বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সাধারণত নিজস্ব অ্যালগরিদম গোপন রাখে। এ কারণেই বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক মাধ্যমগুলো কনটেন্টে বিদ্বেষ ও মিথ্যাচারের জন্য বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে। অ্যালগরিদম ব্যবসায়ের জন্য অন্তত গোপন তথ্য এবং এর বিস্তারিত প্রকাশ করলে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে দোহাই দিয়ে সমালোচনার মুখেও একাধিকবার অ্যালগরিদম সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা এড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এর মধ্যে রয়েছে মেটা ও অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেডের মতো শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে প্রথমবারের মতো আলিবাবা, টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স ও টেনসেন্টসহ চীনের প্রযুক্তি জায়ান্টরা নিজস্ব অ্যালগরিদমের বিস্তারিত তথ্য স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছে। ব্যবহারকারীর ডিভাইসের স্ক্রিনে কোন কনটেন্ট থাকবে এবং কনটেন্টগুলো কোন ক্রমানুসারে পর্দায় আসবে সেটিসহ বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করে দেয় প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদম।
জনস্বার্থে ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর অ্যালগরিদমের বিস্তারিত তথ্য উন্মুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হলেও চীন একই কাজে সফল হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে শোনা যাচ্ছে। সিএসির প্রকাশিত তালিকায় আলিবাবার মালিকানাধীন ই-কমার্স সাইট টাওবাও এর অ্যালগরিদমের বিস্তারিত তথ্যও আছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। মান্দারিন ভাষায় প্রকাশিত নথিপত্রে সিএসি জানিয়েছে যে টাওবাওয়ের অ্যালগরিদম ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট এবং আগের সার্চ ডেটার ভিত্তিতে ব্যবহারকারীদের নতুন পণ্য ও সেবা দেখায়।
প্রথম সারির বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের অ্যালগরিদমসহ মোট ৩০টি অ্যালগরিদমের তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে চীনের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ চায়না বা সিএসি। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের ডেটার যথেচ্ছা অপব্যবহার মোকাবেলার লক্ষ্যে অ্যালগরিদমের তালিকা ও বিস্তারিত নিয়মিত আপডেট করা হবে।
তবে চীনের গবেষণা সংস্থা ‘ট্রিভিয়াম চায়না’ প্রযুক্তি নীতিমালা গবেষণা বিভাগের প্রধান কেন্ড্রা শেফার বলছেন প্রকাশিত ডেটা কেবল দেখে বাইরের স্তরের বলে মনে হচ্ছে। পুরো অ্যালগরিদম জমা দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না বলে বিবিসিকে বলেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন প্রতিটি অ্যালগরিদমকে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়েছে, যেন সিএসি নির্দিষ্ট অ্যালগরিদমের ওপর নীতিমালা প্রয়োগে জোর দিতে পারে। বছর দুয়েক ধরেই নিজ দেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে কঠোর হয়েছে চীন সরকার।
এ বছরের মার্চ মাসে প্রযুক্তি সেবার অ্যালগরিদম নিয়েও নতুন আইন পাশ করেছে দেশটি। যদিও এই আইন সরকারের সুবিধা অনুযায়ী করা হয়েছে বলে ধরা হচ্ছে। নতুন আইনে অ্যালগরিদমের ‘রিকমেন্ডেশন’ গঠনে অংশ না নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে ব্যবহারকারীদের জন্য। এ ছাড়াও, জনমত গঠনে সক্ষম এবং সামাজিক পর্যায়ে সংগঠিত করার সক্ষমতা আছে এমন অ্যালগরিদমগুলোকে সিএসিতে নিবন্ধনের বিধান রাখা হয়েছে নতুন এই আইনে।
এছাড়াও শেফার অ্যালগরিদম নিবন্ধনের তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার ঘটনাকে চমকপ্রদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানান বিশ্বের আর কোনো দেশের ব্যাপারে তেমন তার জানা নেই, যেখানে একটি তালিকায় সব কোডের সেই অংশগুলো দেখতে পারা সম্ভব, যা কার্যত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য দেয়। অন্যদিকে, ইস্ট চায়না ইউনিভার্সিটি অফ পলিটিকাল সায়েন্স অ্যান্ড ল এর কম্পিটিশন ল রিসার্চ সেন্টার এর নির্বাহী পরিচালক ঝাই ওয়েইয়ের মতে, যা প্রকাশ করা হয়েছে তার চেয়ে আরও বেশি বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত জমা দেওয়া হয়েছে নিশ্চিতভাবেই।
মার্কিন প্রকাশনা ব্লুমবার্গকে তিনি জানান এতে ব্যবসার গোপন তথ্যও আছে, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব নয়। সংবাদমাধ্যম বিবিসি আলিবাবা, টেনসেন্ট, নেটইজ এবং বাইদুর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাতে সাড়া দেয়নি কেউই। এ প্রসঙ্গে বাইটড্যান্স ও বিবিসিকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হয়নি।