ডেটা ট্র্যাকিং টুল হিসেবে গবেষকদের কাছে “ক্রাউডট্যাঙ্গল” টুলটির বিশেষ দরকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভাইরাল হওয়া পোস্ট থেকে শুরু করে ভুয়া তথ্যের প্রচার অনুসরণ করতে টুলটি ব্যবহার করেন গবেষকরা। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টের তথ্য সংগ্রহ করতে গবেষকরা যে ক্রাউডট্যাঙ্গল টুল ব্যবহার করেন, মূল কোম্পানি মেটা তা বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সহজ করে বলতে গেলে ক্রাউডট্যাঙ্গল হচ্ছে ফেসবুকের মালিকানাধীন একটি ডেটা ট্র্যাকিং টুল।
যার মাধ্যমে সংবাদকর্মী, গবেষক, তথ্য যাচাইকারীরা প্ল্যাটফর্মতে আলোচনার শীর্ষে থাকা বিষয়বস্তু নিয়ে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন লেখার সুযোগ পেতেন। তবে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ডেটা সংগ্রহ করে না ক্রাউডট্যাঙ্গল। বরং পুরো প্ল্যাটফর্ম থেকে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে প্রচারিত পোস্টগুলোর লাইক, শেয়ার, ভিউ, কমেন্ট এবং রিঅ্যাকশনের তথ্য সংগ্রহ করে। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে যে মেটা টুলটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আর ইতোমধ্যে এর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।
ক্রাউডট্যাঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই লেখক ও কলামিস্ট কেভিন রুস বলেছিলেন যে ফেসবুকে ডানপন্থি খবরের সূত্রগুলোর পোস্টেই ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া বেশি থাকে। ক্রাউডট্যাঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে মেটায় অভ্যন্তরীণ ডেটা যুদ্ধ চলছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে এ বিষয়ে ফেসবুকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। বিভিন্ন সময়ে মেটার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করতে ক্রাউডট্যাঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের উপর গবেষকরা নির্ভর করেছেন।
গত বছরের জুলাই মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কেভিন রুস বলেছিলেন, ডেটা ট্র্যাকিং টুলটি থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের মধ্যে কোনগুলো জনসাধারণ বা গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, সে প্রশ্নে মেটার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যেই মতবিভেদ আছে। ফেসবুকের নিউজ ফিড বিভাগের প্রধান জন হিগম্যান কেভিন রুস ক্রাউডট্যাঙ্গল নিয়ে মেটার অভ্যন্তরীণ ডেটা যুদ্ধের কথা বলার পর এক টুইটার থ্রেডে তার পর্যবেক্ষণ ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন।
২০১৬ সালে ফেসবুক ক্রাউডট্যাঙ্গল কিনেছিল। ডেটা ট্র্যাকিং টুলটি কেনার সময়ে কোম্পানিটি বলেছিল, এই টুলটি যে পোস্ট বা তথ্যগুলো আসলেই গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো সবার সামনে নিয়ে আসতে, পাঠক ও দর্শকদের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করতে এবং আসল ইনফ্লুয়েন্সারদের চিহ্নিত করতে’ প্রকাশকদের সহযোগিতা করবে। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে জানা যায় যে ভোটারদের অধিকারবিষয়ক সংগঠন কমন কজ এই টুলটি ব্যবহার করেই ভুয়া তথ্য প্রচার করছে এমন পোস্টগুলো তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিল।
ক্রাউডট্যাঙ্গল ফেসবুক ছাড়াও মেটার সাথে সংযুক্ত অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার থেকেও ফেইসবুক পোস্টের প্রচার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। ব্লুমবার্গ আরো জানায় ফেব্রুয়ারি মাসেই মেটা ক্রাউডট্যাঙ্গল বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তবে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের “ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট” আইনে বিপাকে পড়ার শঙ্কায় কোম্পানিটি মাঝপথে সেই প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল। এখন ক্রাউডট্যাঙ্গল বন্ধ করার প্রক্রিয়া আবারও পুরোদমে শুরু হয়েছে।
টুলটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত চালু থাকবে বলে মেটার এক মুখপাত্র ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন। পাশাপাশি, ফেসবুক গবেষকদের ‘আরও মূল্যবান’ টুল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জ ক্রাউডট্যাঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ব্র্যান্ডন সিলভারম্যান এ ক্ষেত্রে ডেটা শেয়ারের পক্ষেই ছিলেন বলে জানিয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে সিলভারম্যান মেটা হতে অব্যাহতি নেন। কেভিন রুস ক্রাউডট্যাঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডানপন্থি খবরের সূত্রগুলোর শীর্ষ দশের একটি তালিকা বানিয়েছিলেন।
তবে উক্ত তালিকা নিয়ে হিগম্যানের বক্তব্য ছিল যে রুসের এনগেজমেন্ট ডেটা সঠিক হলেও উক্ত তালিকা বেশিরভাগ মানুষ ফেসবুকে কী বেশি দেখে, তার সঠিক উপস্থাপন করে না। তার বদলে কোন পোস্টগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছায়, কেবল সেই ডেটার মাধ্যমে সঠিক পর্যালোচনা সম্ভব বলে হিগম্যান তার মন্তব্য তুলে ধরেন। কিন্তু ফেসবুক উক্ত ডেটা সহজে প্রকাশ করে না বলে তিনি দাবি করেন। ব্যবহারকারীর ডেটা ট্র্যাকিং কার্যক্রম মেটা দ্বারা এখনো পরিচালিত হয়ে আসছে।
এছাড়াও ভুয়া তথ্য ছড়ানো, বিদ্বেষ, আবহাওয়া নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর ব্যাপারে ফেসবুকের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসে, সেই সাথে মামলার মুখেও পড়তে হয়েছে। যদিও এতকিছুর পর ও মেটা বিষয়গুলো নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিষয়গুলো নিয়ে মুখ খোলা তো দূর, এমনকি তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি জানায়। ক্লাউডট্যাঙ্গল বন্ধের পেছনে মেটার অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা সেটিই এখন অজানা।