সম্প্রতি প্রযুক্তি অনেকটাই এগিয়ে, তবে ভূমিকম্প ও সুনামি চিহ্নিত করা যাবে এমন কোন প্রযুক্তি পূর্বে আবিষ্কৃত হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ বর্তমানে নিশ্চিত করেছে সাগরের তলদেশে ছড়িয়ে থাকা ইন্টারনেট কেবলের মাধ্যমে ভূমিকম্প নির্ণয় করা যাবে। গবেষকগণ সাগরতলের ইন্টারনেট কেবলের মাধ্যমে ভূমিকম্প চিহ্নিত করার কৌশলটি যুক্তরাজ্য ও কানাডার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী অপটিকাল-ফাইবার ব্যবহার করে যাচাই করে দেখেছেন। যুক্তরাজ্যের এনপিএল (ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি) এবং তাদের সহযোগীদের দাবি, ইন্টারনেট কেবলগুলো গভীর সমুদ্রের ‘সায়েন্টিফিক সেন্সর’ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।
সায়েন্স ম্যাগাজিনে সেই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলছেন যে এই কেবলগুলো দিয়েই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সমুদ্রের স্রোতে পরিবর্তনের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। বলেন এনপিএল গবেষক ড. জিসেপ্পি মাররা ভূপৃষ্ঠের ৭০ শতাংশই পানি, কিন্তু সাইসমিক স্টেশনগুলোর সবগুলোই স্থলভাগে। কারণ, সমুদ্রতলে স্থায়ীভাবে সেন্সর ইনস্টল করা খুবই কঠিন এবং ব্যয়বহুল কাজ। গবেষকগণ বলছেন যে সমুদ্রের তলদেশের নজর রাখার জন্য স্থায়ী সেন্সর যোগ করার প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হওয়ায় বৈশ্বিক পর্যায়ে এমন সেন্সরের সংখ্যা খুবই কম।
বিবিসি জানিয়েছে যে প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবরা, দ্য ব্রিটিশ জিওলজিকাল সার্ভে এবং ইতালির একটি গবেষণা সংস্থা এই গবেষণায় অংশ নিয়েছে। এই কৌশল আরও সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বলে উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। গভীর সমুদ্রের স্রোতপ্রবাহের ওপর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাবের ওপর নজর রাখা সম্ভব হবে বলে গবেষকগণ মনে করেন। ব্রিটিশ জিওলজিকাল সার্ভের ‘আর্থ সায়েসমোলজি’ দলের প্রধান ব্রায়ান ব্যাপ্টি বলেন যে এটি সমুদ্রের মাঝেই কাছ থেকে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
পাশাপাশি, ভবিষ্যতে সমুদ্র তলের আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ এবং সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিমাপের সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সমুদ্রের তলদেশে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে থেকে আরেক প্রান্তে ডেটা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেকগুলো অপটিকাল-ফাইবার কেবল ছড়িয়ে আছে। বিবিসি জানিয়েছে যে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের তলদেশে ছড়িয়ে থাকা ফাইবার-অপটিক কেবলের সংখ্যা ৪৩০টিরও বেশি। কেবলগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ ১৩ লাখ কিলোমিটার। ড. মাররা আরো বলেন যে যদি একই কৌশল আরও বেশি সংখ্যক কেবলের ওপর প্রয়োগ করা যায় তাহলে সমুদ্রতলের এই অবকাঠামোকে ভূমিকম্প ও সাগরের স্রোতসহ আরও অনেক কিছু চিহ্নিত করার বিশাল মাধ্যমে পরিণত করতে পারা সম্ভব।
ভূমিকম্প চিহ্নিত করার নেটওয়ার্কের ব্যপ্তি স্থলভাগ থেকে বিস্তৃত করে সমুদ্রের তলদেশে নিতে পারলে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং এর পরিবর্তনশীল আচরণ বোঝার সক্ষমতা আরও বাড়বে। স্থলভাগে অবস্থিত সাইসমোমিটারের মতই কেবল-ভিত্তিক সেন্সরের মাধ্যমে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল চিহ্নিত করা সম্ভব বলে গবেষকগণ অনুমান করছেন। গবেষকগণ জানিয়েছে যে কানাডার হ্যালিফ্যাক্স আর যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্ট, ল্যাঙ্কাশায়ারের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী অপটিকাল-ফাইবারের মাধ্যমে ভূমিকম্প এবং ঢেউ ও স্রোতপ্রবাহে পরিবর্তন চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
এক্ষেত্রে গবেষকগণ পুরো অপটিকাল কেবলের ছোট ছোট অংশগুলোকে আলাদা সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছে।