আমদানি করা ল্যাপটপ কিনতে গ্রাহকদের এবার বাড়তি খরচ করতে হবে। দেশীয় কম্পিউটার উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি সুবিধা দিতে বাংলাদেশ অর্থমন্ত্রী আমদানি করা ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। মূসক বাড়ানোর পর আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মোট করভার ৩১ শতাংশ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ এর অর্থ বছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একথা বলেন।
এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উক্ত প্রস্তাবে সই করেন। তিনি বলেন ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে মূসক অব্যাহতি রয়েছে। ফলে দেশীয় কম্পিউটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ল্যাপটপের পাশাপাশি অপটিকাল ফাইবার আমদানিতেও অর্থমন্ত্রী সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি কারণ ব্যাখ্যা করে দেশের অপটিকাল ফাইবার নির্মাণ শিল্পকে রক্ষা করার কথা বলেছেন।
দেশে বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। পণ্যটি আমদানিতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। দেশীয় শিল্পের অধিকতর প্রতিরক্ষণের লক্ষ্যে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল আমদানিতে ৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ল্যাপটপ আমদানিতে কর বাড়ানোর প্রস্তাবের সাথে হার্ডওয়্যারের দেশীয় উৎপাদন খাতে ভ্যাট প্রত্যাহার ও রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি। বাজেট বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে দেশীয় কম্পিউটার/ল্যাপটপ ও আইসিটি পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিরক্ষণে কম্পিউটারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও আইসিটি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারনের প্রস্তাব ও দেয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও অর্থমন্ত্রী ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কম্পিউটার, প্রিন্টার ও টোনার কার্ট্রিজ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন। সেই সাথে বাজেট বক্তব্যে তথ্য প্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, চার্জার ও ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিসপ্লের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। পণ্য আমদানিতে কর বাড়িয়ে দেশীয় উৎপাদনের কাঁচামালে রেয়াতি সুবিধার প্রস্তাবের ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান যে আইসিটি খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে সেলুলার ফোন উৎপাদন উৎসাহিত করা জরুরি।
এবং সেই সাথে সংযোজন শিল্প প্রসারে উক্ত শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা আরও বিনিয়োগবান্ধব ও যৌক্তিকীকরণ করা হয়েছে এবং দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণে ফিচার ফোন আমদানিতে শুল্কহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য আরও প্রস্তাব রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য কর কমোনোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তব্যে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়ে অর্থমন্ত্রী স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের জন্য কেবল আয়কর রিটার্ন দাখিল ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রকার রিপোর্টিং এর বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি এবং স্টার্ট-আপ কোম্পানির লোকসান “নয় বছর পর্যন্ত সমন্বয় এর বিধান” প্রস্তাব করেন।
দেশে বর্তমানে আড়াই হাজারের বেশি স্টার্টআপ রয়েছে এবং এই খাতে প্রত্যক্ষ্ ও পরোক্ষভাবে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ২০২৫ সালে আইসিটি খাতের রপ্তানি পাঁচ শত কোটি মার্কিন ডলারে নেওয়ার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সফল করতে এই খাতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেও তিনি বক্তব্যে বাজেটের আকার উল্লেখ করেননি। বর্তমান সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ এবং বাংলাদেশ সরকার এ খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার এর জন্য স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যয় সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার ও টার্নওভার করহার ০.৬০ শতাংশ এর পরিবর্তে ০.১ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।