২০১৭ সালে উন্মোচনের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে ব্যাটল রয়্যাল ঘরানার গেম ফোর্টনাইট। বিশ্বব্যাপী ৪০ কোটিরও বেশি গেমার এই গেম খেলেন। গেমটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা গেলেও গেমের মধ্যে পোষাক ও নাচের অঙ্গভংগির মতো বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটার মাধ্যমে গেমটি থেকে অর্থ আয় করে নির্মাতা। শিশু প্রাইভেসি আইন ও কেনাকাটার সময় গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগ নিষ্পত্তিতে মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের ৫২ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে জনপ্রিয় ভিডিও গেম ফোর্টনাইট নির্মাতা এপিক গেমস।
কোনো নির্মাতাই এমন পরিসমাপ্তির উদ্দেশ্যে গেম বানায় না যুক্তি দিয়েছে কোম্পানিটি। এই সমঝোতা মেনে নিয়েছে তারা কারণ তারা চায় গ্রাহক সুরক্ষা ও গেমারদের জন্য সেরা অভিজ্ঞতা প্রশ্নে এপিক যেন সম্মুখসারীতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন বা এফটিসি বলেছে, গেম লোড হওয়ার সময় বিভিন্ন প্রতারণামূলক ইন্টারফেইস থেকে কেনাকাটায় বাধ্য করার মাধ্যমে গেমারদের ঠকাতো কোম্পানিটি। গেমে প্রাইভেসি লঙ্ঘনকারী ডিফল্ট সেটিং ব্যবহারের অভিযোগও এনেছে এফটিসি।
তবে, এর জন্য অতীতের নকশাগুলোর ওপর দোষ চাপাচ্ছে নির্মাতা এপিক গেমস। এফটিসি বলেছে, বিশ্বব্যাপী অচেনা ব্যক্তিদের সঙ্গে ইন্টারেক্টিভ ব্যাটল চালানো গেমটি তৈরি হওয়ার কথা শিশু ও কিশোরদেরকে লক্ষ্য করে। এমনকি অভ্যন্তরীণভাবে ও জনসাধারণের উদ্বেগের মুখে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার পরও, প্যারেন্টাল কনসেন্ট সংশ্লিষ্ট নীতিমালা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এর নির্মাতারা। তাদের অভিযোগ পত্রের হিসাবে, প্রাইভেসি লঙ্ঘন করে এমন ডিফল্ট সেটিং ও প্রতারণামূলক ইন্টারফেস ব্যবহার করেছে এপিক।
যা কিশোর ও শিশুসহ ফোর্টনাইটের বিভিন্ন ব্যবহারকারীকে প্রতারিত করেছে বলে জানান এফটিসি প্রধান লিনা খান। তিনি আরো বলেন অনলাইনে প্রাইভেসি লঙ্ঘন ও বিভিন্ন বিপজ্জনক ধাপ থেকে জনসাধারণকে, বিশেষ করে শিশুদের রক্ষা করা কমিশনের শীর্ষ অগ্রাধিকার। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিশু-কিশোরদের জন্য গেমের প্রাইভেসি সেটিংয়ে পরিবর্তন আনতে রাজি হয়েছে এপিক। পাশাপাশি, চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে যোগাযোগের সুবিধা ডিফল্ট হিসেবে বন্ধ থাকবে।
প্রতারণামূলক বিলিং অনুশীলন সম্পর্কিত আলাদা এক অভিযোগ নিষ্পত্তিতে, গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ সাড়ে ২৪ কোটি ডলার দেবে কোম্পানিটি। আর এমন পদক্ষেপ প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের তিনি বলতে চান এফটিসি এইসব বেআইনি অনুশীলন দমন করছে। গেমে থাকা এক ‘অপরিকল্পিত, অসঙ্গতিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বাটন কনফিগারেশনের’ কথাও উল্লেখ করেছে এফসিসি। এর মাধ্যমে অননুমোদিত কেনাকাটায় কয়েক মিলিয়ন ডলার আয়ের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
এফটিসির মতে একটি পৃথক নিশ্চিতকরণ পদক্ষেপ যোগ করতে গেমের নকশায় পরিবর্তন আনতে রাজি হয়নি কোম্পানিটি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, গেমে গোলযোগ সৃষ্টি, কেনাকাটা নিয়ে বেশিরভাগ গ্রাহকের পুনর্বিবেচনা ও কেনাকাটার সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা। এফটিসি আরো জানায়, অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই শিশু-কিশোরদের তথ্য সংগ্রহ এবং গেমে ডিফল্ট হিসেবেই ‘ভয়েস’ ও ‘টেক্সট’ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখার মাধ্যমে তাদেরকে হয়রানির মুখে ফেলায় সংস্থাটির ইতিহাসে রেকর্ড সাড়ে ২৭ কোটি ডলার জরিমানা দেবে এপিক।