বছরের শুরু থেকেই খারাপ সময় চলছিল ক্রিপ্টো মুদ্রা খাতে। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে দরপতনের ঘটনায় পড়েছিল ক্রিপ্টো বাজারের বৃহত্তম দুই মুদ্রা বিটকয়েন ও ইথার। গেল বছরে ৬০ হাজার ডলারের বাজারমূল্য ছোঁয়া বিটকয়েনের দাম জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে নেমে এসেছিল ১৭ হাজার ৬০১ ডলারে; আর ইথারের দাম নেমে এসেছিল ৮৮০ ডলারে। কিন্তু এই ‘দুর্দিনের’ মধ্যেই ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের তথ্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন এর নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রকরা, যা বাজারে মার্জ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
সম্প্রতি আপগ্রেডের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইথেরিয়াম কয়েনের ব্লকচেইন। আসন্ন আপগ্রেডের সফল পরীক্ষার খবরে এক মাসের ব্যবধানে ক্রিপ্টো মুদ্রাটির শতভাগ দাম বেড়েছে। দরপতনের মাঝে পড়ার এক মাসের মাথায় ইথার মুদ্রার দাম বেড়েছে শতভাগ। একই সময়ে বিটকয়েনের দাম ৩১ শতাংশ বাড়লেও অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ফের অস্থিতিশীল বিটকয়েনের বাজার। ক্রিপ্টো বাজারে ইথারের দাম বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বহুল প্রতিক্ষিত মার্জ।
কথিত এই মার্জ এর ১৫ সেপ্টেম্বর কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে কেবল ইথেরিয়াম নেটওয়ার্কের বিদ্যুৎ খরচ কমবে না, নেটওয়ার্কের কার্যপ্রণালীর গতিও বাড়বে। এ প্রসঙ্গে ক্রিপ্টো লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ‘নেক্সো’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্টনি ট্রেনচেভ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে বলেছেন, যে ব্লকচেইনটি নিজেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হিসেবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করে, সেটি বরাবরই জনসাধারণের কল্পনাশক্তিকে আকৃষ্ট করবে।
তাই মার্জের আগে ইথার প্রুফ অফ স্টেকের দিকে যাওয়ার আগে পালে নতুন হাওয়া পাচ্ছে। গত বছরের নভেম্বর মাসের পর থেকে দুই লাখ কোটি ডলার হারিয়েছে ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার। কিন্তু ইথেরিয়াম নেটওয়ার্কে বহুল প্রতিক্ষিত আপগ্রেড শিগগিরই আসছে, এমন খবরের ফলে বাজারে প্রাণ ফিরছে। বাজারবিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে সিএনবিসি জানিয়েছে, ইথারের দাম শুক্রবারে এক হাজার আটশ ডলারের বেশি থাকলেও দাম সর্বোচ্চ দুই হাজার ডলারের আশপাশে গিয়ে ঠেকতে পারে।
২০২১ সালের নভেম্বরে সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড গড়েছিল বিটকয়েন ও ইথার। পরের মাসগুলোতে ক্রিপ্টো খাতের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়া, তারল্য জটিলতা এবং ব্যর্থ প্রকল্পসহ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ উঠিয়ে নেওয়ায় ধস নেমেছিল ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজারে। ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে মার্জকে। পুরো ব্লকচেইনটি মার্জ এ কার্যত কথিত ‘প্রুফ-অফ-ওয়ার্ক’ কার্যপ্রণালী থেকে ‘প্রুফ-অফ-স্টেক’ ব্যবস্থায় যাবে।
প্রুফ-অফ-ওয়ার্ক ব্যবস্থায় প্রতিটি লেনদেন যাচাই করে নতুন ইথার টোকেন কামাই করতে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় মাইনারদের। কিন্তু ‘প্রুফ-অফ-স্টেক’ ব্যবস্থায় মাইনাররা বিদ্যমান ‘ইথার ক্যাশ (cache) ব্যবহার করে লেনদেন নিশ্চিত করতে পারবেন এবং নতুন টোকেন উপার্জন করতে পারবেন। আর এতে বিদ্যুৎ খরচও অনেক কমে আসবে।