নিজ দেশের অপ্রাপ্তবয়স্ক গেমারদের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ই-স্পোর্টস গেমিংয়ের বাজারে চীন তাদের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। বৃহস্পতিবার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের এই আয় বৃদ্ধি নিয়ে গেমিং সংস্থা নিকো পার্টনার্স এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ অর্থবছরে এই খাতে দেশটির আয় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ অর্থবছরে দেশটি ৪০ কোটি ডলারের বেশি আয় করেছে। গেমিং খাতের নিয়ন্ত্রকরা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরও চীনের আয় বাড়ছে।
গত বছর ১৮ বছরের কম বয়সী গেমারদের অনলাইন ভিডিও গেম খেলা নিয়ন্ত্রণে বেইজিং নতুন নিয়ম চালু করে, যেখানে সপ্তাহে সর্বোচ্চ তিন ঘন্টা গেম খেলতে পারেন তারা। ই-স্পোর্টস বলতে পেশাদার কম্পিউটার/ভিডিও গেমিংকে বোঝায়, যেখানে গেমাররা প্রায়ই বড় টুর্নামেন্ট খেলে থাকেন ও বিভিন্ন লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে সমর্থকরা তা দেখেন। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নতুন গেমের সরবরাহ ও মনিটাইজেশনের অনুমোদন বন্ধ করে রেখেছিল চীনের নিয়ন্ত্রকরা।
উক্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপক প্রভাব পড়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় গেমিং প্রতিষ্ঠান ‘নেটইজ’ এবং ‘টেনসেন্ট’ এর ওপর। বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যম সিএনবিসি এর ‘স্কোয়াক বক্স ইউরোপ’ অনুষ্ঠানে নিকো পার্টনার্সের ই-স্পোর্টস কনটেন্ট প্রধান অ্যালেকজান্ডার চ্যাম্পলিন বলেন ই-স্পোর্টস স্পেসে চীনের যা আছে, তা হচ্ছে বিশেষ এক ধরনের সুবিধা। এটি বড় একটি বাজার, যেখানে আছে ই-স্পোর্টস কনটেন্টে আগ্রহী গেমারের বিশাল এক জনসংখ্যা, যারা নিজেরাই পেশাদার হয়ে উঠছেন।
চ্যাম্পলিন অবশ্য সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছিলেন যে চীনের ই-স্পোর্টস বাজার আপাতত ভালোভাবে চললেও এই সিদ্ধান্তের কিছুটা প্রভাব ভবিষ্যতে দেশটির পেশাদার গেমিংয়ে পড়তে পারে। তিনি সিএনবিসিকে বলেন যে তরুণদের গেম খেলা নিয়ে এসব নিয়ম ই-স্পোর্টস গেমারের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। ই-স্পোর্টস শিরোনাম ও ই-স্পোর্টস তারকাদের নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও ভবিষ্যত প্রজন্মের ই-স্পোর্টস সমর্থক ও পেশাদারদের নিয়ে তারা কী করবে, সেটি নিয়ে কিছুটা তারা উদ্বিগ্ন।
গত বছর ই-স্পোর্টস খাত থেকে ভারত দুই কোটি ডলারেরও বেশি আয় করেছে, যা ২০২০ অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে ২৬ শতাংশ। এ বিষয়ে চ্যাম্পলিন বলেন ভারত বিশাল এক বাজার। পাশাপাশি, আগে থেকেই অংশগ্রহণকারীর মাথাপিছু ডলারের অনুপাত হিসাবে অবমূল্যায়িত হয়েছে এটি। এর মানে হচ্ছে ভারতের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে আরও বেশি স্মার্টফোন আসবে, যা নতুন গেমার ও দর্শক তৈরির সম্ভাবনাকেও ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেবে।
তিনি আরো বলেন ভারতীয় গেমিং বাজারে এই খাতের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক বিনিয়োগও হয়েছে। তরুণদের গেম খেলা নিয়ে বিস্তৃত ক্র্যাকডাউনের পরও ই-স্পোর্টস নিয়ে দেশটির সরকারের সমর্থনও লক্ষ্য করা গেছে। ২০২১ সালে ই-স্পোর্টস খাতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সর্বমোট আয় আট কোটি ডলারের বেশি, যা আগের অর্থবছর থেকে ২৭.৩ শতাংশ বেশি। গত বছর, সাংহাইয়ে পাঁচ লাখ বর্গমিটার আয়তনের একটি ই-স্পোর্টস অ্যারেনা নির্মাণের কাজ দেশটি হাতে নেয়।
চীনের চলমান আধিপত্যের মধ্যে এশিয়ার অন্যান্য দেশেও বৃদ্ধি পাচ্ছে ই-স্পোর্টস বাজার। এই খাতের অন্য দুটি বড় বাজার হচ্ছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।