মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক ও প্যারাঅলিম্পিক কমিটি নিজের ব্যক্তিগত স্মার্টফোন বাদ দিয়ে ‘বার্নার ফোন’ নিয়ে যেতে ক্রীড়াবিদদের অনুরোধ করেছে। এই বছরের আগামী মাসেই চীনে শীতকালীন অলিম্পিক শুরু হতে যাচ্ছে। চীনে থাকাকালীন সম্ভাব্য ডিজিটাল নজরদারি সম্পর্কে ক্রীড়াবিদদের সতর্ক করার জন্য গত বছর দুবার এই পরামর্শ পাঠানো হলেও এ নিয়ে প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জ সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই বুলেটিনে বলা ছিল প্রত্যেকের প্রতিটি ডিভাইস, যোগাযোগ, লেনদেন এবং অনলাইন ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে যে প্রত্যেকের ডিভাইসগুলোয় ক্ষতিকারক সফ্টওয়্যার ঢুকিয়ে দেওয়া হতে পারে যার চীন থেকে চলে আসার পরও জের টানতে হতে পারে। ওয়াল স্ট্রিট জর্নালের প্রতিবেদন অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডস এ এমন সতর্কবাণী প্রকাশ করেছে। বার্নার ফোন হচ্ছে সস্তার মোবাইল ফোন যেটি সাময়িক ব্যবহারের জন্য কেনা হয় এবং ব্যবহারের পরপরই সাধারণত ফেলে দেওয়া যায়। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট কমিটির বিশেষ এই ভয় ভিত্তিহীন নয় বলেই উল্লেখ করেছে।
এর আগে ২০১৯ সালে চীন গোপনে জিনজিয়াং অঞ্চল ভ্রমণকারী পর্যটকদের ফোনে স্পাইওয়্যার ইনস্টল করার চেষ্টা করেছে। দেশটির মুসলিম জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর কখনো সেখানে কারাবাস এবং নির্যাতনের শিকার হয়। অসম্ভব নজরদারীর আওতায় থাকা ওই অঞ্চলটি চীনের উইঘুর জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। গবেষণা গ্রুপ সিটিজেন ল্যাব চীনের মাই২০২২ অলিম্পিক অ্যাপটি পরীক্ষা করেছে এবং দেখা গেছে এটি নিরাপত্তা ত্রুটিতে পরিপূর্ণ। ফলে, এই অ্যাপটি ইনস্টল করলে এর ফাঁকফোকর ব্যবহার করে গোপনীয়তা লঙ্ঘন, নজরদারি এবং হ্যাকিং করা সম্ভব।
অলিম্পিকে অংশগ্রহনকারী কর্মীদের এই অ্যাপটির ইনস্টল করা বাধ্যতামূলক করেছে চীন। মূলত চীনের জনগন বাইরের দেশের সংযোগহীন থাকা প্রধান এবং গুরুতর সমস্যা। সেখানে ব্যবহারকারীদের বাইরের কোন অ্যাপ্লিকেশন কিংবা অ্যাপ ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। তবে চীনের সরকার ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসির উপর কড়া নজরদারি করছেন। সরকারের চোখে ফাঁকি দিয়ে চীনের জনগন বাইরের কোন সামাজিক মাধ্যমে কোনভাবেই কানেক্ট হতে পারবেন না। যার ফলে সেখানকার ডেভেলপাররা নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে ব্যবহারকারীদের জন্য।
ক্রীড়াবিদরা সম্ভবত তাদের মোবাইল ফোনের ওপর নির্ভর করবেন তাদের বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য। এই কাজগুলো বার্নার ফোনে জটিল হতে পারে। এছাড়াও অল্প সময়ের ব্যবহার উপযোগী এই ফোনগুলোয় মোবাইল ডেটা, টেক্সটিং এবং কলিংয়ের সীমা নির্ধারিত থাকে। চীন অবশ্য একাধিকবার নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, ক্রীড়াবিদ এবং সাংবাদিকরা সে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে সেন্সরবিহীন অ্যাক্সেস পাবেন। তবে, দেশটি নির্দিষ্ট কোনো সাইট বা সেবা ব্লক করবে কিনা সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। এর আগে ‘বেইজিং ২০০৮’ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময়েও মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ চীনগামী যে কোনো পর্যটকের জন্য একই পরামর্শ দিয়েছিল।
তবে এবার পরিস্থিতি পুরোটাই ভিন্ন, কারণ কোভিড-১৯ নিয়ে কড়াকড়ির অংশ হিসেবে চীন এ বছরের শীতকালীন অলিম্পিকে যাবতীয় বিদেশী দর্শক নিষিদ্ধ করেছে।