Reading Time: 6 minutes
https://i0.wp.com/i.redd.it/v9x0qqhhl6c51.png?w=810&ssl=1
Credit : u/adi1090x

পলিবার এর থিম খুঁজতে গিয়ে আর্চক্র্যাফট এর খোঁজ পাওয়াটা নিতান্তই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো। তবে এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাটার প্রভাব আমার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠবে সেটা শুরুতে অনুমান করি নি। ভারতের বাসিন্দা আদিত্য শাক্য‘র চমৎকার কিছু কাজ অন্যান্যদের মতন আমারও নজর কেড়েছে। ইউজার ইন্টারফেস সম্পর্কিত বিষয়াবলীতে তার পদচারনা বেশি, পাশাপাশি তৈরি করেছেন আর্চক্র্যাফট এর মতন একটি চমৎকার লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন।

নাম থেকে সহজেই অনুমেয় আর্চক্র্যাফট একটি আর্চ লিনাক্স ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন। ভ্যানিলা আর্চ বলা হলে ভুল বলা হবে না। আদতে ইউজার ইন্টারফেস আর উল্লেখযোগ্য ঘষামাজা বাদে বিশেষ কোনো পরিবর্তন নেই আর্চের থেকে। WM কিংবা উইন্ডো ম্যানেজার ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন হওয়ায় আর্চক্র্যাফট কোনো ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট ব্যবহার করে না। bspwm ও Openbox কে উইন্ডো ম্যানেজার হিসেবে পাওয়া যায় আর্চক্র্যাফটে। তাই এটি খুব বেশি হার্ডওয়্যার রিসোর্স ব্যবহার করে না। উইন্ডো ম্যানেজার ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন হওয়ায় স্বভাবতই এটি সবার জন্যে উপযোগী হবে না। তবে প্রথমবার ব্যবহার করতে গেলে খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হবে সেরকমটাও নয়। Openbox ও bspwm দুটো উইন্ডো ম্যানেজারের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রি-কনফিগারড থাকায় আলাদা করে হ্যাপা পোহাতে হয় না। কী-বাইন্ডিংস (Key Bindings) গুলো একবার আয়ত্তে এনে ফেললে আরামসে ব্যবহার করা যাবে আর্চক্রাফট। দুটো উইন্ডো ম্যানেজার এর সাপোর্ট থাকলেও Openbox এর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেই ব্যাপারটা ব্যবহার করলে চোখে পড়ে।

ইনস্টলেশন

সম্পূর্ণ প্রজেক্টটি ওপেনসোর্স, এটি গিটহাব ও সোর্সফোর্জ এ হোস্ট করা হয়েছে। আর্চক্রাফট বেশ হালকা ও কম রিসোর্স ব্যবহার করলেও এটি পুরোনো পিসিতে ব্যবহার করা যাবে না ৩২বিট আর্কিটেকচার সাপোর্ট না থাকায়, শুধুমাত্র ৬৪বিট আর্কিটেকচারের সাপোর্ট রয়েছে এটিতে। অফিসিয়াল সাইটে দেয়া তথ্যমতে ৬৪বিট ছাড়া অন্য কোনো আর্কিটেকচারের সাপোর্ট আসার সম্ভাবনা নেই। ৬৪বিট আর্কিটেকচারের সিস্টেমে ইন্সটেলেশনের জন্যে আইএসও ফাইলটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন অফিসিয়াল গিটহাব, সোর্সফোর্জ কিংবা টরেন্ট সোর্স থেকে থেকে। ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন আর্চক্র্যাফটের ডাউনলোড পেইজটি। সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ফাইলটির সাইজ ১.৭ জিবি। ডাউনলোডের সোর্সগুলো খুব একটা দ্রুত না হওয়ায় ডাউনলোডে বেশ কিছুটা সময় লেগে যাবে।

আর্চক্র্যাফটের আইএসও ফাইলটি আর্চের মতই ইনস্টলেশনের পূর্বে লাইভ ইউএসবি থেকে ব্যবহার করা যাবে। তবে ইনস্টলেশনের জন্যে আর্চের মতন ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন নেই। অফলাইনেই আর্চক্র্যাফটের আইএসও দিয়ে দিব্যি কাজ চলে যাবে, সেইসাথে ইনস্টলেশন-ও হয়ে যাবে। আর্চক্রাফট ডিফল্ট উইন্ডো ম্যানেজার হিসেবে ওপেনবক্স ব্যবহার করে, তাই আইএসও বুট করার পর ওপেনবক্স ও বেশকিছু দরকারি সফটওয়্যার সমেত একটি ওপারেটিং সিস্টেম এর দেখা পাবেন।

আর্চক্র্যাফট শুরুতে ইনস্টল করা যেত এতে থাকা ABIF(Arch Base Installation Framework) দিয়ে। ABIF দিয়ে ইনস্টল করাটা সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে একটু কঠিনই বটে। তবে সর্বশেষ হালনাগাদে Calamares ইন্সটলার যুক্ত হওয়ায় ইনস্টলেশন এর কাজটি এখন সহজ হয়ে গেছে। লাইভ সেশনের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড হলো liveuser। পূর্বে লগিন করার জন্যে পাসওয়ার্ড দেয়ার প্রয়োজন হতো তবে সর্বশেষ হালনাগাদে সেটির আর প্রয়োজন পড়ে না।

আর্চক্র্যাফট ইনস্টল করতে আমার সর্বসাকূল্যে ১৫ মিনিটের মতন লেগেছিলো। উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা না বললেই, GRUB ইন্সটলেশন ছাড়াও Systemd Boot ইনস্টল করার সুবিধা থাকছে এখানে। ব্যক্তিগতভাবে GRUB এর থেকে sd-boot বেশি পছন্দ করি আমি। অতিরিক্ত কিছু না করেই sd-boot ইন্সটল করতে পারার ব্যাপারটা আমার জন্যে সুখকর ছিলো। অন্য ঘটনাটি হলো, আর্চক্র্যাফট ইনস্টল করেছিলাম এতে থাকা গান শুনতে শুনতে, এরকম অভিজ্ঞতা একদমই প্রথম। mpd(Music Player Daemon) প্রিকনফিগার্ড করা রয়েছে এখানে। মজার ব্যাপার হলো কিছু গান আগে থেকেই mpd সার্ভারে যুক্ত করা আছে, ফলে ইনস্টলেশনের সময়ও সেই গানগুলি শুনা যায়।

প্রথম নজরে আর্চক্র্যাফট

যেমনটা বলেছিলাম আর্চক্র্যাফট ডিফল্ট উইন্ডো ম্যানেজার হিসেবে ওপেনবক্স ব্যবহার করে, ওপেনবক্সের প্রতিই আর্চক্র্যাফটের গুরুত্ব বেশি। উইন্ডো ম্যানেজার এর সাথে পূর্বপরিচয় না থেকে থাকলে আর্চক্র্যাফট-ই হতে পারে উইন্ডো ম্যানেজার এর অভিজ্ঞতা লাভ করার সর্বোত্তম উপায়। ওপেনবক্স ছাড়াও লগিন স্ক্রিন থেকে bspwm ব্যবহার করার সুযোগ তো থাকছেই। বলে রাখা ভালো, লগিন স্ক্রিনে LXDM ব্যবহার করা হয়েছে যা একটি লাইটওয়েট ডিস্প্লে ম্যানেজার। ওপেনবক্সের মতন Stacked WM আবার bspwm এর মতন Tiled WM বৈচিত্র্য রাখাটা ভালো লেগেছে, ফলে ব্যবহারকারী যে ধরণের উইন্ডো ম্যানেজারে আরামবোধ করবেন সেরকমটাই ব্যবহার করতে পারবেন। আর্চক্র্যাফটে লুক এর উপর যে প্রচুর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেই প্রমাণ এর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে। Plymouth স্ক্রিন থেকে থেকে শুরু করে টার্মিনাল অব্দি সৌখিনতার ছাপ বিদ্যমান। আর্চক্র্যাফটকে সুন্দর না বলে পারা যায় না, এত চমৎকারভাবে কনফিগার করা যে নিজ থেকে কিছু করার বিশেষ প্রয়োজন পড়বেই না। ওয়ালপেপার, পলিবার থিমস, রোফি থিমস, কালার স্কিম সব জায়গাতেই সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। শুধু ইউজার ইন্টারফেস নয় ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর উপরেও যথেষ্ট কাজ করা হয়েছে। কী বাইন্ডিংস ও শর্টকাট যথাযথ ব্যবহার করে সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা লক্ষ্যণীয়।

প্যানেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Polybar, সেইসাথে ডক হিসেবে রয়েছে Plank। অ্যাপ্লিকেশন লঞ্চার হিসেবে Rofi ব্যবহার হয়েছে আর নোটিফিকেশনের জন্যে Dunst। দুটো উইন্ডো ম্যানেজার এর জন্যেই বেশ কিছু থিমস প্রিকনফিগার করা আছে। ওপেনবক্স এ রাইট ক্লিক করে অপশন থেকে পছন্দের থিমটি নির্বাচনের সুযোগ থাকছে আর bspwm এ ‍ctrl + alt + t প্রেস করলে থিম নির্বাচনের জন্যে একটি উইন্ডো শো করবে। সব পলিবার প্যানেলগুলোতে প্রয়োজনীয় প্লাগিন যেমন সিস্টেম ট্রে, উইন্ডো নাম্বারস, নেটওয়ার্ক, টাইম এন্ড ডেট, ব্রাইটনেস, ভলিউম ইত্যাদি থাকায় ব্যবহারে সুবিধা হয়। লকস্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে betterlockscreen, এটি i3lock এর একটি ফোর্ক। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি কাস্টোমাইজেবল। আর্চক্র্যাফটে থাকা সুন্দর ওয়ালপেপারগুলোর সাথে বেশ মানিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

পূর্বে কোনো পোলকিট এজেন্ট না থাকায় আমাকে পোলকিট এজেন্ট ইন্সটল করে সেটাপ করে নিতে হয়েছিলো। সর্বেশেষ হালনাগাদে xfce-polkit‍ যুক্ত করে পূর্বের এই সমস্যাটি দূর করা হয়েছে। আর্চক্র্যাফটে পূর্বে শুধুমাত্র ext4 ফাইল সিস্টেম এর সাপোর্ট থাকলেও এখন থেকে btrfs ফাইলসিস্টেম এর সাপোর্ট রাখা হয়েছে ডিফল্ট হিসেবে। ফলে Timeshift দিয়ে স্ন্যাপশট ব্যাকাপ নেয়াটা এখন এখন আরও সহজতর কাজ।

দেখার মতন বিষয় হলো ছোটখাট ব্যাপারগুলোতেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এখানে। স্ক্রিনশট টুলের শর্টকাট, প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো রুট ইউজার হিসেবে ওপেন করার শর্টকাট, এমপিডি কন্ট্রোলার ওপেন করার শর্টকাট এরকম আরও বেশ কিছু শর্টকাট ও কী-বাইন্ডিংস রয়েছে আর্চক্র্যাফটে। অতি প্রয়োজনীয় কী-বাইন্ডিংসগুলো ওয়েলকাম গাইডেই সংক্ষেপে দেওয়া আছে। ওপেনবক্স এর সম্পূর্ণ কনফিগারেশন ও কী-বাইন্ডিংস দেখতে ~/.config/openbox/rc.xml ও bspwm এর জন্যে ~/.config/sxhkd/sxhkdrc ফাইলটি ওপেন করতে পারেন, নিজের মত কনফিগারেশন এডিট করেও নিতে পারবেন এখান থেকেই। আর্চক্র্যাফটে থাকা ওয়েলকাম গাইডে সংক্ষেপে ব্যবহার বিধি লেখা থাকায় নতুন ব্যবহারকারীদের হোচট খেতে হয় কম।

অ্যাপস এবং কনফিগারেশন

আর্চক্র্যাফটে মূলত XFCE এবং LXDE অ্যাপ্লিকেশনগুলো প্রিইন্সটলড থাকে। বেশ কিছু কাস্টোমাইজড প্যাকেজ-ও রয়েছে এখানে। সেগুলোর আপস্ট্রিম রেপো হিসেবে আর্চক্র্যাফটের গিটহাব রেপোজেটরি ব্যবহার হয়। সাধারণ কাজগুলো করার মতন যথেষ্ট অ্যাপ্লিকেশন আর্চক্র্যাফট এ পূর্ব থেকেই আছে, সব অ্যাপ্লিকেশনগুলোই লাইটওয়েট ও অতিরিক্ত ডিপেন্ডেন্সি ছাড়া ইন্সটল করা আছে। যেহেতু আর্চ ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন সেহেতু অন্যান্য সফটওয়্যার ইনস্টলেশনের জন্যে AUR ব্যবহার করতে পারবেন আলাদাভাবে কোনো AUR Helper ইন্সটল করা ছাড়াই। আর্চক্রাফটে AUR Helper হিসেবে YAY প্রিইন্সটলড থাকে।

আর্চক্র্যাফটে থাকা কিছু প্রি-ইন্সটলড অ্যাপ্লিকেশনগুলোর একটি তালিকা –

  • File Manager : Thunar, PCMAN FM, Ranger
  • Terminal Emulator : Alacritty, XFCE Terminal
  • Wallpaper : Nitrogen, FEH
  • Dock : Plank
  • Text editor : Leafpad, VIm, Geany
  • Archiver : Xarchiver
  • Image Viewer : Viewnoir
  • Web Browser : Midori
  • Document Viewer : Atril
  • System Backup : Timeshift
  • Power Manager : XFCE Power Manager

শেল হিসেবে bash এর পরিবর্তে zsh ব্যবহার হয়েছে আর্চক্র্যাফটে। qt ও gtk অ্যাপ্লিকেশন এর থিম এডিট করার জন্যে প্রয়োজনীয় টুলস, থিমস, আইকনস রয়েছে আগে থেকেই। bspwm এর কী-বাইন্ডার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে sxhkd কে। একটা অতি প্রয়োজনীয় টুল আর্চক্র্যাফটে পাই নি, সেটি হলো ক্লিপবোর্ড ম্যানেজার। সাধারণত সব ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট এ ক্লিপবোর্ড ম্যানেজার থাকে না যদিও এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর্চক্র্যাফটেও একটি ক্লিপবোর্ড ম্যানেজার পূর্ব থেকে থাকলে আরও সুবিধা হতো। রয়েছে GRUB ও Plymouth থিমস, adi1090x এর গিটহাব রেপোজেটরিতে Plymouth থিমস এর একটি চমৎকার সংগ্রহ আছে, সেখান থেকে থিম নিয়েও ব্যবহার করতে পারবেন।

রিসোর্স ইউসেজ

আর্চক্রাফট আগাগোড়া একটি লাইটওয়েট ডিস্ট্রো। উইন্ডো ম্যানেজার ব্যবহার হওয়ায় খুব অল্প RAM ও CPU ব্যবহার করে থাকে এটি। অফিসিয়াল সাইটে যদিওবা ২০০ এমবি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, তবে আমার ক্ষেত্রে এটি ৩৫০ এমবির কিছু বেশি RAM ব্যবহার করছিলো বুট হওয়ার পর, সংখ্যাটা ২০০ এমবির থেকে বেশি হলেও এটি যথেষ্ট লাইটওয়েট।

Resource Usage - htop
Credit : debugpoint

এক নজরে আর্চক্রাফট

Pros

  • Openbox ও bspwm উইন্ডো ম্যানেজার রয়েছে
  • চমৎকার থিমের সংগ্রহ
  • ডিফল্ট হিসেবে btrfs ফাইল সিস্টেম এর ব্যবহার
  • GRUB এর পাশাপাশি sd-boot ব্যবহারের সুযোগ
  • কম রিসোর্স ব্যবহার করে
  • Calamares ইনস্টলার
  • সহজবোধ্য ডকুমেন্টেশন

Cons

  • সরাসরি আপগ্রেড এর সুযোগ নেই
  • ডিফল্ট ফন্ট রেন্ডারিং এ সামান্য ত্রুটি আছে
  • bspwm এর প্রতি কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে
bspwm
Openbox
Openbox Menu

সব মিলিয়ে আর্চ ও উইন্ডো ম্যানেজার এর মিশেলে আর্চক্র্যাফট দারুন একটি ডিস্ট্রিবিউশন। আমার উইন্ডো ম্যানেজার ব্যবহারের যাত্রা শুরু করতে আর্চক্রাফট এর বিশেষ ভূমিকা ছিলো। যারা কম পরিশ্রম করে উইন্ডো ম্যানেজার ও আর্চ ব্যবহারের সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না তারা অবশ্যই একবার ব্যবহার করে দেখতে পারেন আর্চক্র্যাফটকে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.