ফেসবুক কোম্পানি তাদের নাম পরিবর্তন করেছে গতকাল। ফেসবুক এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রেখেছে “মেটা”। অনেকেই এটি সন্দেহ করতে পারেনি কারন তাদের মেটাভার্স নামে আগামী একটা প্রোডাক্ট আনার পরিকল্পনা করেছিল ফেসবুক (বর্তমানে মেটা)। কিন্তু শেষমেশ দেখা গেল মেটাভার্সের একাংশই এই নামে প্রকাশ পেয়েছে। এই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ফেসবুক তাদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি এবং তাদের কার্যক্রমের আমূল পরিবর্তন জনগনের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কেন এই নামের পরিবর্তন?
বিগত সময়ে ফেসবুকের ঘাড় থেকে ঝামেলা যেন নামছেই না। একের পর এক আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক। এর কারন খুবই সোজা। বর্তমান সময়ে লাগামহীনভাবে চলা কয়েকটি খলনায়কোচিত কোম্পানিগুলির মধ্যে ফেসবুক (বর্তমানে মেটা) একটি। মানুষের গোপনীয়তা ভঙ্গ থেকে শুরু করে কিশোরদের মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত করাসহ বিভিন্নরকম সমস্যার মূলে রয়েছে ফেসবুক (বর্তমানে মেটা)। ফেসবুকের (বর্তমানে মেটা) প্রাক্তন এক কর্মচারী কোম্পানির ভিতরকার সব কার্যক্রম এর প্রমাণ ফাঁস করার পর বিস্তারিতভাবে পরে বিষয়টির প্রতিবেদন গনমাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও ওয়াশিংটন পোস্ট জানান যে মহামারি চলাকালীন সময়ে ভ্যাক্সিনের কিছু ভুল তথ্য ছড়ানো সম্পর্কিত সবরকম তথ্য ফেসবুক গোপন রেখেছে।
এছাড়াও জঙ্গীবাদ প্রশ্রয় দেয়া এবং রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়াতে সাহায্য করাতে ফেসবুক সমালোচনার মুখে পড়েছে। মূলত, ফেসবুক (বর্তমানে মেটা) এইসব সমস্যা মোকাবেলায় ব্যর্থ, বরং এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ফেসবুক ইচ্ছে করেই এসব সমস্যার সমাধান করতে চায় না, কারন এতে তাদের লাভের ঘাটতি হতে পারে। এমন অবস্থায় তাদের প্রয়োজন হয়েছিল কয়েকটি জিনিসের। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মিডিয়া হতে তাদের বিরুদ্ধে ঋনাত্নক প্রচার চাপা দেয়া এবং আরেকটি হচ্ছে মানুষের মাঝে একটি ব্র্যান্ড ইমেজ গঠন করা। মূলত সম্পূর্ণ ব্যাপারটিকে অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা ব্র্যান্ড ওয়াশিং হিসেবে দেখছেন। যার অর্থ হচ্ছে মিডিয়ায় নতুন নামের মাধ্যেম নিজেদের কূকর্ম চাপা দেয়া। তাছাড়া ফেসবুকের (বর্তমানে মেটা) “প্ল্যান বি” ও বলা যায় এটিকে।
নাম পরিবর্তনের ফলে যা হবে
নতুন নামের ফলে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কোন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা। বরং, তাদের ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে তাদের। অর্থাৎ, বর্তমান সমস্যাগুলির সমাধান না করেই তারা নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আনার চাহিদা প্রকাশ করছে। যদিও বিগত সময়ে তারা অনেক সমস্যা সমাধানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল কিন্তু তা কিছুই করেনি। বরং, আরো সহিংসতা, জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ, গুজব বেড়েই চলছে ফেসবুক প্লাটফর্মে। যখন নতুন ব্র্যান্ড মেটা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হবে তখন কেউ বুঝবে না যে এটি ফেসবুক দ্বারা হচ্ছে। এতে করে তাদের পূর্বের সব কূকর্ম ঢাকা পড়ার সম্ভাবনা আছে। মোট কথা, কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কূকর্ম মুছে দেয়ার উদ্দেশ্যেই কোম্পানির নামের এ পরিবর্তন।
আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের নতুন একটি প্রোডাক্ট মেটাভার্স যেটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক জোড়ালোভাবে তাদের ব্র্যান্ডের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা। মেটাভার্স হচ্ছে ফেসবুক (বর্তমানে মেটা) এর নতুন একটি প্রোডাক্ট যার উদ্দেশ্য তাদের দুইটি ইতোমধ্যে থাকা প্রোডাক্ট ফেসবুক এবং অকুলাসের সংমিশ্রণে একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা। যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষকে একত্র হতে দিবে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটির ইতিহাস ভাল নয়। তার মধ্যে এমন একটি প্রোডাক্ট প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে চমকপ্রদ হলেও ব্যবহারকারীদের জন্যে বেশি একটা সুফল বয়ে আনবেনা বলে গবেষকরা মনে করেন।