সম্প্রতি বেশ কিছু পূর্বাভাস পাওয়া গেছে টেলিনরের গবেষণা ইউনিট থেকে। জলবায়ু বিষয়ক মাইক্রো-ডিগ্রির চাহিদা বাড়বে, প্রযুক্তি ও ডিজিটাইজেশন ডেটা স্থানান্তরকে আরো দক্ষ ও সহজ করে তুলবে, সবকিছুর অপটিমাইজেশন হবে, মহামারী চলাকালীন তরুণদের জন্য ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক স্থাপন ও বৃদ্ধি কঠিন হয়ে পড়বে এবং গ্রিনফ্লুয়েন্সারদের আবির্ভাব হবে এরকম অনেক পূর্বাভাসই পাওয়া যায়। এতে কীভাবে প্রযুক্তি ও ডিজিটাইজেশন উন্নয়নকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে পারে, তার গুরুত্ব উঠে এসেছে।
সোমবার জিপি হাউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গ্রামীনফোন টেলিনরের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে টেলিনর রিসার্চের প্রধান বিওন তালে স্যান্ডবার্গ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন। স্যান্ডবার্গ বলেন যে কর্মীদের পরিবেশবান্ধব বিষয়ে জ্ঞানের (গ্রিন নলেজ) চাহিদা মেটাতে ক্রমশ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ‘পাঠ্যক্রমের’ অংশ হিসেবে সবুজ মাইক্রো-ডিগ্রি এবং কোর্স চালু করবে। তিনি আরো বলেন তারা আশাবাদী যে ২০২২ সালে মোবাইল ডিভাইসের ফাইভজি’র মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি-সাশ্রয়ী এজ ডেটা সেন্টারগুলো ব্যাপক হারে গড়ে উঠবে।
এর ফলে ডেটা ট্রাফিকের অংশ ও বিদ্যুৎ কেবল স্থানীয়ভাবে স্থানান্তর হওয়ার কারণে ডেটা আদান প্রদান নেটওয়ার্কে জ্বালানির সাশ্রয় হবে। এছাড়াও যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এসব সুযোগ সুবিধার নিরিখে ব্যর্থ হবে, তারা নতুন প্রতিভাবান তরুণদের কাছে আকর্ষণ হারাবে বলে তিনি মনে করেন। ভিডিও বার্তায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি অনুসারে সারাদেশে আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ল্যাব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। প্রতিমন্ত্রী বলেন যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি এবং আরও অনেক ডিজিটাল অবকাঠামো এবং সেবা চালু করার কথা তুলে ধরেন।
স্যান্ডবার্গ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে এখন বেশ কিছু জলবায়ু-সচেতন ইনফ্লুয়েন্সার ও অ্যাক্টিভিস্ট দেখা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে যেসব ইনফ্লুয়েন্সার জলবায়ু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন না বা উদাসীনতা দেখাবেন তারা পুরাতন হিসেবে বিবেচিত হবেন। বৈশ্বিক মহামারী চলাকালীন তরুণদের জন্য ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক স্থাপন ও বৃদ্ধি এবং কর্পোরেট ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা অর্জন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়। বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন যে বর্তমানে ই-বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোক্তাদের আকর্ষণ করতে নতুন ডিজাইন বাজারে আনার চেয়ে পরিবেশের জন্য কিছু করতে চাইলে পণ্যের স্থায়িত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরো বলেন যে এ ছাড়া নেটওয়ার্ক টাওয়ারের বিকিরণ যাতে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ না হয়, সে ব্যাপারে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন হতে হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ও বিটিআরসি’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর সার্ভার ও অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক কোনো কিছু ডিজাইন করার সময় উন্নত পরিবেশ তৈরি করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন যে একইসঙ্গে ব্যবহারকারীরা তাদের দৈনিক জীবনে কীভাবে এগুলোর প্রয়োগ ঘটাতে পারে তা নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। তিনি আরো বলেন যে গ্রিনফ্লুয়েন্সার ধারণাটি তার কাছে বেশ আকর্ষণীয় লেগেছে। বাংলাদেশে এ ধারণাটি অতি শীঘ্রই জনপ্রিয় করতে সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেন তিনি।
আর এভাবেই তিনি সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে শক্তি সাশ্রয়ীর বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেন। গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন যে ক্রমাগত জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে চরম জলবায়ুজনিত বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, যা একটি টেকসই অর্থনীতির লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে তারা ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বর্তমানে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ুবান্ধব কৌশল গ্রহণ করা, যা সবুজে রূপান্তরের মাধ্যমে সকলের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখবে।