Reading Time: 2 minutes

প্রতিদ্বন্দী বাজারে ফেসবুক তাল মেলাতে পারছিল না। তাদের ব্যবসা আগের মত চাঙা করতে আবার প্রতিযোগিতা শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগের যতোগুলো প্ল্যাটফর্ম আছে তার মধ্যে টিকটক অল্প সময়ে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগে বাজারশীর্ষ মাধ্যমটি টিকটকের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে এবার পরিকল্পিতভাবে প্রচারণার তহবিল জোগান দিয়েছে। চীনের প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম এতো দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে  ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব এবং ফেসবুকের মতো পুরনো প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রতিষ্ঠানটি বড় এক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এক প্রতিবেদনে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে যে এমন পরিস্থিতিতে বাজারের উদীয়মান প্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘টার্গেটেড ভিকটোরি’কে ফেসবুক অর্থ সাহায্য দিচ্ছিল। আর প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুকের অর্থ সাহায্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে টিকটক বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন বলছে যে টার্গেটেড ভিক্টোরি স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সংবাদপত্রে মতামত নিবন্ধ এবং সম্পাদকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই ফেসবুক ১৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিয়মিত ব্যবহারকারী সংখ্যা কমার খবর জানিয়েছিল।

প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জের মাধ্যেম জানা যায় যে টার্গেটেড ভিকটোরি বিভিন্ন সংবাদপত্রে যে মন্তব্য নিবন্ধগুলো প্রকাশ করিয়েছে সেগুলোতে টিকটক নিয়ে নেতিবাচক সংবাদের লিংক থাকতো এবং নিবন্ধগুলোর লেখকদের মধ্যে ডেমোক্রেট দলের সদস্যরাও আছেন। তবে কোনো নিবন্ধেই অর্থ সাহায্য পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফেসবুকের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ ছিল না। ফেসবুকের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন বলছে যে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের শেষ নাগাদ প্রায় পাঁচ লাখ ব্যবহারকারী হারিয়েছে। এমন বাস্তবতায় ওয়াশিংটন পোস্ট প্রতিদ্বন্দ্বীর সুনাম নষ্ট করতে ফেসবুকের পরিকল্পিত প্রচারণার খবর জানায়।

ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে আসা একটি ইমেল এ প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন অধীনস্তদের বলেন যে তার প্রতিষ্ঠানকে এই বার্তাটি ছড়িয়ে দিতে হবে যে মেটা এখনকার ‘পাঞ্চিং ব্যাগ’ হলেও টিকটক ও হচ্ছে আসল শত্রু। বিশেষ করে অ্যাপটির মালিকানা যখন বিদেশী প্রতিষ্ঠানের এবং তরুণ ব্যবহারকারীরা যে ডেটা শেয়ার করছেন সেই হিসেবে এক নম্বর। টানা কয়েক বছর ধরেই ফেসবুক যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের চাপের মুখে আছে। সামাজিক মাধ্যম খাতে প্রতিষ্ঠানটি বেআইনিভাবে একাধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, এমন অভিযোগ বর্তমানে অহরহই শোনা যাচ্ছে।

ভার্জ জানায় যে টিকটকের সবচেয়ে কঠোর সমালোচকদের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। সিনেটর মার্কো রুবিও সেন্সরশিপের অভিযোগে অ্যাপটি তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাপটি সরাসরি নিষিদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে এসে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেন। ২০২০ সালের এক কংগ্রেস শুনানিতে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে আইনজীবিরা বলেছিলেন যে ইনস্টাগ্রাম ফেসবুকের কাছে মালিকানা বিক্রি করতে রাজি না হলে সে সময়ের উদীয়মান ফটো শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে জাকারবার্গ বিধ্বংসী মূর্তি ধারণ করতেন।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

সে সময় ডেমোক্রেটিক পার্টির জনপ্রতিনিথি প্রামিলা জায়পাল বলেছিলেন যে যখন একটি আধিপত্যকারী প্ল্যাটফর্ম সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের হুমকি দেয়, সেটা কখনোই স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কৌশল হতে পারে না। অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে প্রচারণা চালানো সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর টার্গেটেড ভিকটোরি একটি। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ২৩ কোটি ডলারের বেশি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর সেবাগ্রাহকদের তালিকায় আছে। বর্তমানে বহুল আলোচিত-সমালোচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নিয়ে নতুন নতুন অনেক গুঞ্জন অনবরত চলছেই।

সম্প্রতি ফেসবুক জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকারকারীদের আরও উগ্রপন্থী ভুয়া তথ্য এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ববাদী গ্রুপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফেসবুক অ্যালগরিদম নিয়ে বুধবার সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন গ্লোবাল উইটনেস প্রকাশ করেছে। উক্ত বিষয়টি একটি মানবাধিকার সংগঠনের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে উঠে এসেছে। তবে ফেসবুক বরাবরই দাবি করে এসেছে, তাদের সিস্টেমগুলো ভুয়া তথ্যের প্রচারণা কমানোর লক্ষ্য নিয়েই নকশা করা হয়েছে। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার দাবি, তারা আরও বেশি জলবায়ু বিষয়ক পোস্টে লেবেল জুড়ে দিয়ে কনটেন্ট ফ্ল্যাগ করছে।

প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিনিধি এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন যে আমাদের সিস্টেমগুলো ভুয়া তথ্য কমানোর জন্যই ডিজাইন করা হয়েছে, আরও বড় করে উপস্থাপনের জন্য নয়। এর মধ্যে জলবায়ু নিয়ে ভুয়া তথ্যও আছে। সমস্যাযুক্ত কনটেন্টের বেলায় তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানুষের হস্তক্ষেপ এবং আমাদের অংশীদারদের অংশগ্রহণের সমন্বয়কে ব্যবহার করি আমরা। এর মধ্যে তথ্য যাচাইকারীরাও আছেন। মেটা প্রতিষ্ঠানটি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মিথ্যাচার ও ভুল তথ্যের প্রচারণা মোকাবেলায় কাজ করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১০ লাখ ডলারের তহবিল গঠনের কথাও বলেছিল।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.