্যাপারে আসলে আরেকটা জিনিস বলতে হয়, যে এতে রেট্রো ইমুলেশন এর জন্যে আরো টুল প্রয়োজন। হাইকুর গতি অসাধারন, এবং কেমন হত যদি হাইকু রেট্রো গেমিং এর জন্যে একটি ভালো প্লাটফর্ম হতো? সাধারনত লিনাক্স এই ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও হাইকুর জন্যে সম্ভব। হাইকুর কোন রাস্পবেরি পাই ভার্সন থাকলে ভালো হত, কিন্তু আশা করা যায় আমরা একটি পূর্ন আর্ম ভার্সন পাবো দ্রুত।

পরিশেষ

হাইকু একটি অসাধারন অপারেটিং সিস্টেম। ৯০ এর দশকেরও পূর্বে যখন মডার্ন অপারেটিং সিস্টেমগুলির মাত্র বেড়ে ওঠা, সেখানে হাইকুর প্রিডিসেসর beOS একটি ভালো অপশন ছিলো। কিন্তু কালের যাতাকলে হারিয়ে যাওয়া beOS এর স্মৃতি এখনো জীবন্ত রেখেছে হাইকু। ২২ বছর ধরে ডেভেলপমেন্ট চলা এই অপারেটিং সিস্টেমের এখন মাত্র শুরু। নতুন বেটা ৪ রিলিজে আমরা অনেক মডার্ন ফিচার পেয়েছি। কিন্তু তবুও এই ওএস এ সেই ক্লাসিক গতি এবং অনুভুতি রয়ে গেছে। 

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.