বিগত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ পাঁচশত কোটি ডলার সমমূল্যের চোরাই বিটকয়েনসহ দুই আসামীকে আটক করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দু’জন হলেন ইলইয়া লিখটেনস্টাইন, বয়স ৩৪ বছর ও তার স্ত্রী হিদার মর্গান, বয়স ৩১ বছর। বিবিসি জানিয়েছে যে ২০১৬ সালে বিটকয়েনগুলো একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা হয়েছিল। সে সময় ওই এক লাখ ২০ হাজার বিটকয়েনের বাজার মূল্য ছিল সাত কোটি ১০ লাখ ডলার। মার্কিন কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার বিটকয়েন উদ্ধার করেছে।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলে যে তারা দুজন রাশিয়ান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক ছিলেন। রেকর্ড পরিমাণ চোরাই বিটকয়েন জব্দ ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করতে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, এবং জার্মানির আনশবাখের তদন্তকারীরা সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন। বিবিসি জানিয়েছে যে গ্রেপ্তারকৃত লিখটেনস্টাইন এবং মর্গানের বিরুদ্ধে আদালতে অর্থ পাচার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হবে। সেই সাথে তারা দোষী প্রমাণিত হলে দুজনেরই ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বিটফিনেক্স ২০১৬ সালে হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছিল।
উক্ত ঘটনাতেই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে সেই বিপুল পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরির ঘটনা ঘটে। মার্কিন বিচার বিভাগের ইতিহাসে এইটিই সবচেয়ে বড় অঙ্কের অর্থ উদ্ধারের ঘটনা। পরের বছরগুলোতে জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বিটকয়েনের দাম ও বেড়েছে। সেই সাত কোটি ১০ লাখ ডলারের বিটকয়েনের বাজারমূল্য এখন পাঁচশ কোটি ডলার। মর্গান একজন র্যাপ সংগীত শিল্পী। এর পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকা, লেখালেখি, ফ্যাশন ডিজাইনিং এর কাজেও নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। এক্ষেত্রে মর্গান নিজেকে পেশাদার ‘কর্পোরেট কোচ’ এর মাধ্যমে উপস্থাপন করতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগের দেওয়া এক তথ্য অনুযায়ী বিটফিনেক্স কম্পিউটার সিস্টেম অনুপ্রবেশ করে এক হ্যাকার অন্তত দুই হাজার অবৈধ লেনদেন করেন, তারপর নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা লিখটেনস্টাইনের একটি ডিজিটাল ওয়ালেটে সেই অর্থ পাচার করেন। ২০১৭ সালে মার্কিন তদন্তকারীরা বেআইনী লেনদেনের অভিযোগে আলফা-বে নামে একটি ওয়েবসাইট নষ্ট করে দেন। ডার্কওয়েবের ইবে নামে পরিচিত সাইটটির লেনদেন তালিকা হস্তগত হওয়ার পর তদন্তকারীরা আবিষ্কার করেন যে সাইটটিতে বিটফিনেক্স হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি যাওয়া বিটকয়েনের একটি অংশ বিনিয়োগ হয়েছে।
সে সময়ই তদন্তকারীদের আলফা-বে’র সঙ্গে লিখটেনস্টাইনের অ্যাকাউন্টের লেনদেন চোখে পড়ে। এক বিবৃতিতে হ্যাকিংয়ের শিকার প্রতিষ্ঠান বিটফিনেক্স জানিয়েছে যে পুরো তদন্তেই তারা সহযোগিতা করেছে এবং চুরি হওয়া বিটকয়েনগুলো উদ্ধার হওয়ায় তারা খুবই আনন্দিত হয়েছেন। মজার একটি বিষয় হচ্ছে মর্গানের লেখাগুলোর মধ্যে সম্প্রতি একটির শিরোনাম ছিল ‘টিপস টু প্রোটেক্ট ইওর বিজনেস ফ্রম সাইবার ক্রিমিনালস।’ বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘সাইবার অপরাধীদের কাছ থেকে ব্যবসাকে বাঁচানোর উপায়।’ ওই প্রতিবেদনের জন্য তিনি এক ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্রধানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেখানে সাইবার জালিয়াতি ঠেকানোর উপায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল।
উক্ত দম্পতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে বলা হয়েছে গেল পাঁচ বছরে দুজন বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ২৫ হাজার চোরাই বিটকয়েন পাচার করেছেন। অভিযোগে আরো রয়েছে যে তারা অর্থ পাচারে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে নানা উপায়ের সরনাপন্ন হয়েছেন। তারা কখনো ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছেন আবার কখনো ভিন্ন কোনো ক্রিপ্টো মুদ্রায় চোরাই বিটকয়েন পাল্টে নেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অধীনে ন্যাশনাল ক্রিপ্টোকারেন্সি এনফোর্সমেন্ট টিম গঠনের চার মাসের মাথায় এই ডিজিটাল সম্পদ জব্দ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটলো। আগের বছরে দলটি ২৩ লাখ ডলারের ক্রিপ্টোকারেন্সি আটকেছিল।
লিখটেনস্টাইন ও মর্গান একাধিক ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে অর্থ পাচারের চেষ্টা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগ লেনদেনগুলোকে কখনো কখনো মর্গানের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধের মাধ্যম হিসেবেও চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। অভিযুক্ত দু’জন গ্রেপ্তার হওয়ার পর সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কেনেথ পোলাইট জুনিয়র বলেন যে এই জব্দের ঘটনা প্রমাণ করে যে, সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ পাচার বা দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় অরাজকতা চালানোর জায়গা হতে দেবে না।