Reading Time: 3 minutes

চার হাজার চারশ কোটি ডলারের চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় টুইটার কর্তৃপক্ষ টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা করেছে টুইটার। ইলন মাস্ক ইচ্ছে করে এবং জেনে শুনে টুইটার অধিগ্রহণের সমঝোতা চুক্তি বাতিলের অবৈধ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে টুইটার আইনজীবীরা পাল্টা অভিযোগ করেছেন। মাস্ক চুক্তি বাতিলের নথিপত্র জমা দেওয়ার পর টুইটারের নতুন আইনজীবীরা তার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এসইসি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) এর কাছে পাল্টা চিঠি লিখেছেন।

চিঠিতে ইলন মাস্কের চুক্তি ভাঙ্গার চেষ্টাকে অবৈধ উল্লেখ করে তারা বলেছেন যে মাস্ক এবং তার পক্ষের ব্যক্তিরা জেনে শুনে, ইচ্ছে করে, যথেচ্ছভাবে সমঝোতা চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন। আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়াচটেল, লিপটন, রোজেন অ্যান্ড ক্যাটজ কে নিয়োগ দিয়ে টুইটার সোমবারেই নতুন এই সংবাদটি সবার সামনে তুলে ধরে। সপ্তাহের শুরুতেই চার হাজার চারশ কোটি ডলারে টুইটার ক্রয়ের সমঝোতা চুক্তি বাতিল করার লক্ষ্যে এসইসির কাছে ইলন মাস্ক নথিপত্র জমা দিয়ে আবেদন করেছেন।

আবেদনে মাস্কের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, টুইটার বট বা স্প্যাম অ্যাকাউন্ট নিয়ে মাস্কের চাহিদা মতো তথ্য সরবরাহ না করে সমঝোতা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। এবছরে ৪ই এপ্রিল থেকেই টু্ইটার ও ইলন মাস্ককে ঘিরে নাটকীয়তার শুরু হয়েছিল। মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটির ৯.২ শতাংশ শেয়ার নিজের মালিকানায় থাকার আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে মাস্ক প্রযুক্তি বাজারে আলোড়ন তোলেন। কয়েক দিনের জন্য হলেও তিনি কোম্পানির সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিক ছিলেন।

বিশাল সংখ্যক শেয়ারের মালিক হওয়ায় টুইটারের পরিচালনা পর্ষদ মাস্ককে কোম্পানির পরিচালক পদে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মাস্ক প্রথমদিকে সে প্রস্তাবে রাজি হলেও শেষ মুহুর্তে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এরপর ১৪ই এপ্রিল তিনি হুট করেই পুরো টুইটার কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসেন। এরকম এক আকস্মিক প্রস্তাব আর মাস্কের জেদ ধরা আচরণে টুইটারের পরিচালনা পর্ষদ একটু নড়েচড়ে বসে। প্রথমে তারা মাস্কের এই প্রস্তাবে রাজি ছিল না।

কিন্তু শেয়ারধারীদের চাপে তারা মাস্কের সাথে সমঝোতায় আসে। ২৫ এপ্রিল টুইটারের পরিচালনা পর্ষদ মাস্কের প্রস্তাব গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। চার হাজার চারশ কোটি ডলারে টুইটারের মালিকানা মাস্কের হাতে তুলে দেওয়ার চুক্তি হয়। কিন্তু আড়াই মাস না যেতেই গত ৯ জুলাই একাধিক শর্ত ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে মাস্ক সেই চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন। বিবিসি জানিয়েছে যে বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক যেন তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জনপ্রিয় এই সোশাল মিডিয়া কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার ৫৪ দশমিক ২০ ডলারে কিনে নেন।

আর সেই আদেশ চাওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারের আদালতে দায়ের করা এ মামলায়। সেখানে বলা হয়েছে, টুইটার কিনে নেওয়ার কথা বলে মানুষের মনোযোগ কেড়ে নিয়ে, এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়ে, তারপর টুইটার অধিগ্রহণের বিষয়ে একটি চুক্তি করে মাস্ক এখন মনে করছেন, তিনি বোধহয় অন্য সবার মত ডেলাওয়ারের চুক্তি আইন মানতে বাধ্য নন। তিনি হয়তো ভাবছেন, মন চাইলেই তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলতে পারেন বা একটা কোম্পানিকে ছুড়ে ফেলতে পারেন। এর কাজ তছনছ করে দিতে পারেন।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

সেই সাথে শেয়ার হোল্ডারদের পথে বসাতে পারেন, তারপর চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন। টুইটার চেয়ারম্যান ব্রেট টেইলর এক টুইটে বলেছেন, মাস্ক যে চুক্তি করেছেন, তা যেন তিনি মানেন, সেটা তারা নিশ্চিত করতে চান। চুক্তির বাতিল করার কারণ হিসেবে মাস্ক দাবি করছেন যে টুইটার নিজ প্ল্যাটফর্মের স্প্যাম বা বট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে। মাস্ক নিজে ক্রয় প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই টুইটার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্প্যাম অ্যাকাউন্টের বিড়ম্বনা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু টুইটার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করছে না বলে মাস্ক দাবি করেন। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের জন্য কে দায়ী, সেই প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে তখনই যখন দেখা যাবে কোন পক্ষ অপর পক্ষের কাছে বেশি অর্থ পাবে। সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, এই পুরো ঘটনাটিই মাস্কের সামাজিক মাধ্যমটিকে চাপে ফেলে দাম কমানোর একটি চেষ্টা। একশ কোটি ডলার সমমূল্যের একটি ব্রেকাপ ফি এবং পারফর্মেন্স সম্পর্কিত একটি ধারার কথাও উল্লেখ রয়েছে সমঝোতা চুক্তির বিবরণীতে।

আর টুইটার বলছে যে তারা মাস্ককে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে। এই ঘটনার পর থেকেই টুইটার শেয়ারের দাম কমতে শুরু করেছে। সোমবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারমূল্য ১১ শতাংশ কমে গিয়েছে। এতে মাস্ক তার তুলনামূলক কম দামে মাধ্যমটি কেনার চেষ্টায় সফল হতে পারেন বলে প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জ ধারণা করছে। মার্কিন প্রকাশনা ব্লুমবার্গের লেখক ম্যাট লিভাইন বলছেন, সমঝোতা চুক্তিতে জরিমানার কথা উল্লেখ থাকায় মাস্ককে চুক্তি সম্পন্ন করতে বাধ্য করার পাশাপাশি মামলার রায় বিপক্ষে গেলে আদালত তাকে আরও বেশি জরিমানা করতে পারে।

সমঝোতা চুক্তি নিয়ে টুইটারের আপাতত অবস্থান, চুক্তিটি বাতিল হয়নি। যদিও এর বিপরীতে ইলন মাস্ক স্বভাবতই টুইট করে যাচ্ছেন। মাস্ক চুক্তি বাতিল করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে টুইটার চেয়ারম্যান ব্রেট টেইলর টুইট করে বলেছিলেন তার কোম্পানি মাস্কের বিরুদ্ধে আদালতে যাবে। টুইটারের আইনজীবী দলের অন্তত দুজন সদস্য আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছেন তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে। এর মধ্যে উইলিয়াম সাভিটের পরিচিতি আছে ডেলাওয়্যারের আদালতে অ্যানথেম এবং সুথবাইয়ের মতো কোম্পানির হয়ে আদালতে লড়াইয়ের জন্য।

আর লিও স্ট্রাইন ডেলাওয়্যার চ্যান্সেরি কোর্টের সাবেক চ্যান্সেলর ছিলেন। অঙ্গরাজ্যটির আদালতে তার ২০ বছর বিচারকের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে। রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.