দেশের প্রায় সবগুলো শীর্ষ অনলাইন, দৈনিক ও মাসিক পত্রিকার প্রযুক্তি সাংবাদিকরা ইংরেজি ভাষায় একটি অদ্ভুত ইমেইল পেয়েছেন। ইমেইলের ব্যবহারকারীর নাম ছিল নায়াশা ফ্রিম্যান। তিনি ইমেইলে বলেন যে তিনি বাংলাদেশের এক প্রতিষ্ঠানের সাথে একটি অ্যাপ উন্নয়নের জন্য চুক্তি করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যাপটি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে তিনি চুক্তিটি বাতিল করেন এবং আগাম পরিশোধ করা অর্থের ৫০ ভাগ ও তাকে ফেরত দেয়া হয়নি। এরপর তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অসৎ বলে দাবি করেন এবং এরকম প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ না করার আহ্বান করেন।
মেইলে বিভিন্ন ঘটনার দিন তারিখের সঙ্গে আরও কিছু যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য রয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির ক্লায়েন্ট লিস্ট, একটি অডিও ফাইল যার শিরোনাম হোয়াটসঅ্যাপ অডিও, একটি টার্মিনেশন লেটার এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রের পিডিএফ কপি ও রয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সফটওয়্যার নির্মাতা ও সেবানির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস’ (বেসিস) এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মাত্র দুই দিন আগে আসা উক্ত মেইলে যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইমেইলের মধ্যে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি ক্লায়েন্ট লিস্টে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের তালিকায় রয়েছে সেগুলোর নাম লাল রঙে টাইপ করা, এ থেকেই বোঝা যায় প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া। তাদের কোম ফেইসবুক উপস্থিতিও নেই। এই তালিকা এবং চুক্তি বাতিলের চিঠি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে টাইপ করা ফাইল, চাইলে যে কারো পক্ষেই এটি তৈরি করা সম্ভব। আর ‘হোয়াটসঅ্যাপ অডিও’ নামে যে অডিও ফাইলটি রয়েছে, সেটি দু’জন ব্যক্তির ফোনালাপের রেকর্ড নয়, বরং একজন ব্যক্তির রেকর্ড করা অডিও ফাইল। মেইলে উল্লেখ করা বক্তব্যের ব্যক্তিই স্বকণ্ঠে রেকর্ড করেছেন।
এরপরে যেই ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আরো চমকপ্রদ। ২৪ ডিসেম্বর ভোর ৩টা ২০ মিনিটে ইংরেজি ভাষায় মেইল পাঠানো ব্যক্তি প্রায় ১২ ঘণ্টা পর ওই দিনই বেলা ৩টা ১২ মিনিটে পুনরায় মেইল করেন। আর এবারের ইমেইলটি একদম স্পষ্ট বাংলায়। কেবল মেইল নয়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুরোদস্তুর সংবাদ প্রতিবেদন লিখে পাঠিয়েছেন তিনি! বাঙালি কোনো সাংবাদিকের হাতেই তা লেখা বলে মেইলটি ধারণা করা হচ্ছে। উল্লিখিত মেইল দু’টি এসেছে এনওয়াই ডট ফ্রিম্যান অ্যাট জিমেইল ডটকম ঠিকানা থেকে। তথ্যপ্রযুক্তি ও আইআইজি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির বিষয়টি একেবারেই স্বাভাবিকভাবে ভেবে নিতে পারছেন না।
নায়াশা ফ্রিম্যানের প্রতিষ্ঠানের ওয়েব ঠিকানা জানাতে যোগাযোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ওই মেইলে অনুরোধ করা হয়, যাতে করে অভিযোগকারীর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর পরেও জবাব মেলেনি তার দিক থেকে। অনলাইন সার্চ করে এই নামে কোনো সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট বা লিংকডইন প্রোফাইলের হদিস পাওয়া যায়নি। সুমন আহমেদ সাবির বলেন যে কোনো দাপ্তরিক বিষয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের ডোমেইন থেকে ইমেইল পাঠানো নীতির মধ্যে পড়ে। ইন্ডাস্ট্রিরই কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতার ভিত্তিতে ব্যক্তিগত কারণে যোগাযোগ করলে তিনি জিমেইল সেবাই ব্যবহার করতেন।
কিন্তু এইরকম আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বেলায় যোগাযোগ অবশ্যই নিজের ডোমেইন থেকেই মেইল আসা উচিত। অভিযোগের মেইল পাওয়ার পর প্রেরকের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রযুক্তি বিভাগ ফিরতি ইমেইলে যোগাযোগ করে। এমনকি মেইলে উল্লিখিত দেশীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রযুক্তি বিভাগ। একই মেইল যারা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাউছার উদ্দীন। তিনি জানান এই মেইল ঘিরে বিভিন্ন প্রশ্নের উদয় তার মনেও হয়েছে।
উল্লেখিত দেশীয় প্রযুক্তির উদ্যোক্তা শুরুতেই প্রশ্ন করেন যে জিম্বাবুয়ের কেউ একজন এইরকম বাংলায় মেইল করছেন এটা কী বিশ্বাসযোগ্য কি না। এটা তা’হলে কার লেখা আর কেনই বা কেউ পাঠাবেন এমন মেইল সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বললেন, প্রায় দেড় বছর আগের একটি বিষয় নিয়ে এই সময়ে কারা এমন মেইল পাঠাতে পারেন একটু ভাবলেই সম্ভাব্য কারণ অনুমান করা যায়। একই ভুক্তভোগী কাউছার উদ্দিন ও এ বিষয়ে বিস্তারিত না বলে কেবল উপসংহার টানলেন, একটি ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ সংগঠনের নির্বাচনের আগে এই মেইল একটি খারাপ উদাহরণ হয়েই থাকবে।