চলতি বছরে প্রযুক্তি শিল্পে মেটাভার্স এবং ওয়েব৩ এই দুটি শব্দ সবচেয়ে বেশি আলোচিত সমালোচিত হয়েছে। ব্যবহারকারীরা বাধাহীনিভাবে ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করতে পারে মেটাভার্স এমন ডিজিটাল যুগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। অপরদিকে ‘ওয়েব৩’ কে বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীক উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। টাইম ম্যাগাজিনের পারসন অফ দ্যা ইয়ার মেটাভার্সের আবেদন ঠিক যেন ধরতে পারছেন না এবং ওয়েব৩ তার মতে বাস্তবসম্মত নয়, এটি শ্রেফ এক ধরনের মার্কেটিং ট্রিক। টাইম ম্যাগাজিনের পারসন অফ দ্য ইয়ার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধানসহ একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক।
সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে ইলন মাস্ক বলেন যে নতুন এই প্রযুক্তি ভাবনাগুলোর ক্ষেত্রে তার বয়স হয়তো একটু বেশি। তবে মাস্ক এটিও বলেছেন যে সারাদিন কেউ মুখের উপর স্ক্রিন স্ট্যাপ করে বসে থাকবে তিনি তা কোন ভাবে ভাবতে পারছেন না। বাজওয়ার্ড মেটাভার্স ও ওয়েব৩ বাজারে সফল একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইলোন মাস্কের চোখে গুরুত্ব পাচ্ছে না। তিনি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) নির্ভর মেটাভার্সের কার্যকর ব্যবহারের কোনো জায়গা ভেবেও দেখছেন না। আর ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি কেন্দ্রীক ‘ওয়েব৩’ ইন্টারনেট সেবার ধারণাই নাকি তিনি বুঝতে পারছেন না, মাস্কের ক্ষেত্রে যা খুবই হাস্যকর।
মেটাভার্স চিন্তা প্রসঙ্গে মাস্কের মূল সমালোচনা হচ্ছে তিনি এই প্রযুক্তির ব্যবহারের কোন উপযোগিতা খুঁজে পাচ্ছেন না। সাধারণ ভোক্তাদের জন্য মেটাভার্স অভিজ্ঞতা হতাশাজনক হবে বলে মাস্কের আশঙ্কা। মাস্ক বলেন যে অবশ্যই নাকের উপর একটা টেলিভিশন বসানো কোনভাবেই সম্ভব না। আর এটি ব্যবহারকারীকে মেটাভার্সে নিয়ে যায় কি না এটাও তিনি নিশ্চিত নন। সারাদিন কেউ মুখের সঙ্গে স্ক্রিন লাগিয়ে রাখবে এবং সেখান থেকে বেড়োতে চাইবে না এমনটা ভাবতেই খুব আশ্চর্যজনক লাগছে তার। আগের তুলনায় ২০২১ সালে এসে এই প্রযুক্তিগুলো ‘মেটা’র মতো শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচারণার কারণে নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে।
ওয়েব৩ প্রযুক্তি শিল্পের আরেকটি আলোচিত প্রসঙ্গ। ওয়েব৩ নিয়ে আলোচনায় আলাদা গুরুত্ব দিয়ে বলা হচ্ছে, ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে নিজের কর্মকাণ্ড এবং কনটেন্ট থেকে সরাসরি লাভবান হবেন। ‘ওয়েব৩’ নিয়ে মাস্ক বেশি কিছু বলেননি, তবে এই প্রযুক্তি ভাবনাটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক আগেই। টুইটার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান জ্যাক ডরসিও ওয়েব৩ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ডরসির মতে ওয়েব৩ দিয়ে কোনো কিছুরই বিকেন্দ্রীকরণ হবে না, এমনকি ফেইসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে নতুন কোন এক প্রতিষ্ঠানের হাতে ক্ষমতা হস্থান্তর হবে।
মেটাভার্স ও ওয়েব৩ সমালোচনায় মেটাভার্স সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। ওয়েব৩ নিয়ে সমালোচনা হলেও মেটারভার্সের তুলনায় কমই বিপদজনক। মার্ক জাকারবার্গ ব্যবহারকারীদের নিমজ্জিত করার আশায় নানা কৌশল অবলম্বন করেন ও ফেসবুককে আরো চমৎকার প্পাটফর্ম বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদিও সে তার কিছুই করেননি। ফেসবুককে (বর্তমানে মেটা) মেটাভার্স করার পরিকল্পনা তিনি বহু আগে করে রাখলেও বর্তমানে এখনো সে বিষয়ে কোন পরিবর্তন আসেনি। সম্প্রতি মেটা নানান রকম সমলোচনার মুখে পড়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্বেষ, ভ্যাক্সিন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোসহ নানান রকম মিথ্যাচার ছড়ানো হয় এই প্লাটফর্মে।
এছাড়াও মেটার সাবেক কর্মী বেশ কিছুদিন আগে প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার তথ্য ও কর্মীদের উপর নির্যাতনের কথা ফাস করেন। বিভিন্ন রকম অভিযোগ আসা সত্ত্বেও কোন প্রতিক্রিয়া না করে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায় মেটা। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল কেবল মুনাফা অর্জন।