Reading Time: 4 minutes

পিক্সেল সিরিজের স্মার্টফোন গুগলের সবচাইতে সফল হার্ডওয়্যার এর একটি। সফটওয়্যার এবং মানের দিক দিয়ে গুগল পিক্সেল প্রতিযোগীতা করে আসছিলো বড় সব স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের সাথে। অনেক ব্যবহারকারী মনে করেন পিক্সেল অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনগুলির মধ্যে সবচেয়ে আদর্শ একটি ফোন। গুগল তাদের অপারেটিং সিস্টেমের সেরাটা প্রদান করে পিক্সেল ফোনের মাধ্যমে। যদিও পিক্সেল নিয়ে গুগলের পরিকল্পনা কিছুটা ধোঁয়াশাপূর্ন ছিলো এবং আমরা ২০২০ এ পিক্সেল লাইন-আপে তেমন কোন বড় ধরনের উম্মোচন দেখতে পাইনি, তবুও সেই ধোঁয়াশা কেটে গেলো এবারের ঘোষনায়।

টেক দুনিয়া নিশ্চিত করেছে এবারের নতুন দুটি পিক্সেল স্মার্টফোন যা পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো। এবং এবার পিক্সেলে বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন আসছে ডিজাইন এবং হার্ডওয়্যার এর দিক দিয়ে। বিভীন্ন সোর্স নিশ্চিত করেছে এবারের পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো চলতে যাচ্ছে গুগলের নিজস্বভাবে ডিজাইন করা কাস্টম চিপ দ্বারা। এই চিপের নাম “টেনসর” এবং এটি গুগলের ডিজাইনকৃত সর্বপ্রথম সিস্টেম-অন-চিপ বা এসওসি। তাছাড়া পিক্সেলের ডিজাইনে এসেছে বড় রকম পরিবর্তন। এত ব্যাকপ্যানেলের লম্বা ক্যামেরা বার রয়েছে যা সম্পূর্ন ফোনের প্রস্থ জুড়ে থাকছে। জানা গেছে এতে ক্যামেরার পাশাপাশি সেন্সর এরে বসানো হয়েছে, তাই এই ডিজাইন।

গ্রাহকের কথা মাথায় রেখেই গুগল পিক্সেল ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রতিযোগিতায় নেমে গিয়েছে। গুগল পিক্সেল ৬ এবং গুগল পিক্সেল ৬ প্রো এই দুটি স্মার্টফোনের ফিচার নিয়ে অনেক আলোচনা শোনা গিয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। ফোনের মডেল থেকে শুরু করে ফোনের দাম কত পড়তে পারে, কি কি ফিচার থাকবে, কতটা মানসম্মত হবে এসব বিষয় নিয়ে সোশ্যতাল মিডিয়াতেও অনেক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে স্মার্টফোনটির ফিচার, মডেল, ব্যাটারী, র‍্যাম, রম সব বিষয়ে নিশ্চিত হবার পর কাস্টম চিপ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্মার্টফোনটির বিশদ বিবরণ জানিয়ে দিয়েছে। এখন জানা যাক এই স্মার্টফোন দুটিতে যা যা থাকতে পারে-

গুগল পিক্সেল ৬-

  • ৬.৪ ইঞ্চি ডিসপ্লে।
  • ৮ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা।
  • ৫০ মেগাপিক্সেল ওয়াইড অ্যাঙ্গেল এবং ১২ মেগাপিক্সেলের আলট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স এর দুটি রেয়ার ক্যামেরা।
  • ১২৮ জিবি এবং ২৫৬ জিবির ইন্টারনাল স্টোরেজ।
  • ৮ জিবি র‍্যাম।
  • অ্যান্ড্রয়েড ১২ সফটওয়্যার।
  • ৪,৬১৪ এমএএইচ ব্যাটারি।
  • আন্ডার-ডিসপ্লে ফিংগারপ্রিন্ট রিডার।

গুগল পিক্সেল ৬ প্রো-

  • ৬.৭১ ইঞ্চি প্লাস্টিক ও লেড ডিসপ্লে।
  • ১২ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা।
  • ৩টি রেয়ার ক্যামেরা। যার মধ্যে থাকছে ৫০ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ক্যামেরা, ৪৮ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো লেন্স এবং সাথে থাকছে ১২ মেগাপিক্সেলের আলট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সেন্সর।
  • ১২ জিবি র‍্যাম।
  • ১২৮ জিবি, ২৫৬ জিবি এবং ৫১২ জিবির স্টোরেজেরও অপশন রয়েছে।
  • লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড ১২ সফটওয়্যার।
  • ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি।
  • আন্ডার-ডিসপ্লে ফিংগারপ্রিন্ট রিডার।

পিক্সেল ৬ এবং ৬ এর ডিজাইন এবং পার্থক্য

প্রাথমিকভাবে পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রোতে সাইজের পার্থ্যক্য লক্ষ্য করা গেলেও বাহ্যিকভাবে দুটি ফোন একই ডিজাইন অনুসরন করে তৈরী। কিন্তু কাছে থেকে কিছু জিনিস লক্ষ্য করা যায়, যেমন দুটি ফোনে ব্যবহৃত আলাদা ম্যাটেরিয়াল। পিক্সেল ৬ এর পিছনের প্যানেল ম্যাট-ফিনিশড যেখানে পিক্সেল ৬ প্রো এর পিছনের প্যানেল চকচকে। পিক্সেল ৬ এর ডিসপ্লে সমান (ফ্ল্যাট) যেখানে ৬ প্রো এর ডিসপ্লে বাঁকানো (কার্ভড)। দুটিতেই একই সেটের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে এবং শুধু পিক্সেল ৬ প্রো-তে বাড়তি একটি ৪৮ মেগাপিক্সেল এর 4x টেলিফোটো লেন্স-সহ ক্যামেরা রয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে পিক্সেল ৬ এর ক্যামেরা বাম্পের ওপরের অংশ পিক্সেল ৬ প্রো এর থেকে কিছুটা ছোট, কিন্তু সরাসরি দেখায় তেমন কোন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না।

গুগলের টেনসর চিপ

কাস্টম চিপের দুনিয়ায় গুগল এবারই নতুন নয়। এর আগেও কোয়ালকমের চিপের সাথে নিজস্বভাবে ডিজাইনকৃত ইমেজ প্রসেসিং ইউনিট এর সাথে পিক্সেল স্মার্টফোন বাজারে এনেছে গুগল। কিন্তু গুগল এবারই প্রথম নিজস্ব ডিজাইনকৃত পূর্ন সিস্টেম-অন-চিপ বাজারে আনছে। স্যামসাং, হুয়াওয়ে এবং অ্যাপলের মত এবার গুগল তাদের নিজস্ব চিপ ব্যবহার করে স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো প্রথম স্মার্টফোন যা এই চিপ দ্বারা চলবে। গুগল দাবি করছে এতে পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো এর ব্যবহারযোগ্যতা কয়েক ধাপ এগোবে।

আপাতত জানা তথ্য অনুসারে এটি স্যামসাং এর সাথে গুগলের তৈরী একটি অক্টা-কোর, ৫ ন্যানোমিটার এর চিপ যাতে রয়েছে এম২ সিকিউরিটি মডিউল এর সাথে কাজ করার সক্ষমতা এবং গুগলের শক্তিশালী এ-আই ইঞ্জিন। এই চিপ উত্তমভাবে ভয়েস রেকগনিশন এবং ইমেজ প্রসেসিং এ সক্ষম যা লাইভ ক্যাপশন, ভয়েস ট্রান্সলেশন, স্পিচ টু টেক্সট অনেকগুনে কার্যকরি করতে সাহায্য করবে। এর ইমেজ প্রসেসর ছবি রিয়েলটাইম ত্রুটিমুক্তকরন এবং নড়বড়ে অবজেক্টকে স্থির করতে সক্ষম। এটি পিক্সেলের নিত্যদিনকার কার্যক্রম এবং ফটোগ্রাফি অনেক ধাপে উন্নত করতে সাহায্য করবে। এই চিপ ডিভাইসের মধ্যেই জটিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত সমস্যা প্রসেস করতে পারবে যার ফলে ক্লাউড প্রসেসিং এর চাপ কমে আসবে, এবং এর এ-আই পার্ফর্ম্যান্স বৃদ্ধি পাবে।

গুগল ইতিমধ্যে ফটোগ্রাফি এবং স্মার্টফোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সহ ফিচার প্রয়োগে অন্যান্য প্রতিযোগীদের চেয়ে এগিয়ে। আশা করা যায় এই চিপের মাধ্যমে পিক্সেল স্মার্টফোন আরো উন্নতি লাভ করবে। ধারনা করা যায় বরাবরের মত ফটোগ্রাফিতে আবারও সেরা হিসেবে প্রকাশ হতে যাচ্ছে পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

সফটওয়্যার

অ্যান্ড্রয়েড ১২ আসছে পিক্সেল এবং পিক্সেল ৬ প্রো-তে, যা পিক্সেল হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার অপটিমাইজেশনের পূর্ন সুবিধা নিতে যাচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েড ১২ এই প্রথম পিক্সেল ব্যবহারকারীদের গভীর কাস্টমাইজেশনের সুবিধা দিচ্ছে যা ইতিমধ্যে অন্যান্য প্রতিযোগীরা অনেক আগে হতেই দিয়ে আসছে। রঙ পরিবর্তন, ওয়ালপেপারের সাথে মিলিয়ে কালার-স্কিম, ওয়ান হ্যান্ডেড মোড-সহ আরো অনেক ফিচার রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ১২ তে। আরো রয়েছে নতুন প্রাইভেসী নিয়ন্ত্রন এবং নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রনের সুবিধাসমূহ, যদিও গুগল প্রাইভেসি ফ্রেন্ডলি কোম্পানী হিসেবে সুপরিচিত নয়, এবং তাদের মূল ব্যবসা বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত।

আমার ব্যক্তিগত আশঙ্কা হচ্ছে গুগলের এই নতুন চিপ কি পিক্সেল কাস্টম রম ডেভেলপমেন্ট কঠিন করে তুলবে কিনা। যেহেতু এতে কাস্টম চিপ এবং কাস্টম মডিউল রয়েছে। তবে আশা করা যায় এই চিন্তার উত্তর দ্রুতই আসবে। যদি পিক্সেল এর এই নতুন দুটি মডেলে জানাশোনা কাস্টম অপারেটিং সিস্টেম যেমন /e/ ইনস্টল করা যায়, তবে এটি হতে চলেছে সবচাইতে শক্তিশালী একটি প্রাইভেসি ফ্রেন্ডলি ডিভাইস।

বরাবরের মত পিক্সেলের জন্যে গুগল কিছু বরাদ্দ রেখেছে, যেমন একটি দারুন রেকর্ডিং অ্যাপ যা আপনার রেকর্ডিং এর একটি টেক্সট সংস্করন তৈরী করে এবং লেখার মাধ্যমে রেকর্ড সার্চ করার সুবিধা দেয়। আরো রয়েছে লাইভ ক্যাপশন, যা ফোনে চলা যে কোন ভিডিও সরাসরি ক্যাপশন প্রদান করে অডিও প্রসেস করার মাধ্যমে। আরো রয়েছে অপ্রতিদ্বন্দি ক্যামেরা অ্যাপ এবং উন্নত ফটোস অ্যাপ।

পরিশেষ

পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো গুগলের প্রথম কোন ফোন যা বড় পরিবর্তন নিয়ে বাজারে আসছে। যদিও আমরা একেবারে নিশ্চিত নই কি কি থাকছে আর কি কি থাকছে না, তবুও বিভীন্ন সোর্স হতে পাওয়া তথ্য অনুসারে পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো অনন্য দুটি ফোন হতে যাচ্ছে। এতে থাকছে গুগলের নতুন ডিজাইনকৃত কাস্টম টেনসর চিপ, এতে রয়েছে নতুন ডিজাইন এবং অ্যান্ড্রয়েড ১২ এবং আরো অনেক কিছু। ফোনটি আসছে সেপ্টেম্বর হতে নভেম্বরের মাঝে উম্মুক্ত হতে পারে। বিশ্ব বাজারে ফোন দুটি আসতে আসতে ২০২২ এর প্রথমার্ধ লাগতে পারে। এর দাম হতে পারে সর্বনিম্ন ৮০০ ইউএস-ডলার হতে সর্বোচ্চ ১০০০ ইউএস-ডলার।

পিক্সেল ৬ এবং ৬ প্রো সম্পর্কে আমাদের লেখা এই আর্টিকেলে কিছু তথ্য ভীন্ন উৎস হতে সংগৃহীত। যে কোন তথ্য যে কোন সময় পরিবর্তন হতে পারে আনুষ্ঠানিক উম্মোচনের সময়। তাই আমরা চেষ্টা করব নতুন তথ্য পাওয়া মাত্র পোস্টটি হালনাগাদ করা হবে। যে কোন মতামত কমেন্টে আমাদেরকে জানান। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.