সম্প্রতি কন্টি ও কোস্টা রিকার মধ্যে সাইবার যুদ্ধ চলছে। কোস্টারিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রদরিগো চাবেস হ্যাকারদের দল কন্টির সঙ্গে কোস্টারিকা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জ বর্তমান পরিস্থিতিতে কন্টি কোস্টা রিকায় একটি ভূরাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছে। ১৬ এপ্রিলের এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট চাবেস বলেছেন যে কন্টির হ্যাকাররা কোস্টারিকার ভেতর থেকেই সহযোগিতা পাচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশটির প্রেসিডেন্ট হ্যাকারদের দলটি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এপ্রিল মাস থেকে দেশটির বেশ কিছু সরকারি সেবা ও সংস্থা কন্টির র্যানসমওয়্যার হামলায় কার্যত বিকল হয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, বড় র্যানসমওয়্যার গ্রুপগুলো যে চাইলেই একটি দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, কোস্টা রিকার ওপর কন্টির সাইবার হামলার ঘটনা তারই প্রমাণ। দেশটির অর্থ ও শ্রম মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা ও সংস্থা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কন্টির হ্যাকারদের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের জেরেই প্রেসিডেন্ট চাবেসের যুদ্ধের ঘোষণা এলো বলে ভার্জ জানিয়েছে। সাইবার হামলায় মাধ্যমে সরকার পতনই তাদের মূল উদ্দেশ্য বলে হ্যাকাররা জানিয়েছে।
নিজস্ব ওয়েবসাইটে কন্টি এখন পর্যন্ত কোস্টারিকার প্রায় সাতশ জিবি ডেটা প্রকাশ করেছে। ১৮ এপ্রিলে শুরু হওয়া ওই সাইবার হামলায় সরকারি কম্পিউটার সিস্টেম অকেজো করে দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাকাররা দেশটির বিপুল পরিমাণ ডেটা হাতিয়ে নিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে চাবেস বলেন যে যুদ্ধ এখনো চলছে এবং এটি বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না। যুদ্ধটি একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দলের বিরুদ্ধে। কোস্টারিকাতেও সম্ভবত তাদের সদস্য আছে। তবে কিছু মানুষ যে দেশের ভেতর থেকেই কন্টিকে সহযোগিতা করছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
কন্টির নিজস্ব ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক মেসেজে হ্যাকাররা কোস্টারিকার নাগরিকদের মুক্তপণ দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং দ্রুত দেওয়ার তাগাদা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই তারা দাবিকৃত মুক্তিপণের দাবি দ্বিগুণ করে এক কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে দুই কোটি ডলার করেছে। অন্যদিকে, হ্যাকারদের দাবি মেনে মুক্তিপণ দেবেন না বলে প্রেসিডেন্ট চাবেস জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি কঠোর অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছে ভার্জ।
সরকারের ২৭টি সংস্থা র্যানসমওয়্যার হামলার শিকার হয়েছে বলে চাবেস জানিয়েছেন। এর মধ্যে আছে দেশের শ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়।
দেশটির সরকার মন্ত্রণালয় দুটির কম্পিউটার সিস্টেম চালু না থাকায় করের অর্থ সংগ্রহ করতে পারছে না। কোস্টারিকায় এই শঙ্কট চলমান থাকা অবস্থাতে দেশটির নাগরিকদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে বলে ভার্জ জানিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অ্যান্টি-র্যানসমওয়্যার সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্ম হ্যালসিয়নের প্রধান জন মিলার বলেন যে তারা এমন একটা সময়ে আছেন যখন র্যানসমওয়্যার গ্রুপগুলো শতকোটি ডলার কামাই করছে। তাই তাদের এই নেটওয়ার্কগুলোতে অনুপ্রবেশের সক্ষমতা কেবল তাদের ইচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ। মাসের পর মাস, অনলাইনে এমন নতুন নতুন হ্যাকার দল আসছে। এটি একটি মারাত্মকভাবে ক্রমবর্ধমান সমস্যা।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার কোস্টারিকায় কন্টির র্যানসমওয়্যার হামলা শুরু হওয়ার পর দলটির হ্যাকারদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। কন্টি গ্যাংয়ের হ্যাকারদের মধ্যে মূল সমন্বয়কারীদের পরিচয় বা অবস্থানের তথ্য দিলে এক কোটি ডলার পুরস্কার দেবে যুক্তরাষ্ট্র। আর কন্টির সদস্যদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব করবে এমন তথ্য দিলে পুরস্কার হিসেবে ৫০ লাখ ডলার দেয়া হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।