Reading Time: 4 minutes

যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই কি এনএসও গ্রুপের পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার সম্পর্কে এফবিআই প্রধানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। হ্যাঁ বোধক জবাব দিয়ে এফবিআই প্রধান জানান, পেগাগাসের লাইসেন্স কেনা হয়েছিল, তবে তা কেবল পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য। এফবিআই প্রধান ক্রিস্টোফার রে বলেন, উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, এটি দেখার জন্য যে খারাপ লোকের হাতে পড়লে এই স্পাইওয়্যারে ক্ষতির ধরন কেমন হতে পারে। প্রশ্ন উত্তর পর্বের জবাবে এফবিআই প্রধান উত্তর দিচ্ছিলেন ডেমোক্রেট দল থেকে নির্বাচিত অরিগনের সেনেটর রন ওয়াইডেনকে।

মার্চে কংগ্রেসের একটি শুনানিতে ক্রিস্টোফার রে বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্পাইওয়্যারটি পরীক্ষা ও মূল্যায়নের জন্য একটি সীমিত লাইসেন্স কিনেছে সংস্থাটি। এমন নয় যে ভবিষ্যতে কখনও এর আইনানুগ ব্যবহার হবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভবিষ্যতে এসব পণ্যের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সম্ভাব্য আইনি ব্যবহার ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে। কারো ওপর এর ব্যবহারের চেয়ে একেবারেই আলাদা বিষয় এটি। পণ্যটি পরীক্ষা ও মূল্যায়নের পর, কোনো তদন্তে এটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এফবিআই তা লেখা ছিল চিঠিতে।

তবে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতা গ্রহনের দুই মাস পর, ২০২১ সালের ২৯ মার্চ, বিশেষ পরিস্থিতিতে স্পাইওয়্যারটির ব্যবহার সমর্থনে ২৫ পৃষ্ঠার এক নথি প্রকাশ করে সংস্থাটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তবে, কোন কোন ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হতে পারে, ওই বিষয়ে পরিষ্কার কিছু উল্লেখ নেই ওই নথিতে। এর কয়েকদিন পর ওই একই বিভাগ অপরাধী অনুসন্ধানে কীভাবে এই টুল সঠিক উপায়ে ব্যবহৃত হতে পারে, তা নিয়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি আইনজীবীদের জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করে।

গত বছরের মে মাসে স্পাইওয়্যারটির সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে ক্রিস্টোফার রে এর দৈনন্দিন ব্রিফিংয়ের জন্য একটি নথি তৈরি করে সিআইডি। তবে, শেষ পর্যন্ত তার ব্রিফিংয়ে পেগাসাস সংশ্লিষ্ট তথ্য ছিল কি না, বা এই বিষয়ে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি। ফ্রিডম অফ ইনফর্মেশন অ্যাক্ট আইনের অধীনে করা মামলায় দেওয়া সরকারের সংক্ষিপ্ত বিবরণী অনুসারে, ২০২১ সালের ২২ জুলাই এনএসও পণ্যের সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কিত সকল প্রচেষ্টা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।

মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদনে জানিয়েছে এতোদিন গোপনীয় বলে চিহ্নিত ওই সভার বিষয়াদি সম্প্রতি উন্মুক্ত হওয়ায় জানা যাচ্ছে, সত্যি সত্যিই ব্যবহারের কতোটা কাছাকাছি চলে গিয়েছিল মার্কিন সরকারের এই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। তবে, আদালত ও এফবিআই এর বিভিন্ন নথি বলছে ভিন্ন কথা। আর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডম অফ ইনফর্মেশন অ্যাক্ট আইনের আশ্রয়ে করা এক মামলার ফলে। জানুয়ারিতে দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসের তদন্তে উঠে আসে, এফবিআই পেগাসাস কিনেছে ২০১৮ সালে।

পরবর্তী দুই বছর, নিউ জার্সির এক গোপন জায়গায় এর পরীক্ষা হয়। স্পাইওয়্যারটি প্রথম কেনার পর থেকে এনএসওকে আনুমানিক ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে সংস্থাটি। এই খবর প্রকাশের পর থেকে, ডিসেম্বরে সিনেটরদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের চেয়েও বড় রকমের রহস্যের কথা জানা ক্রিস্টোফার রে সহ সংস্থাটির বিভিন্ন কর্মকর্তা। পেগাসাস ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় ছিল বলে স্বীকার করেন তারা। তারা এটিও উল্লেখ করেন, সংস্থাটির মূল লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষ কীভাবে এটি ব্যবহার করতে পারে, সে বিষয়টি পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করা।

জানুয়ারিতে নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশ করে, এনএসও গ্রুপের আরেকটি টুল ‘ফ্যানটম’ পরীক্ষা করেছেন এফবিআই কর্মকর্তারা। এটি পেগাসাস স্পাইওয়্যারের আরেকটি সংস্করণ, যাতে মার্কিন ফোন নম্বর ব্যবহার করে শিকারের ফোনে অনুপ্রবেশ করা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সরকারী সংস্থার মাধ্যমে হ্যাকিং টুলটি অপব্যবহারের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় অবশেষে ২০২১ সালের জুলাই মাসে, অপরাধী তদন্তে পেগাসাস ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয় এফবিআই।

তবে, গত দুই প্রেসিডেন্টের শাসনামলে একটি ক্ষমতাধর সাইবার অস্ত্রের প্রতিশ্রুতি ও এর বিপদ নিয়ে মার্কিন সরকার কীভাবে লড়াই করেছে, তার একটি ঝলক এইসব নথিতে পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নিউইয়র্ক টাইমস। এফবিআই এর বিরুদ্ধে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের করা উক্ত মামলার বিপরীতে দেওয়া নথিতে উঠে এসেছে, ২০২০ সালের শেষে ও ২০২১ সালের প্রথমার্ধে অপরাধ তদন্তে ইসরাইলের এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার হ্যাকিং টুল ব্যবহারের উদ্দেশ্যে জোর চেষ্টা চালিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

এই হ্যাকিং টুল ব্যবহারের বিষয়ে এজেন্সির নেতৃত্বের জন্য পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধের বিচারের সময় এফবিআই এর বিভিন্ন হ্যাকিং টুলের ব্যবহার বিষয়ক তথ্য প্রকাশের ধরন কেমন হতে পারে, তা নিয়ে ফেডারেল তদন্তকারীদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকাও বানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে, বুরো কীভাবে পেগাসাস ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে ও এর ব্যবহার কেবল মার্কিন নাগরিক বা বিদেশী বা উভয়ের ফোনেই চালানো হবে কি না, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি বলে উঠে এসেছে নিউইয়র্ক টাইমসের তদন্তে।

এফবিআই স্পাইওয়্যারটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিলেও আদালতের নথি বলছে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন তদন্তে স্পাইওয়্যারের সম্ভাব্য ব্যবহারে সংস্থাটির আগ্রহ রয়েছে। অপরাধী তদন্তে এফবিআই এটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে শেষ পর্যন্ত সরে এলেও এর মানে এই নয় যে, বিভিন্ন অপরাধীর ব্যবহৃত এনক্রিপ্টেড যোগাযোগে নজর রাখার ক্ষেত্রে তারা একই ধরনের অন্যান্য টুল পরীক্ষা, মূল্যায়ন ও ব্যবহার করবে না। অক্টোবরের শেষে জমা দেওয়া এক আইনি সংক্ষিপ্তসারে উঠে এসেছে এফবিআইয়ের অবস্থান।

এ ধরনের ক্ষমতাধর হ্যাকিং টুলের ব্যবহার নিয়ে এফবিআই পরিচালক বিভ্রন্তিকর তথ্য দেবেন, তারপর এ নিয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষায় রাখার পর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেবেন এটি একেবারেই গ্রহনযোগ্য নয় বলে এক বিবৃতিতে বলেন রন ওয়াইডেন। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঠিক কোন কারণে এফবিআই স্পাইওয়্যারটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা রহস্যই থেকে গেছে। তবে, সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন সরকারী সংস্থার হাতে এর ব্যবহার নিয়ে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণেই মূলত এই সিদ্ধান্তে এসেছে সংস্থাটি।

ভবিষ্যত কার্যক্রমে এনএসও টুল ব্যবহৃত হবে কি না, তা নিয়ে এফবিআই’র কাছ থেকে মার্কিন নাগরিকদের পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়ার অধিকার আছে বলে জানান রন ওয়াইডেন। তার জবাবে এফবিআই এর এক মুখপাত্র বলেছেন, পরিচালকের সাক্ষ্য তখনও নির্ভুল ছিল ও তা আজও সত্য, এফবিআই এর কোনো তদন্তে এনএসওর কোনো পণ্য ব্যবহৃত হয়নি। এফবিআই এর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যোগ করেন, ক্রিস্টোফার রে এর সাক্ষ্য ছাড়াও কংগ্রেসের বিভিন্ন সদস্য ও কর্মীদের এই বিষয়টি জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

পেগাসাস একটি জিরো-ক্লিক হ্যাকিং টুল হিসেবে পরিচিত যা কোনো ব্যক্তির মোবাইল ফোনে প্রবেশ করে তার সকল বার্তা, ছবি, কন্টাক্ট ও ভিডিও রেকর্ডিং হাতিয়ে নিতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অসংখ্য সরকার, স্বৈরাচারী ও গণতান্ত্রিক উভয়েই স্পাইওয়্যারটি কিনেছে। বিভিন্ন মাদক কারবারী ও জঙ্গির ফোন হ্যাকিংয়ে করতে এটি ব্যবহার করেছে ওইসব দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। তবে, সৌদি আরব, মেক্সিকো, হাঙ্গেরি ও ভারতের মতো দেশের সরকারগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীর ওপর এটি অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে তখন এর ভয়ানক কার্যক্রমের খবর ছড়াতে শুরু করে।

গত নভেম্বরে, বাইডেন প্রশাসন এনএসওসহ ইসরাইলের আরেকটি হ্যাকিং কোম্পানিকে দেশটির বাণিজ্য বিভাগের কালো তালিকায় যুক্ত করার কয়েক সপ্তাহ পর ক্রিস্টোফার রে এর গোপন গতসাক্ষ্য নেওয়া হয়। ফলে, মার্কিন সরকারের অনুমতি ছাড়া ইসরায়েলি কোম্পানি দুটির কাছে প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করতে বাধ্য হয় দেশটির বিভিন্ন কোম্পানি। মার্কিন আইনসভায় উভয় দল মিলে একটি বিল নিয়ে কাজ করছে। এটি পাশ হলে দেশটির কোনো সরকারী সংস্থাই পেগাসাসের মতো বিদেশী বাণিজ্যিক স্পাইওয়্যার ব্যবহার করতে পারবে না।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.