সম্প্রতি মেটা দেশে অনাবাসী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রদান করেছে। গত পাঁচ মাসে মেটা কোম্পানি সব মিলিয়ে সাড়ে ১২ কোটি টাকা ভ্যাট প্রদান করেছে। প্রায় দুই বছর ধরে দর-কষাকষির পর গত মে মাস থেকে অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট নিবন্ধন দেওয়া শুরু করা হয়। মূলত মেটা বেশিরভাগ আয় বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমেই করে আসছে। সেই আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে রেখে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। এই পর্যন্ত মোট সাতটি অনাবাসী প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে গুগল এশিয়া প্যাসিফিক লিমিটেড, মাইক্রোসফট, আমাজন ওয়েব সার্ভিস লিমিটেড, নেটফ্লিক্স এবং মেটা। তবে সব মিলিয়ে মেটাের তিনটি কোম্পানি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহন করেছে। কোম্পানি তিনটি হলোঃ মেটা আয়ারল্যান্ড লিমিটেড, মেটা পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও প্রযোজনা সংস্থা নেটফ্লিক্স গত সপ্তাহে নিবন্ধন নেওয়ায় এখনো মাসিক ভ্যাট রিটার্ন দিতে হয়নি। এবার এসব জনপ্রিয় অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের কে কত ভ্যাট দিল সেগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা যাক।
সবচেয়ে বেশি দিয়েছে মেটা আয়ারল্যান্ড লিমিটেড। এটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি গত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৫ মাসে সাড়ে ১২ কোটি টাকা ভ্যাট দিয়েছে। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে মেটা আয়ারল্যান্ড সর্বোচ্চ ২ কোটি ৬৪ লাখ ভ্যাট দিয়েছে। মেটাের বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান গত পাঁচ মাসে যেটুকু ভ্যাট প্রদান করেছে সেগুলা নামমাত্র, সেগুলো পরিমাণে দুই লাখ টাকার মতো। ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে যে বিভিন্ন সেবার মধ্যে এ দেশে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করে মেটা। তাই তাদের কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি ভ্যাট পাওয়া গেছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভ্যাট যে কোম্পানি দিয়েছে সেটি হচ্ছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক গুগল এশিয়া প্যাসিফিক। প্রতিষ্ঠানটি ছয় মাসে মোট ভ্যাট প্রদান করেছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। গত মে মাস থেকে এই প্রতিষ্ঠান ভ্যাট প্রদান করে যাচ্ছে। এরপর আমাজন ওয়েব সার্ভিসের মোট ভ্যাটের পরিমাণ দুই কোটি টাকার মতো ছিল। বিশ্বের অন্যতম বড় প্রযুক্তি জগতের জায়ান্ট গুগল গত মাসে ভ্যাট রিটার্ন দিয়েছে। এরপর জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ মাসের বকেয়া ভ্যাট হিসেবে ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। গুগল, আমাজন, মেটাসহ অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো (যাদের এখানে স্থায়ী কার্যালয় নেই) এ দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ নিজেদের নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে।
প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশ বাংলাদেশে মেটা, গুগল, আমাজন ও নেটফ্লিক্সের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা অংশীদার মামুন রশীদ প্রথম আলোকে বলেন যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট বিভাগের চেষ্টায় এসব অনাবাসী প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। যদিও তিনি প্রথম দিকের আলোচনায় আইনি জটিলতার কথা জানিয়েছিলেন, এরপরে তৎকালীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান তা সমাধানের উদ্যোগ নেন। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানতে পারে যে এ দেশে ব্যবসা করতে এলে সরকার সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে।
গুগল, আমাজন, নেটফ্লিক্স অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সেবা নিয়ে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড অথবা অন্য কোন উপায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে থাকেন। তখন আপনাআপনিই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখে। ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে জানান যে দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বড় বড় সব অনাবাসী কোম্পানি ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় চলে আসছে। তিনি বলেন যে এসব অনাবাসী প্রতিষ্ঠান যাতে সহজে ভ্যাট ফেরত ও ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করতে পারে, সেই বিষয়টিকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন ধীরে ধীরে স্বচ্ছতার দিক এগিয়ে যাচ্ছে। গত জুলাই মাসে বিশ্বের অন্যতম বড় টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট ভ্যাট নিবন্ধন নেয়। কিন্তু কয়েক মাস তারা ভ্যাট ফেরত দেয়নি। চার মাস সময় নিয়ে তারা গত মাসে এক সঙ্গে চার মাসের ভ্যাট রিটার্ন দিয়েছে।
গত ২৩ মে গুগল প্রথম অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছিল। এরপর আমাজন, মেটা একই পথে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে।