Reading Time: 5 minutes

দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহারের একটি মোক্ষম উপাদান হচ্ছে ওয়েব ব্রাউজার। এখন বাজারে পাঁচটি ওয়েব ব্রাউজার খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। এগুলো হলো Firefox, Safari, Chrome, Opera এবং Microsoft edge। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে ব্রাউজার টি ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে Chrome। ডেস্কটপ ব্রাউজার মার্কেটের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে এটি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে Safari ব্রাউজারটি। Firefox এর দখলে আছে ব্রাউজার মার্কেটের প্রায় ৮ শতাংশ জায়গা। অর্থাৎ Firefox বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত ব্রাউজার। পরিসংখ্যান এর দিক থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে বেশিরভাগ মানুষ প্রায় সব রকমের প্লাটফর্মে Chrome ব্রাউজার টি ব্যবহার করছে। কিন্তু প্রাইভেসির দিক থেকে চিন্তা করলে Chrome ব্রাউজারটি এত জনপ্রিয়তার প্রাপ্য নয়। সকলেই জানি যে Chrome ব্রাউজার টি Google দ্বারা পরিচালিত এবং Google এক অন্যরকম অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে যে এটি তার যেকোনো প্রডাক্ট কে প্রফিট মেশিন বানিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আজ আমরা আলোচনা করব কেন অন্যান্য সকল ব্রাউজারের থেকে Firefox ব্রাউজারটি এগিয়ে।

অন্যান্য ব্রাউজার এবং Firefox

বর্তমানে ব্যবহৃত ব্রাউজার গুলোর মধ্যে সবচেয়ে মূল সমস্যা হচ্ছে প্রাইভেসি রক্ষা। আমাদের অজান্তেই ব্রাউজারগুলো আমাদের ডেটার উপর আক্রমণ এবং গোপনীয়তা ক্ষুন্ন করে। Chrome ব্রাউজারটি ব্যতিক্রম নয়। Chrome, Edge, Opera এসকল জনপ্রিয় ব্রাউজার গুলোকে ব্যবহারকারীর অন্ধ বিশ্বাস করলেও তাদের সাথে সত্যিকার অর্থে যে কিরকম প্রতারণা ঘটছে, তা তারা উপলব্ধি করতে পারছে না। তাছাড়া পারফর্মেন্স ইস্যু তো আছেই। বিশেষ করে Chrome ব্রাউজারটি অতিরিক্ত র‍্যাম ব্যবহার করে এরূপ ঘটনা শোনা যায় অনেক। শুধু তাই নয়, অ্যাড ব্লক ব্রাউজারের এক অন্যতম ফিচার কিন্তু Chrome পরিচিত কিছু অ্যাড বাদে অন্যান্য অ্যাড বা ট্র্যাকার গুলো ব্লক করতে পারে না। Edge এর ক্ষেত্রে ব্যপার টা হয় এমন যে, এটি ব্যবহারকারীর ডাটা সংগ্রহ করার পর টা Google কে নয় বরং Microsoft কে প্রেরণ করে। যদিও এর ইন্টারফেস Chrome থেকে বেশ ভালো, কিন্তু পারফর্মেন্স এর দিক দিয়ে দুজনে একই। ব্রাউজার মার্কেটের এরকম অবস্থা দেখে আমি Firefox এ ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছি। এখানে অন্তত ব্যবহারকারীর ডাটা গুলো সুরক্ষিত থাকবে বলে আমি মনে করি।

কেন Firefox?

আমরা সকলেই চাই বিনা বাধায় এবং কোন ভয় ছাড়াই এর জগতে ঘোরাফেরা করতে। ফায়ারফক্স আপনাকে সেই সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। আমরা অবশ্যই চাইবো ব্রাউজার কে আমাদের নিজ ইচ্ছামত ব্যবহার করতে। অবশ্যই আমরা চাইবো না যে ব্রাউজার আমাদের বাধ্য করুক কোনো কিছু করতে। অন্যান্য সব ব্রাউজারে যেখানে এরূপ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, Firefox ব্রাউজারে এসব নেই। এই ব্রাউজার টি ব্যবহার করার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। Firefox এর বিশেষ কিছু ফিচার এবং সুবিধা সমুহ তুলে ধরা হয়েছে আমাদের আজকের আলোচনায়।

নিখুঁত গোপনীয়তা

ফায়ারফক্স ব্রাউজারের ভিতরেই anti-ট্র্যাকার অপশনটি থাকায় ইন্টারনেট ব্রাউজিং হয়েছে আরও নিরাপদ। আপনার প্রশ্ন হতে পারে ট্র্যাকার কি? ট্র্যাকার হলো ওয়েবসাইটের এক ধরনের স্ক্রিপ্ট যা আপনার পছন্দ অপছন্দ কিংবা আপনি সেই ওয়েবসাইট টি কিভাবে ব্যবহার করছে তার একটি ডাটা সংগ্রহ করে রাখে। পরবর্তীতে আপনি সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে আপনার পূর্বের রেকর্ড অনুযায়ী আপনাকে সেই ওয়েবসাইটের কনটেন্ট গুলো দেখানো হয়। অনেকের কাছে বিষয়টি সাহায্যকারী মনে হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি হয়রানি জনক। আপনি কোন ওয়েবসাইটে কি করছেন বা করবেন টা একান্ত আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি অবশ্যই চাইবেন না অন্য কেউ তা জানুক। এক্ষেত্রে Firefox ব্রাউজারে বিল্ট ইন ট্র্যাকার ব্লকার থাকায় টা আপনাকে যেকোনো ওয়েবসাইট ট্র্যাকিং থেকে বিরত রাখবে। কিছু কিছু ব্রাউজারে এ ফিচারটি ব্যবহার করা হলেও তা বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ। আবার এমন কিছু ব্রাউজার রয়েছে যেখানে ট্র্যাকার নামক অপশনটি নেই যেমন: Chrome। কিন্তু Firefox ব্রাউজারটি কোন সীমার মধ্যে নেই অর্থাৎ যেকোন ওয়েবসাইটের ট্র্যাকার বন্ধ করতে পারবে এটি। আপনি নিশ্চিন্তে ব্রাউজ করতে পারবেন আপনার পছন্দের ওয়েবসাইট।

সোশ্যাল মিডিয়া নিরাপত্তায়

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন রকমের তথ্য জমা থাকে এই সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু আপনার এই তথ্যগুলো কি ইন্টারনেটে নিরাপদ? বিষয়টিতে আপনার ব্রাউজার ভূমিকা রাখতে পারবে। উপরেই বলেছিলাম ওয়েবসাইট গুলো ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আপনার তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে আপনার অজান্তেই। এবং আপনার ব্রাউজারে ট্যাকার ব্লকার না থাকলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না এ বিষয়ে। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই Firefox আপনাকে এ বিষয়েও সাহায্য করবে। Firefox এর Anti-Tracker প্রটেকশন আপনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর সাইট গুলোতে আপনার তথ্য চুরি হওয়া কিংবা গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হওয়া থেকে বিরত রাখবে। যেমন আমরা সকলেই কমবেশি Facebook ব্যবহার করি। এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনার ব্যক্তিগত সব রকমের তথ্য সেখানে দেয়া থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটটি আপনার এই তথ্য গুলোও ট্র্যাক করে থাকে। Firefox ব্রাউজারে Facebook Container নামে Facebook এর জন্য এক বিশেষ ফিচার রয়েছে। আপনি যখন Facebook ব্যবহার করবেন তখন এটি প্রাইভেট উইন্ডো ওপেন করবে যা আপনাকে অতিরিক্ত স্তরের নিরাপত্তা প্রদান করবে। এই নতুন উইন্ডোটি আপনার অন্যান্য ট্যাব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে অর্থাৎ এটি আপনার অন্যান্য ট্যাব গুলো এই ট্যাব থেকে কোনো রকমের তথ্য আদান প্রদান করবে না। তাছাড়া অ্যাড ব্লকের মত স্পেশল ফিচার তো থাকছেই।

রিডিং মোড

বিজ্ঞাপন (কেন?)

আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য পড়ার সময় বিভিন্ন রকমের অ্যাড কিংবা বাধা বিপত্তির শিকার হয়। Firefox ব্রাউজারে এর জন্য রয়েছে রিডিং মোড। এটি ওয়েবপেজটি কে একটি বই আকারে সাজিয়ে দেয় যেখানে অপ্রয়োজনীয় জিনিস গুলো অনুপস্থিত। অর্থাৎ বিনা বাধায় বিপত্তিতে আপনি মনযোগ সহকারে পড়তে পারবেন। এখানে চাইলে আপনি রিডিং মোড এর ব্যকগ্রাউন্ড এবং ফন্ট ও পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।

DNS over HTTPS

DNS over HTTPS হচ্ছে এক ধরনের প্রটোকল যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে DNS ডাটার ম্যানিপুলেশন প্রতিরোধ করা এবং ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।

এই ফিচারটি সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এটি আপনার আইএসপি কে আপনার ডিএনএস অনুরোধটি সনাক্ত করতে বাধা দেয়, তাই আপনার আইএসপি দেখতে পারবে না আপনি বেশিরভাগ কী ব্রাউন করছেন। Firefox বিশ্বাস করে এটি ইন্টারনেট ব্যবহারের মূলনীতি এবং এটা ব্যবহারকারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ। এজন্য এই ফিচারটি Firefox ব্রাউজারে আগে থেকেই যুক্ত। এটি আপনাকে General > Network settings > and enable DNS Over HTTPS এভাবে ম্যানুয়ালি এনাবল করে নিতে হবে।

প্রচুর বিল্ট-ইন টুল

Firefox ব্রাউজারে প্রচুর পরিমানে টুল রয়েছে যেগুলো আপনার দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহার আরো সহজতর করে তুলবে। এদের মধ্যে রিডিং মোডের কথা আমরা আগেই বলেছি যা আপনাকে প্রয়োজনীয় নিউজ কিংবা আর্টিকেল পড়তে সহায়তা করবে। তাছাড়া পকেট নামে এক ধরনের টুল রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দের ওয়েবসাইট গুলো বুকমার্ক এর মতো সেভ করে রাখতে পারবেন এবং পরবর্তীতে টা মোবাইলে পকেট অ্যাপ এর মাধ্যমেও পড়ে নিতে পারবেন। এটি সমস্ত লিঙ্ক এবং বুকমার্কগুলিকে সমস্ত ডিভাইস জুড়ে সংরক্ষণ এবং সিঙ্ক করে রাখে। Firefox ব্রাউজারে বিল্ট ইন স্ক্রিনশট অপশন রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি চাইলে একটি সামান্য সেকশন থেকে সম্পূর্ণ পেজ এর স্ক্রিনশট নিতে পারবেন। এখানে আপনি Picture-in-picture ফিচার টিও পাচ্ছেন যা বেশ ভালো ভাবে কাজ করে। এমনকি এটা Opera-র চেয়েও ভালো। তাছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর অ্যাড-অন এর সুবিধা। চাইলে আপনি আপনার অ্যাড-অন শর্টকাট গুলো পুনরায় সাজিয়ে নিতে পারবেন। এবং আপনার ব্যবহার অভিজ্ঞতা আরো মজার হবে।

পরিশেষ

আমি প্রায় সব রকমের ব্রাউজার ব্যবহার করে দেখেছি। এদের মধ্যে বহুল পরিচিত ব্রাউজার গুলোর সাথে Firefox এর তুলনা করলে Firefox বেশ এগিয়ে থাকছে সবার থেকে। এর পারফর্মেন্স, এর সুরক্ষা, এর কাস্টোমাইজেশন অন্যান্য সকল ব্রাউজারের থেকে এগিয়ে। যার কারণে একে আমি ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে অনেক সময় ধরে ব্যবহার করে আসছি। আশা করি আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পারবেন যে কেনো Firefox ব্রাউজার টি সকল ব্রাউজার দের মধ্যে সেরা। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

Hello World!
Jamil's here. Love to learn and write about new things, especially about tech.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.