Reading Time: 2 minutes

বেশ কয়েক বছর ধরেই মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের চাপের মুখে আছে টিকটক। মূল প্রতিষ্ঠান চীনভিত্তিক হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ ব্যবহারকারীদের স্পর্শকাতর ডেটা চীন সরকারের কাছে পাচার এবং তা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিরা। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের চাপের মুখেও চীনে ডেটা পাঠানো বন্ধ প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেয়নি টিকটক কর্মকর্তা। এমনকি এ বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি মেলেনি একাধিক প্রচেষ্টায়।

একই সময়ে প্ল্যাটফর্মের সবকিছুতে চীনা ‘মাস্টার অ্যাডমিন’ এর প্রবেশাধিকার থাকার খবরকে অস্বীকার করে গেছেন শর্ট-ফর্ম ভিডিও অ্যাপটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সে বিতর্ক গড়িয়েছে সিনেটের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটিতে। কমিটির শুনানিতে মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের চাপের মুখেও চীনে ডেটা সরবরাহ বন্ধে স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি কোম্পানিটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ভানেসা পাপাস। কেবল মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে সকল শঙ্কা সমাধান করার কথা তিনি বলেছেন কমিটির কাছে।

বাজফিড নিউজ নিজস্ব প্রতিবেদনে বলেছিল, মাস্টার অ্যাডমিন হিসেবে পরিচিত বেইজিংভিত্তিক এক প্রকৌশলীর প্ল্যাটফর্মের সবকিছুতে প্রবেশাধিকার আছে। তবে, উক্ত ইঞ্জিনিয়ার বাইটড্যান্সের কর্মী না কি টিকটকের কর্মী সে প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই উক্ত প্রতিবেদনে। বারবার মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্নের মুখে ভানেসা মার্কিন নাগরিকদের বিশ্বাস ধরে রাখা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার কথা বলেন।

এরপর সিনেটর পোর্টম্যান ভানেসাকে চীনে ডেটা সরবরাহ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিতে আবারও চাপ দিলে ভানেসা তার আগের বক্তব্যেই ফেরত গিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আমাদের চূড়ান্ত সমঝোতা সকল জাতীয় নিরাপত্তা শঙ্কার সমাধান করবে। এরপর মিসৌরির সিনেটর জশ হলির প্রশ্নের মুখে বাজফিডের প্রতিবেদনকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন ভানেসা পাপাস। এর আগে টিকটক বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের সকল মার্কিন ডেটা সফটওয়্যার জায়ান্ট ওরাকলের ক্লাউড সার্ভারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সাথে পর্যায়ক্রমে নিজস্ব সার্ভার থেকে ব্যাকআপ মুছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, সিনেট শুনানীতে দুবার একই প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন ভানেসা। সিনেটর রব পোর্টম্যান ভানেসাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, চীন, চীনভিত্তিক টিকটক কর্মী, বাইটড্যান্সের কর্মী অথবা চীনে অবস্থিত অন্য কোনো পক্ষ যার মার্কিন সেবাগ্রাহকদের ডেটায় প্রবেশাধিকার থাকতে পারে এমন কারও কাছে ডেটা সরবরাহ বন্ধ করবে কি না টিকটক। সরাসরি ডেটা সরবরাহ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি না দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নিরসনের প্রতিশ্রুতিই কেবল দিয়েছেন ভানেসা।

রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট উভয় দলের শঙ্কা প্রতিফলিত হয়েছে সিনেটর পোর্টম্যানের প্রশ্নে। ওয়াশিংটন আশঙ্কা করছে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ ব্যবহারকারীদের স্পর্শকাতর ডেটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা চালাতে পারে। চীনের প্রচলিত আইনে দেশটির সরকার টিকটকের কাছে যে কোনো তথ্য চাইলে তা সরবরাহ করতে বাধ্য কোম্পানিটি। মার্কিন কর্মকর্তারা আরও ভয় পাচ্ছেন, টিকটকের ডেটা ব্যবহার করে সম্ভাব্য এজেন্ট বা গুপ্তচরবৃত্তির টার্গেটকে চিহ্নিত করতে পারবে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

সাথে প্রয়োজনে ভুয়া তথ্যের প্রচারণা চালাবে চীন। সরাসরি চীনে ব্যবসা করে না টিকটক। কিন্তু প্ল্যাটফর্মটির মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স চীনের কোম্পানি। কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা একজন চীনা নাগরিক এবং চীনে নিজস্ব অফিসও আছে কোম্পানিটির। জুন মাসে প্রকাশিত বাজফিড নিউজের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর টিকটক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শঙ্কা বেড়েছে। বাইটড্যান্সের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকের আলাপচারিতার ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংয়ের তথ্য ছিল উক্ত প্রতিবেদনে।

বাইটড্যান্স কর্মকর্তাদের কণ্ঠে ফাঁস হওয়া রেকর্ডে একাধিকবার মার্কিন ব্যবহারকারীদের ডেটায় প্রবেশাধিকার থাকার কথা শোনা গেছে। পরবর্তীতে মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে চীনা কর্মীদের প্রবেশাধিকার থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে টিকটক। তবে, প্ল্যাটফর্মের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি নিরাপত্তা দল দেখভাল করে বলে দাবি করে শঙ্কা নিরসনের চেষ্টাও করেছে তারা। বুধবারের শুনানীতেও চীনা কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের ডেটায় প্রবেশাধিকার থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ভানেসা।

একই সঙ্গে দাবি করেছেন, টিকটক কোনো অবস্থাতেই ডেটা চীনকে দেবে না এবং টিকটক কোনোভাবেই চীন দ্বারা প্রভাবিত নয়। কিন্তু বাইটড্যান্স মার্কিন ব্যবহারকারীদের ডেটা চীনকে দেবে কি না অথবা বাইটড্যান্সের ওপর চীনা সরকারের কোনো প্রভাব আছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এড়িয়ে গেছেন ভানেসা। সিনেটর পোর্টম্যান বাজফিডের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন তোলার পর ভানেসা নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা উল্লেখ না করেই উত্তরে বলেন, উক্ত অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

ভানেসা আরও বলেন, প্রতিবেদনে একটি মাস্টার অ্যাকাউন্টের কথা বলা হয়েছিল, যা তাদের কোম্পানিতে নেই।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.