১১ বছর বয়সের সেলেনা রডরিগেজ ২০২১ সালে নিজের জীবনের অবসান ঘটায়। ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান ‘মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড’ ও ‘স্ন্যাপ ইনকর্পোরেটেড’-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সেলেনা রডএইগেজের মা। তিনি থাকেন যুক্তরাষ্টের কানেটিকাটে। সম্প্রতি আদালতের মামলায় তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে সামাজিক মাধ্যমগুলোর ‘বিপজ্জনক ফিচার’-এর কথা উল্লেখ রয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি আসক্তিই সন্তানের আত্মহত্যার মূল কারণ বলে তিনি অভিযোগ করেন। সেলেনা রডরিগেজের মা’র পক্ষে সোশাল মিডিয়া ভিকটিমস ল সেন্টার (এসএমভিএলসি) নামের একটি সংগঠন ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
মা একাধিকবার তার সন্তানের ডিভাইস জব্দ করেছিলেন। কিন্তু, বিবৃতিতে সংগঠনটি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের জন্য সেলেনা পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে। তারা বলে যে সেলেনা চরমভাবে ইন্সটাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের প্রতি আসক্ত ছিল। এছাড়াও সংগঠনটি এক বিবৃতিতে আরো জানায় যে আসক্তির কারণে সেলেনা একাধিকবার মানসিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন। তার মধ্যে একজন থেরাপিস্টের মতে সেলেনার মতো সোশাল মিডিয়া আসক্ত রোগী তিনি আগে কখনো দেখেননি। সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে সেলেনা একাধিকবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে মামলায় এমন অভিযোগও উঠে এসেছে।
২০২১ সালের ২১ জুলাই জীবনাবসান ঘটানোর আগের কয়েক মাস হতাশায় ভুগেছেন সেলেনা, আসক্ততার ফলে রাতে ঘুম হতো না। কোভিড-১৯ মহামারীর শুরু হওয়ার পর সে সামাজিক মাধ্যমের প্রতি আরো বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে। সহপাঠিরা পরবর্তীতে সেলেনার স্পর্শকাতর কতগুলো ছবি ফাঁস করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়। এতে সেলেনার উপর আরো বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সে আত্মহনন করে। বিবিসি’কে দেওয়া এক বিবৃতিতে সেলেনার মৃত্যুতে দুঃপ্রকাশ করলেও স্ন্যাপের এক মুখপাত্র মামলা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে দায়েরকৃত মামলায় মেটা ও স্ন্যাপের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বলছে যে উভয় প্রতিষ্ঠান জেনেশুনে ও ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করেছে যা নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক অপ্রাপ্তবয়স্কের জন্য ক্ষতিকর। ইন্সটাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। চলতি বিতর্কের মধ্যেই শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সামাজিক মাধ্যমগুলোর বিরূপ প্রভাব নিয়ে এলো এই মামলার খবর। বিগত বছর ধরেই মেটা বিভিন্ন রকম অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মচারীর মাধ্যমে একে একে ভেতরকার গোপন কূকীর্তি ফাঁস হয়।
কর্মচারীদের নির্যাতন, মিথ্যাচার, বিদ্বেষ ছড়ানোসহ নানারকম ঘৃন্য কর্মের অভিযোগ উঠে আসে মেটা সম্পর্কে। তারপরও মেটা তা সমাধান না করেই বিষয়গুলো সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছে। বছরের শেষে এসেও মেটা কেবল মাত্র মুনাফার লোভে শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইনস্টাগ্রাম ও ফেইসবুকের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে অবহিত থেকেও তা অগ্রাহ্য করে যাওয়ার অভিযোগে সমালোচিত ও বিতর্কিত হয়েছে। পশ্চিমা দেশের বেশ কয়েকটি আইন প্রনেতা ও বাজার পর্যবেক্ষণ সংস্থা তদন্তে নেমেছে।