ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়েস্ট ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট বা ডব্লিউইইই ফোরাম বলছে, কেবল এ বছরই ৫৩০ কোটি মোবাইল ফোন ই-বর্জ্যে পরিণত হবে। এর মধ্যে একটি মোবাইল ফোন ও রিসাইকেল বা পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। বিশ্বে প্রায় আটশত কোটির উর্ধ্বে মানুষ মোবাইল ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ই-বর্জ্যে পরিণত হওয়া মোবাইলের সংখ্যাও কম নয়। ইলেকট্রনিক পণ্যের তারে ব্যবহৃত কপার বা রিচার্জেবল ব্যাটারি নির্মাণে ব্যবহৃত কোবাল্টের মত ধাতু আসে খনি থেকে।
ডিভাইসগুলো রিসাইকেল করা না হলে অথবা নষ্ট ডিভাইস থেকে এসব দামি ধাতু সংগ্রহ করার উদ্যোগ ও চেষ্টা না থাকলে মূল্যবান ধাতুগুলো বর্জ্য হিসেবেই নষ্ট হয়। বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্ববাজারের ডেটা বিশ্লেষণ করে ই-বর্জ্যে পরিণত হতে যাওয়া বিপুল সংখ্যক ডিভাইসের এই সংখ্যা অনুমানের চেষ্টা করেছে ডব্লিউইইই ফোরাম। মোবাইল ফোন মালিকদের অনেকে পুরনো ডিভাইস রিসাইকেল করার বদলে নিজের কাছেই রেখে দিচ্ছেন বলেও উঠে এসেছে এ সংস্থার গবেষণায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশ সচেতনদের মাথাব্যথার নতুন কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী বিপুল পরিমাণ ই-বর্জ্য। ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাণে ব্যবহৃত যে পরিমাণ মূল্যবান ধাতু নষ্ট হয়, পরিবেশের ওপরও তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিবিসি বলছে যে বিশ্বব্যাপী মানুষের হাতে এখন এক হাজার ছয়শ কোটি মোবাইল ফোন আছে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে ইউরোপের নাগরিকদের কাছে থাকা ডিভাইসগুলোর এক-তৃতীয়াংশই আর ব্যবহৃত হচ্ছে না।
ডব্লিউইইই মহাপরিচালক প্যাসকেল লিরয় বলেন, মানুষ যেটা উপলব্ধি করতে পারছে না, সেটা হল, তুচ্ছ মনে হওয়া জিনিসগুলোরও অনেক মূল্য আছে এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে ভাবলে একযোগে এর আকার বিরাট। নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে ডব্লিউইইই জানিয়েছে, ওয়াশিং মেশিন থেকে শুরু করে ট্যাবলেট, কম্পিউটার ও জিপিএস ডিভাইসের মতো বৈদ্যুতিক পণ্য থেকে সৃষ্ট পাহাড় সমান বর্জ্যের আকার ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর সাত কোটি ৪০ লাখ টন করে বাড়তে থাকবে।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রতি বছর বিশ্বের মোট ই-বর্জ্যের মাত্র ১৭ শতাংশ পুরোপুরি রিসাইকেল করা হয়। ২০২৪ সালের মধ্যে এই হারকে ৩০ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন আইটিইউ। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাটেরিয়াল ফোকাসের সূত্র অনুসারে বিবিসি লিখেছে, কেবল যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ঘরেই ৫৬৩ কোটি পাউন্ড দামের সচল বৈদ্যুতিক পণ্য অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে বলে ধারণা করা হয়।
এর সম্ভাব্য সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্যাসকেল লিরয়। বিবিসিকে তিনি বলেন, সুপারমার্কেটে বসানো কালেকশন বক্স, নতুন পণ্য সরবরাহের সময় পুরনো ও নষ্ট পণ্য নিয়ে নেওয়া এবং আকারে ছোট ই-বর্জ্য পোস্ট অফিসের মাধামে ফেরত নেওয়া এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে। ২০২২ সালে এসে ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে মূল্যবান ধাতুর বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা।
সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে এ বছরের শুরুতেই নতুন পণ্য নির্মাণের জন্য ই-বর্জ্য বা ফেলে দেওয়া ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে প্রয়োজনীয় মূলবান ধাতব আহরণ নিয়ে প্রচার শুরু করেছে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইট অফ কেমিস্ট্রি। ডব্লিউইইই ব্যবস্থাপক ম্যাগডালেনা কারেতানোভিচ বলেন, নতুন ইলেকট্রনিক ডিভাইস অথবা অন্যান্য যন্ত্রাংশ নির্মাণে ব্যবহার করা যেতে পারে এই ডিভাইসগুলো ই-বর্জ্য থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল যেমন, উইন্ড টার্বাইন, বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির ব্যাটারি বা সোলার প্যানেল হতে পারে এখান থেকে।
কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং পরিবেশবান্ধব সমাজ ব্যবস্থা গঠনের জন্য এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ।