Reading Time: 3 minutes

বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেই শীর্ষস্থানীয় চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনটেল ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য তৈরি আর্ক জিপিইউ বাজারজাত করতে যাচ্ছে। বিগত বছরেই ইনটেল ৪০ লাখের বেশি জিপিইউ বিক্রির কৃতিত্ব নিয়েছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ওয়ার্কস্টেশন জিপিইউগুলো বাজারে আসছে। ইনটেল গ্রাফিক্সের ভাইস-প্রেসিডেন্ট একটি আর্ক জিপিইউ এর ছবি টুইট করলেও সেটি বাদে ইনটেল মডেলভেদে এর দাম, কোথায়, কবে কিনতে পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। ইনটেল আর্ক জিপিইউগুলোর কার্যক্ষমতা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে খুব কম তথ্যই দিয়েছে।

তবে ব্যবহারকারীরা জিপিইউগুলো থেকে কী প্রত্যাশা করতে পারেন সে সম্পর্কে ফাঁস হওয়া তথ্য-সারণী থেকে বিশাল বড় ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি ইনটেল পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাটলমেইজ এবং সেলেস্টিয়াল জিপিউই বাজারজাত করার আনুমানিক সময়ও জানিয়েছে। ব্যাটলমেইজ নকশা জিপিইউ বাজারে আসবে ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের ভিতরেই এবং সেলিস্টিয়াল বাজারে আসবে ২০২৪ সাল বা তার পরে। ব্যাটলমেইজ জিপিইউগুলো ইনটেলের মিটিওর লেক প্রসেসরের সঙ্গে সমন্বিত হবে। এ ছাড়াও ইনটেল জিপিইউ সংশ্লিষ্ট প্রোজেক্ট এন্ডগেইম এর কথাও বলেছে।

বিস্তারিত না জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলছে যে প্রোজেক্ট এন্ডগেইম এমন একটি সেবা হবে যা যে কোনো সময়ে অ্যাক্সেস করা যাবে এবং লো-লেটেন্সি কম্পিউটিং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আর্ক জিপিইউ এর সেবা দেবে। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট আর্স টেকনিকা বলছে যে নতুন সেবাটি এনভিডিয়ার জিফোর্স নাও এর মতো ক্লাউড গেইমিং সেবা হবে নাকি ওয়ার্কস্টেশন সংশ্লিষ্ট কোনো সেবা হবে, সে বিষয়টিও পরিষ্কার নয় বলে। আর ব্যাটলমেইজ ও সেলিস্টিয়াল উভয়ের নকশাই আগের মডেলের তুলনায় আরো উন্নত হবে। তবে বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপরীতে নতুন নকশার জিপিইউগুলো কেমন সাড়া পাবে সেটি জানতে এনভিডিয়া এবং এএমডি’র নতুন জিপিইউগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

আর্স টেকনিকা জানায় যে প্রতিষ্ঠানটি এ বছরে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ এবং ওয়ার্কস্টেশন লাইনআপে ৪০ লাখের বেশি জিপিইউ বিক্রির পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তাতেও বাজারের চাহিদা মিটবে না বলে সাইটটি মন্তব্য করে। বাজার বিশ্লেষকদের দেওয়া তথ্য বলছে ২০২০ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এনভিডিয়া এবং এএমডি মিলে চার কোটি ৭০ লাখ ডেস্কটপ জিপিইউ বিক্রি করেছিল। আর উক্ত হিসাবে ল্যাপটপ কম্পিউটারে ব্যবহৃত জিপিইউ ধরাই হয়নি। তারপরও ২০২১-এ চিপ সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ইনটেল জিপিইউ বাজারে নতুন বিকল্প ডিভাইস উন্মুক্ত করলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও সার্বিকভাবে জিপিইউ ঘাটতি নাও মিটতে বলে আর্স টেকনিকা মন্তব্য করেছে।

২০২১ এর শেষের দিকে রয়টার্স এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে ইনটেল আরো ছোট কিন্তু উচ্চ গতির কম্পিউটার চিপ তৈরির ক্ষেত্রে তাদের হারিয়ে যাওয়া জনপ্রিয়তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কম্পিউটার চিপ গবেষণায় অগ্রগতি নিয়ে কথা বলছে ইনটেল। ক্রমশ ছোট হতে থাকা আকার আর উচ্চ গতির কম্পিউটার চিপের বাজারে আগামী এক দশকে শক্ত অবস্থান গড়তে প্রতিষ্ঠানটি নতুন গবেষণায় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে ইনটেলের অগ্রগতি এখনও গবেষণা নিবন্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে, প্রতিষ্ঠানটি এখনো কোনো প্রোটোটাইপ দেখায়নি।

১৯৭১ সালে ইনটেল সর্ববৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়াও এটি মাইক্রোপ্রসেসরের এক্স৮৬ সিরিজের আবিষ্কারক হিসেবে পরিচিত। প্রসেসরটি মূলত ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৬৮ সালের ১৮ই জুলাই ইনটেল প্রতিষ্ঠিত হয়। কম্পিউটার প্রসেসর তৈরির পাশাপাশি ইনটেল মাদারবোর্ড চিপসেট, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কন্ট্রোলার, ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট, ফ্ল্যাস মেমোরি, গ্রাফিক্স কার্ড, সংযুক্ত প্রসেসর এবং কম্পিউটারের আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় টুলস তৈরি করে এসেছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

এরপর ইন্টেল বছরগুলোতে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) এবং ‘স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের কাছে বাজারের শীর্ষ উৎপাদকের অবস্থান হারিয়েছে যেটা প্রায় সকলেরই জানা। বর্তমানে ইনটেল যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিকোতে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শনিবার কম্পিউটার চিপ নিয়ে গবেষণায় তাদের নিজেদের অগ্রগতি দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটার চিপের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং একটি যন্ত্রাংশ আরেকটির উপর বসানোর মত একাধিক নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

ইনটেল প্রধান প্যাট গেলসিঙ্গার স্যান ফ্রান্সিসকোর সম্মেলনে ২০২৫ সালের মধ্যে বাজারে শীর্ষ উৎপাদকের অবস্থানে ফেরার বাণিজ্যিক পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তবে রয়টার্স জানিয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটি জনসম্মুক্ষে যে গবেষণা প্রতিবেদন দেখিয়েছে সেটি থেকে ২০২৫ সালের পরবর্তী পরিকল্পনার ধারণার সাথে প্রায় অনেকটাই মেলে। রয়টার্স বলছে যে সম্মেলনে ইনটেল যে গবেষণা প্রতিবেদনগুলো দেখিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিকটিতে রয়েছে একাধিক ট্রানজিস্টর এবং ফিচারগুলো একটি অন্যটির উপরে বসিয়ে সাজানো হয়েছে।

ইনটেল কম্পিউটার চিপের গতি ও ক্ষমতা উভয় বাড়াতে দ্বিমাত্রিক চিপের বদলে ত্রিমাত্রিক কাঠামোতে চিপের ‘টাইল (tile)’ বা ‘চিপলেট (chiplet)’  একটি আরেকটি উপরে বসিয়ে স্ট্যাকিং (stacking) করার পরিকল্পনা করেছে। ইনটেল জানিয়েছে যে ওই প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার চিপের টাইলগুলো স্ট্যাক করে ‘টাইল’গুলোর মধ্যে ১০ গুণ বেশি সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব। অর্থাৎ, এই প্রক্রিয়ায় আরও জটিল কাঠামোতেও টাইল সাজানো সম্ভব। ট্রানজিস্টরগুলোকে কম্পিউটার চিপের মূল উপাদান হিসেবে বিবেচনা কর হয়। লক্ষ লক্ষ এই ট্রানজিস্টারগুলো ডিজিটাল লজিকের ১ ও ০ এর সিগনালগুলো ঠিক করে দেয়।

গেল পাঁচ দশকে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমেই কম্পিউটার চিপের গতি বেড়েছে। অর্থাৎ, চিপের গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ট্রানজিস্টরের ভূমিকা ব্যাপক। ইনটেল আশা করছে যে উক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কম্পিউটার চিপের যে কোনো নির্দিষ্ট অংশে স্থাপনযোগ্য ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হবে। ইনটেল পরিচালক এবং মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার পল ফিশার বলেছেন যে যন্ত্রাংশগুলো তারা একটির উপর আরেকটির অবস্থান প্রদান করে তৈরি করছেন এবং ভিতরকার সংযোগ দূরত্ব কমিয়ে বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এতে খরচ তো কমবেই, সাথে পারফর্মেন্সও বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.