ল্যাপটপের পর বহনযোগ্য এবং ওজনে তুলনামূলক হাল্কা ইলেকট্রনিক ডিভাইস হিসেবে ট্যাবলেট এখন গ্রাহকের পছন্দের তালিকায়। তাই গ্রাহকের পছন্দের কথা মাথায় রেখে বাজারে এসেছে ওয়ালটন 10p একটি বাজেট ট্যাবলেট যা ওয়ালটনের তৈরি এই যাবৎকালের সেরা। বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া এই ট্যাবলেট বিগত সময়ের মডেল গুলির তুলনায় নিঃসন্দেহে উন্নত। এই আর্টিকেলটিতে আমরা ওয়ালটন ১০p সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ওয়ালটন ১০p এর বাক্সে যা যা থাকছে
- বিশাল আকারের চমৎকার এই ডিভাইসটিতে থাকছে-
- একটি স্ক্রীন প্রটেক্টর
- ট্যাব
- কেইস
- চার্জার
- এবং একটি ইউএসবি টাইপ-সি চার্জার।
টাইপ-সি এর চার্জারটি ১০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। যদিও কেইসটি যথেষ্ট মানসম্পন্ন, কিন্তু স্ক্রিন প্রটেক্টরটি স্ক্র্যাচ হতে সুরক্ষা ছাড়া আর বাড়তি কোন সুরক্ষা দিবে না। ট্যাবটির ব্যাক প্যানেল ধাতুর তৈরি হলেও এর সাইডগুলি প্লাস্টিকের তৈরি। ট্যাবটি বহন করতেও বেশ সাচ্ছন্দ বোধ হয়, যদিও এর ওজন ৫১০ গ্রাম। ট্যাবের ডান পাশে রয়েছে ভলিউম বাটন এবং একটি পাওয়ার বাটন এবং ডান সাইডে রয়েছে সিম স্লট।
ডিসপ্লে
ট্যাবটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১০.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে। বিশাল আকারের এই ট্যাবটির ভিডিও ১২০০p (১৯২০×১২০০ ফুল এইচডি) আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে। এর সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস ৪৮০ নিটস এবং এটি ৯২% ডিসিআইপি৩ কালার গ্যামাট প্রদর্শন করতে সক্ষম। সোজা কথায় এর কালার অত্যন্ত সুন্দর এবং বেশ উজ্জ্বল দেখতে। যদিও এটিতে ৬০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু, এতে স্ক্রিন ফ্লিকারিং এবং ঘোলাভাব মোটেও দেখা যায়নি। এর টাচ রেস্পন্স খুবই দ্রুত এবং এমোলেড না হলেও এর কালো রং প্রদর্শনের সক্ষমতা এবং হাই ডায়নামিক রেঞ্জ সক্ষমতা খুবই ভাল। এর ডিসপ্লে পূর্ববর্তী যেকোন ওয়ালটন ট্যাবলেট এমনকি বেশ কিছু ফোনের চাইতেও অধিক সুন্দর এবং সক্ষম।
শুরু থেকে ডিসপ্লেটির কালারটোন কিছুটা ওয়ার্ম লক্ষ্য করা যায় যা অনেকে পছন্দ করেন আবার অনেকে করেন না। তাই আপনি চাইলে ডিসপ্লে সেটিং হতে মিরাভিউ এর মাধ্যমে সূক্ষ্ণভাবে ডিসপ্লের টোন উজ্জ্বলতা এবং কন্ট্রাস্ট বাড়াতে বা কমাতে পারবেন। এই সুযোগটি আবার শাওমি ইউজাররা বেশ উপভোগ করবেন। রাতে মুভি বা স্ট্রিমিং অ্যাপ ব্যবহার করার সময় অথবা স্বাভাবিক ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সময় চোখের ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্যে আই প্রটেক্ট নামের একটি ফিচার আছে যা ব্লুলাইট এর তীব্রতা কমিয়ে দেয়। এ ফিচার যদিও কমন কিন্তু ওয়ালটন এতে গুরুত্ব দেয়ায় তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
ডিসপ্লের ঔজ্জ্বল্য ঘরের মধ্যে একেবারে পারফেক্ট হলেও অনেকে যারা দিনের আলোতে বাইরে এই ট্যাব ব্যবহার করবেন তারা একটু সমস্যায় পড়তে পারেন। এই ট্যাবের ডিসপ্লে ঘরোয়া ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা। মাত্র ৪৮০ নিটস ব্রাইটনেস বাইরের পরিবেশের জন্য যথেষ্ট নয় যদি রোদের আলো প্রখর হয়। আমি আমার ফোন প্রায়ই বাইরে ব্যবহার করি এবং ৫০০ নিটস ব্রাইটনেস মাঝেমধ্যে দেখায় সমস্যা করে। ২০২১ সালের আইপ্যাড ১০.২ এর ডিসপ্লেতে ৫০০ নিটস সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে এই বাজেট ট্যাবলেটের ঔজ্জ্বল্য যথেষ্ট রয়েছে যদি বাজেট বিবেচনা করেন। আমার মতে এতে কমপক্ষে ৭০০ নিটস ব্রাইটনেস দেয়া উচিত ছিল। যদিও সেক্ষেত্রে ব্যাটারির খরচ বেড়ে যেত।
তবে যাইহোক, বাজেট বিবেচনায় ওয়ালটন ওয়ালপ্যাড ১০p এর ডিসপ্লে সেরার কাতারে পড়ে।
বিল্ড কোয়ালিটি
এই ট্যাবলেটটির লুক তুলনামূলকভাবে বেশ সুন্দর। যদিও 2021 এর ট্রেন্ড হচ্ছে সমান বেজেলের ডিসপ্লে এবং ইউনিবডি লুক, যার কোনটিই এই ট্যাবে নেই। কিন্তু তবুও সরাসরি দেখতে একে বেশ দেখায় এটি আপনি নিশ্চিত হতে পারেন। মেটাল ব্যাকপ্লেটটির কালার ঝলসে যাবে কিনা তা শুধুমাত্র ওয়ালটনের কোয়ালিটি কন্ট্রোলই বলতে পারবে, তবে এর কোটিং এবং ধাতুর মান বেশ ভালো বলে দাবি করেছে ওয়ালটন। তবে ইউনিবডি না থাকার ফলে এর কাঠামো বেশ দুর্বল বলা যায়। ট্যাবটির এক কোনায় ধরে উপরে তুলতেই এক ধরনের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ হয়। এই শব্দের কারণ ধরা যায় প্লাস্টিকের কাঠামো এবং বাড়তি ওজন। এতে অবশ্য চিন্তার কোন কারন নেই, কারণ আমরা আমাদের ইউনিট মাঝারি প্রেশারে বেন্ড টেস্ট পাশ করেছে।
পারফরম্যান্স
ওয়ালটন ওয়ালপ্যাড ১০p এর পারফর্মেন্স কাগজে কলমে তেমন একটি শক্তিশালী না হলেও বাস্তবে একটি ট্যাবের জন্যে যতটুকু শক্তির প্রয়োজন পড়ে তা এই ট্যাবলেটে রয়েছে। এর ভেতরে রয়েছে ১২ ন্যানোমিটার অক্টাকোর প্রসেসর + মালি জি৭২ জিপিইউ (হেলিও পি৬০) এবং ৪ অথবা ৬ জিবি এলপিডিডিআর এক্স র্যাম। এই চিপসেটটি স্ন্যাপড্রাগন ৬৬০ এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে কিন্তু স্ন্যাপড্রাগন ৬৬০ এর তুলনায় এর ব্যাটারি ইফিশিয়েন্সি কিছুটা বেশি। রেডমি নোট ৮ এর ৪ জিবি মডেলটির সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে। এর বাস্তব পারফর্মেন্স পূর্বের যেকোন ওয়ালটন ট্যাবের তুলনায় এমনকি যেকোন অ্যামাজন ফায়ারট্যাবলেটের তুলনায় এটি ভালো। এতে ১২৮ জিবি স্টোরেজ থাকায় বেশ সুবিধা হয়েছে যদিও এটি ইউএফএস ২.১।
অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে বেশ অপ্টিমাইজেশন ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে ল্যাগ ক্র্যাশ নেই বললেই চলে। অ্যাপ লঞ্চ এবং ইউজার ইন্টারফেস রেস্পন্স টাইম অত্যন্ত লো এবং স্প্লিটস্ক্রিন মাল্টিটাস্কিং ও স্বাভাবিক মাল্টিটাস্কিং খুবই দ্রুত। মোট কথা, এক অ্যাপ হতে আরেক অ্যাপে যাওয়া আসা, কপি-পেস্ট করা এবং দুটি অ্যাপ একত্রে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ট্যাবটি দারুন কাজ করে। গেমিং এর ক্ষেত্রে অবশ্যই এই ট্যাব উচ্চমানের হবে না, কিন্তু হাল্কা গেমিং এর ক্ষেত্রে এই ট্যাব যথেষ্ট ভালো কাজ করে। গেমিং এর ক্ষেত্রে কিছু স্ট্যাট নিচে তুলে ধরা হলো।
গেম টেস্ট
- সিমসিটি – হাই কোয়ালিটি – কোন ল্যাগ নেই
- ওশানহর্ণ – হাই কোয়ালিটি ৬০ এফপিএস – কোন ল্যাগ নেই
- ব্রল স্টার – হাই কোয়ালিটি ৬০ এফপিএস – কোন ল্যাগ নেই
- শ্যাডোগান ওয়ার গেইম – হাই কোয়ালিটি ৬০ এফপিএস – কিছুটা ল্যাগ করে
- শ্যাডোগান ওয়ার গেইম – মিডিয়াম কোয়ালিটি ৬০ এফপিএস – কোন ল্যাগ নেই
- প্লেয়ার আননোন ব্যাটলগ্রাউন্ড – মিডিয়াম কোয়ালিটি – কোন ল্যাগ নেই
বলে রাখা ভালো উপরের টেস্টগুলি ৪ জিবি র্যাম সহ মডেলটিতে করা হয়েছে। উপরের টেস্ট স্ট্যাটগুলি হতে আমরা বুঝতে পারি যে ট্যাবটি গেমিং এর জন্যে অতটাও ভালো নয়, বেশিরভাগ মানুষই এই ট্যাবটি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করবে এবং সেক্ষেত্রে এই ট্যাবলেটটি দারুন পারফর্ম করবে। আসুন কিছু টেস্ট স্ট্যাট দেখা যাক বিভীন্ন অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে।
ওয়েবজিএল টেস্ট
- ফোটোপিয়া (ফটোশপ কম্পেটিবল ফটো এডিটর) – ক্রোম ব্রাউজার ওয়েবজিএল – বেশ ভালো ক্যানভাস পারফর্মেন্স এবং বেশ ভালো ইফেক্ট রেন্ডারিং টাইম।
- ওয়েবজিএল রিপোর্ট – ওয়েবজিএল ১ এবং ২.০ সমর্থিত
- ওয়েবজিএল স্ট্রেস টেস্ট – পাশ
অ্যাপ্লিকেশন টেস্ট
- ডব্লিউপিএস অফিস – দুর্দান্ত পারফর্মেন্স
- মেগা ক্লাউড – দুর্দান্ত পারফর্মেন্স
- নেক্সটক্লাউড – দুর্দান্ত পারফর্মেন্স
- জিমেইল – দুর্দান্ত পারফর্মেন্স
অতএব আমি মনে করি দৈনন্দিন বিভীন্ন টাস্কের জন্যে এই ট্যাবলেটটি সেরা এই বাজেটের মধ্যে।
অন্যান্য ব্যাপারসমূহ
ব্যক্তিগতভাবে আমি এই প্রথম কোন বাংলাদেশী ট্যাবলেট ব্যবহার করে আনন্দ পেলাম। এই বাজেটে এইরকম ট্যাবলেট বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া খুবই দুষ্কর। সুবিধা অসুবিধা মিলিয়ে এই ট্যাবলেটের সকল অ্যাসপেক্টই অসাধারন বলে মনে হয়েছে আমার। যদিও শব্দের তীব্রতা নিয়ে একটু কমপ্লেন থেকেই গেলো, তবুও এটি সহজেই ঠিক করা যায় কারন এই ট্যাবলেটটি থার্ড পার্টি ইকুয়ালাইজার সমর্থন করে। চার জিবি র্যাম হতে শুরু হলেও এর ওএস অপটিমাইজেশন এর কারনে এক্সপিরিয়েন্স খুবই ভালো। আশা করি ওয়ালটন পরবর্তীতেও আমাদের এইরকম দামে ভালো ট্যাবলেট দিতে থাকবে। ট্যাবটি সম্পর্কে দ্রুতই আরেকটি লেখা প্রকাশ করব আমরা, তার জন্যে গুগল নিউজে আমাদের ফলো করে রাখতে পারেন। পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।