বর্তমানে প্রযুক্তি যেমন এগিয়ে তেমন ইন্টারনেট গতিও অনেকখানি এগিয়ে। Edge, ২জি কিংবা ৩জি এর যুগ বর্তমানে নেই বললেই চলে। সম্প্রতি জানা গিয়েছে যে ৩জি নেটওয়ার্ক আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হবে। এরপর এই ৩জি সেবা এক সময় বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে ২জি সক্রিয় থাকবে এবং সেই সাথে সক্রিয় থাকবে ৪জি নেটওয়ার্ক ও। বানিজ্যিক কিংবা ব্যবসায়িক কাজের জন্য ৫জি ব্যবহার করা যাবে, বাকি সবার জন্য ৪জি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। আর ২জি সব ধরনের ভয়েস কলের জন্য ব্যবহার করা হবে। তবে ৪জি সুবিধা সবার জন্যে বরাদ্দ থাকলেও এর ব্যবহারীর সংখ্যা বর্তমানে কম।
৪জি ব্যবহারকারী আশানুরূপ মাত্রায় বৃদ্ধি না পাওয়ায় এর ব্যবহারের হার বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট প্যাকেজ ছাড়াও এতে নতুন প্যাকেজ যুক্ত হয়েছে। বিটিআরসি কমিশন তার সিদ্ধান্তে বলেছে যে ৪জি হ্যান্ড সেট ব্যবহারের হার এবং ৪জি গ্রাহক বাড়ানোর জন্য ৪জি হ্যান্ডসেট সম্পর্কিত যেকোনও অফার অপারেটররা দিতে পারবে এবং এই অফার ৮৫টি প্যাকেজের বাইরে থাকবে। অর্থাৎ, মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের সব প্যাকেজ (ভয়েস, ডাটা, বান্ডেল) ৮৫টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে এবং কোন অবস্থাতেই তা এর বেশি হতে পারবে না।
বিটিআরসি এক নির্দেশনা দিয়ে প্যাকেজ সীমিত করেছে। এর আগে একেকটি অপারেটরের প্যাকেজ সংখ্যা দুই থেকে আড়াই শতাধিক ছিল। যার ফলে গ্রাহকদের বিভিন্ন ভীগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এত প্যাকেজের আড়ালে প্রয়োজনীয় প্যাকেজটিই গ্রাহককে খুঁজে পেতে অনেক কষ্টকর হতো। তা থেকে উত্তরণের জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া এ ধরনের প্যাকেজের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্যাকেজের মতো ১০ ডিজিটের আইডি থাকবে এবং প্যাকেজের টাইপ বোঝাতে ভি, ডি, সি, বি, এস, আর ইত্যাদি অক্ষরের পরিবর্তে ইংরেজি জি অক্ষর ব্যবহার করতে হবে।
টু-জি বা ৩জি সিমে মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রেও এই প্যাকেজটি প্রযোজ্য হবে। সব হ্যান্ডসেট বান্ডেল করার ক্ষেত্রে কমিশন থেকে কো-ব্র্যান্ডিংয়ের অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে এবং যৌথ প্রমোশনের জন্যও কমিশন থেকে অনুমতি নিতে হবে। ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রথমবারের মতো ৪জি সেবা চালু হয়। তারপর ৪ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু সে অনুসারে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনো বাড়েনি। গত নভেম্বরে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, ৪জি ব্যবহারকারী ৬ কোটি ৯১ লাখ, ৩জি ব্যবহারকারী ৩ কোটি ৬২ লাখ।
আর বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখের বেশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন যে করোনার সময়কালের আগে মোবাইল ফোনের যে বিক্রি ছিল, বর্তমানে সেরকম বিক্রি এখন আর হচ্ছে না। করোনার কারনে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট একটা বড় কারণ। মানুষ এখন টাকা খরচ করতে কেন যেন সংকোচ বোধ করছেন।
যদিও মোবাইল ফোন উৎপাদকরা বলছেন, দেশে ৪জি স্মার্টফোনের অপ্রতুলতার কারণে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে না। তাদের দেওয়া তথ্য, দেশে ৪জি উপযোগী স্মার্টফোনের সংখ্যা ৪৮ শতাংশ। যদিও এর সংখ্যা বাড়ছে, তবে আশানুরূপভাবে না বাড়ায় সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। ৪জি সেটের সঙ্গে ভ্যালু অ্যাডের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগে ৪জি ব্যবহারকারী বাড়তে পারে। তিনি আরো জানান, দেশের বাজার সাধারণত মার্চ মাস থেকে ভালো হতে শুরু করে এবং বিক্রি বাড়তে থাকে। ঈদের সময় হলে সেই বিক্রি আরও বহুগুণ বেড়ে যায়।
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বিভিন্ন সময়ে কো-ব্র্যান্ডেড সেট বিক্রি করে থাকে। এগুলো সাধারণত অপারেটরগুলোর টাচপয়েন্টে যেমন কাস্টমার কেয়ার কিংবা গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে বিক্রির জন্য রাখা হয়। এই ফোন বিক্রির সময় ক্রেতাকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য ভয়েস ও ডাটাসহ ইন্টারনেট প্যাকেজ অফার করে। যদিও এগুলো আগে থেকে কমিশন থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। অপারেটরগুলো এই প্যাকেজগুলো নির্ধারিত প্যাকেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না করার আবেদন জানালে কমিশন কয়েকটি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ৪জি সেটের বিক্রি বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।