অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাপ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি অ্যাপ স্টোরে ট্রুথ সোশাল এর অভিষেক হয়। অ্যাপটির অভিষেকের পর এর সাথে সংযুক্ত ব্ল্যাংক চেক প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বাজারে কদর বেড়েছে। আর অ্যাপ স্টোরে ট্রুথ সোশাল এর সাফল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শেয়ার বাজারেও ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডস যেন সাফল্য পেয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে যে শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডস ছিল। বিনিয়োগকারীদের জন্য তৈরি সামাজিক মাধ্যম স্টকউইটস ডটকমেও ব্ল্যাংক-চেক প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল।
এক লাফে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ২৬ শতাংশ বেড়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য শেয়ারের দাম ও বেড়েছে। ব্ল্যাংক-চেক প্রতিষ্ঠানের মূল বৈশিষ্ট হল, এদের নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা পরিকল্পনা থাকে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করে। ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হয়ে যায় অথবা ব্ল্যাংক-চেক প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডস অ্যাকুইজিশন কর্পোরেশন ট্রুথ সোশাল এর বেলায় এই ভূমিকাটি পালন করেছে। শেয়ার বাজারে অভিষেকের জন্য গেল বছরের অক্টোবরেই এর মূল প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ ট্রুথ সোশ্যাল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডসের সঙ্গে জোট বেঁধেছি।
২০২০ সালে ফানওয়্যার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উপর ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি অ্যাপ নির্মাণের দায়িত্ব পড়েছিল। ট্রুথ সোশাল এর সফলতার ফলে উক্ত প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে দাম প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। বিগত সময়ের দিকে ডনাল্ড ট্রাম্পের নতুন সোশাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যাল প্লে স্টোর অ্যাপে এসেছে। রোববার নিউ ইয়র্ক স্থানীয় সময় অনুযায়ী মধ্যরাতের একটু আগে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে হাজির হয় অ্যাপটি। গত বছর বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজের এই অ্যাপের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে ফিরেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে যে যারা অ্যাপটি আগেই অর্ডার করেছিলেন, তাদের আইফোনে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করা গেলেও নতুন অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে চাইলে “সামথিং ওয়েন্ট রং” দেখাচ্ছে। অ্যাকাউন্টের জন্য নিবন্ধন করতে গিয়ে কিছু সংখ্যক ব্যবহারকারী সমস্যার কথা বলেছেন। আবার অনেকের “অতিরিক্ত চাহিদার কারণে আমরা আপনাকে অপেক্ষমান তালিকায় রেখেছি” এমন বার্তাও পেয়েছেন। টুইটার, ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ট্রাম্পের ফলোয়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে, আট কোটি ৯০ লাখ, তিন কোটি ৩০ লাখ এবং ২ কোটি ৪৫ লাখ।
গত বছরের ৬ জানুয়ারি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাঁধান। ট্রাম্প ওই ঘটনার মতো আরও সহিংস ঘটনার উস্কানি দিতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে শীর্ষ সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ কারনে ট্রাম্প নিজেই একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। ট্রুথ সোশ্যালের অ্যাপ স্টোর পৃষ্ঠার বিস্তারিত অংশে অ্যাপটির সংস্করণগুলোর বর্ণনা রয়েছে। একদিন আগেই সেখানে ১.০ সংস্করণ ছিল। আর বর্তমান সংস্করণ 1.0.1-এ আগের সংস্করণ থেকে পার্থক্য হিসেবে বাগ ফিক্স করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।
ট্রুথ সোশাল অ্যাপটি ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ নিয়ে এসেছে। সাবেক রিপাবলিকান জনপ্রতিনিধি ডেভিন নুনেস এর নেতৃত্বে রয়েছেন। শুক্রবার নুনেস অ্যাপটিতে ব্যবহারকারীদের আরও অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করা, ফটো এবং ভিডিও শেয়ার এবং কথোপকথনে অংশ নেওয়ার আহ্বান। রোববার সকালে ফক্স নিউজের এক টক শোতে হাজির হয়ে নুনেস বলেন যে এই সপ্তাহে তারা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে রোল আউট শুরু করবেন। তিনি জানান এটি দুর্দান্ত হবে আর তারা আরও অনেক লোককে সেখানে পাবেন যারা প্ল্যাটফর্মে থাকবেন। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই অ্যাপের মাধ্যমে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়া।
মার্চের শেষের দিকে অন্তত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পুরোপারি কার্যকর হতে যাচ্ছেন বলে জানান নুনেস। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে যে অ্যাপটি বাকস্বাধীনতা সমর্থক দাবি করা বিকল্প অ্যাপের দীর্ঘ তালিকায় নাম লেখাবে। যেসব প্রথম সারির সামাজিক মাধ্যম অ্যাপের বিকল্প হিসেবে বাজারে এসেছে কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি তাদের চেয়ে এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এখন পর্যন্ত টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী পার্লার, ভিডিও সাইট রাম্বল, গেটারসহ নতুন অ্যাপগুলোর কেউই জনপ্রিয়তায় প্রথম সারির অ্যাপগুলোর কাছাকাছিও আসতে পারেনি।