Reading Time: 5 minutes

আপডেট: ওয়ালটনের এই প্রোডাক্টটি পূর্ন মেকানিক্যাল কিবোর্ড নয়, বরং এটি সেমি মেকানিক্যাল। ওয়ালটনের ভুল বিজ্ঞাপনের কারনে অনেকেই আশাহত হয়েছেন। এটি কেনার জন্যে অনুৎসাহীত করা হলো, বরং আমরা আরো বাজেট মেকানিক্যাল কিবোর্ড নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা করবআর্টিকেলে ত্রুটির জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

ওয়ালটনের নতুন মেকানিক্যাল কিবোর্ড যার মডেল WKM001WB বাজারে ছাড়া হয়েছে বেশকিছু সময় ধরে। ওয়ালটনের এটি প্রথম মেকানিক্যাল কিবোর্ড এবং বাংলাদেশের বাজারে এই প্রথম দেশীয় ব্র্যান্ডের মেকানিক্যাল কিবোর্ড। এর দাম ধরা হয়েছে ২৩৫০ বাংলাদেশী টাকা অর্থাৎ ২৭.৭৬ ইউএস ডলার। কিবোর্ডটি আপাতত শুধু বাংলাদেশের বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপালে ওয়ালটনের পন্য বেশ জনপ্রিয় বলা চলে। নিজ দেশ এর বাজারের বেশ একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ ওয়ালটনের দখলে, বিশেষত রান্না এবং বাড়ীঘরের জন্যে ইলেক্ট্রনিক পন্য বিক্রিতে। দেশীয় ব্র্যান্ড হওয়ায় ফলে বাংলাদেশে প্রতিযোগীতামূলক দামের পরিসরের মধ্যে পন্য বিক্রি এবং দেশের বিভীন্ন এলাকায় ই-প্লাজা (ওয়ালটনের নিজস্ব অথরাইজড শো-রুম) হওয়াতে তাদের জনপ্রিয়তা এবং বিক্রির হার উর্দ্ধমুখী।

সাধারনত রান্নাঘরের সামগ্রী যেমন ফ্রিজ, ব্লেন্ডার, ওভেন এবং চুলাসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্য যেমন এসি, ফ্যান, হিটার, গিজার বিক্রি করে ওয়ালটন। পাশাপাশি দেশীয় মার্কেটে মিডরেঞ্জ বা বাজেট মোবাইল ডিভাইসও বিক্রি করা শুরু করে ওয়ালটন। প্রায় বেশ সময় ধরে ওয়ালটন কম্পিউটার প্রোডাক্ট বাজারে আনতে শুরু করে। শুরুতে এক্সটার্নাল স্টোরেজ, কিবোর্ড, মাউস ও আস্তে আস্তে র‍্যাম, এসএসডি, মনিটর এমনকি সম্পূর্ন প্রিবিল্ট কম্পিউটার বাজারে আনা শুরু করে ওয়ালটন। মূলত দেশের বাজারে কম্পিউটার ও মোবাইল বাজারে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করাতে চায় এই ব্র্যান্ড।

পণ্যের বৈশিষ্ট

আজকের রিভিউ ওয়ালটনের প্রথম মেকানিক্যাল কিবোর্ড WKM001WB এর জন্যে। এটি একটি হাই প্রিসিশন মেকানিক্যাল কিবোর্ড যাতে রয়েছে ব্লু-সুইচ এবং একটি কালারের ব্যাকলিট। হাল্কা নীলাভ ব্যাকলিট যদিও অনেকের আশাভঙ্গ করবে, তবুও যারা কর্মজীবি এবং যারা আরজিবি পছন্দ করেন না, তাদের কাছে এটি বেশ ভালো লাগতে পারে। এতে ১০৪টি key রয়েছে এবং সুইচ পরিবর্তনযোগ্য। এটির লে-আউট শুধুমাত্র একটি (standard QWERTY layout) এবং এতে বাংলা লে-আউট রয়েছে যা খোঁদাইকৃত নয় (শুধুমাত্র ইংরেজী লে-আউট খোঁদাইকৃত)।

এটি আকারের দিক দিয়ে বেশ বড়সর একটি কিবোর্ড এবং স্ট্যান্ড ছাড়াই এটি বেশ উচু। তবুও স্ট্যান্ড এর মাধ্যমে আরেকটু উচ্চতা বাড়িয়ে নেয়া যায়। এর কি-ক্যাপগুলি মোটামুটি বড়, কিন্তু আমার আঙ্গুলের জন্যে একটু ছোট। সবগুলি চাবি বেশ ফাঁকা ফাঁকা করে বসানো যার ফলে ভুলভাবে চাপ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম, তবুও উপরের সারির তূলনায় নিচের সারি বেশ কিছুুটা চাপা। এর ক্যাপগুলি বেশ সুন্দর এবং মোটামুটি ভালো মানের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী। আপাতত ওয়ালটন শুধুমাত্র একটি রঙ এর অপশন রাখছে তাই এই কিবোর্ডে শুধু সাদা কি-ক্যাপ পাওয়া যাচ্ছে। এতে ময়লা সহজে ধরার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়।

তাছাড়া এতে একটি হাত রাখার প্যাড রয়েছে যা সংযুক্ত, অর্থাৎ খোলা যায় না এবং প্যাডটির এক অংশ বেশ পিচ্ছিল, তাই শান্তিমতো একপাশেই হাত রাখা যায়। এখন আসা যাক এর ফিচারগুলিতে। এই কিবোর্ডটি গেমিং এর জন্যে তৈরী করা হয়নি বলে রাখা ভালো, কারন এতে গেমার-ভাব নেই বললেই চলে। বরং ওয়ালটন এটি বাসা এবং অফিসে ব্যবহারের জন্যে উপযোগী বলে বিক্রি করছে। এতে আমার কোন অসুবিধা নেই, বরং অফিসের জন্যে অনেকেই মেকানিক্যাল কিবোর্ড খুজে থাকেন, তাদের জন্যে এটি একটি অপশন। এতে আরজিবি নেই, বরং একটি রঙের ব্যাকলিট রয়েছে, এবং এর চাবিগুলি অত্যন্ত দ্রুত কাজ করে। এতে ব্লু-সুইচের ট্যাকটাইল ফিডব্যাক পাওয়া যায় এবং এতে আওয়াজ তূলনামূলকভাবে কম।

এর কি রেসপন্স টাইম ০.০৮ সেকেন্ড এবং চাবির গভীরত্ব মিডিয়াম-হাই। এর চাবিগুলি অত্যন্ত ক্লিকি এবং এতে মোটামুটি সবগুলি প্রয়োজনীয় চাবি রয়েছে। এর ব্যাকলিট বেশ উজ্জ্বল এবং এবং বেশ ভালোভাবেই সবগুলি চাবি অন্ধকারে দেখা যায়। এতে অত্যন্ত ভালোভাবে টাইপিং করা যায় এবং এর চাবিগুলি চাপতে বেশ ভালো লাগে। এর প্যাডিং উচু হওয়ায় গভীরত্ব অধীক পাওয়া যায়, তাই টাইপিং এর সময় বেশ ভালো অনুভুতি হয় এই কিবোর্ডে। যদিও কি-ক্যাপগুলি ময়লা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তবুও ব্যাকলিট এর আলোয় বেশ ভালো দেখায় চাবিগুলি।

অসুবিধাগুলি

এখন আসি অসুবিধার অংশে। এই আর্টিকেলটি আমি লিখছি এই কিবোর্ড ব্যবহার করে, এবং এটি আমার প্রথম মেকানিক্যাল কিবোর্ড নয়। কিবোর্ডটি বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন দামে বিক্রি হলেও এর মূল্য সর্বোচ্চ ২৩৫০ টাকা। অর্থাৎ বাজারে সবচেয়ে কমদামে এই কিবোর্ডটি পাওয়া যাচ্ছে। আর এই দামের জন্যে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়েছে ওয়ালটনকে। এর ডিজাইন যদিও মোটামুটি ভালো, তবুও এটি দেখতে অতটা সুন্দর নয়। যেহেতু বাসা এবং অফিসে ব্যবহারের জন্যে তৈরী, সেহেতু এর ডিজাইন অনেক মিনিমাল রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

কিবোর্ডের খোঁদাই শুধুমাত্র ইংরেজীতে রয়েছে এবং বাংলার ক্ষেত্রে সিল্ক প্রিন্টিং ব্যবহার করা হয়েছে যা সময়ের সাথে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এর এলুমিনিয়াম ফ্রেম অনেকখানি ভারী এবং পার্শ্বে অপ্রয়োজনীয় সাইফাই ডিজাইন এলিমেন্ট রয়েছে যা অফিস বা বাসার পরিবেশের সাথে যায় না। সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে, বেশ কিছু ক্রেতা (আমি সহ) সুইচ সমস্যা পেয়েছে। অনেক ক্রেতাই একটি সুইচ নরম পেয়েছে যাতে চাপ দিলে ট্যাকটাইল ফিডব্যাক পাওয়া যায় না। তাছাড়াও এর ইন্ডিকেটর বাতিগুলি একটির সাথে আরেকটি ঢেকে যায় যার ফলে নাম-লক এবং ক্যাপস-লক এর ইন্ডিকেটর বাতি সহজে বোঝা যায় না। এটি আমার কাছে একটি বড় রকম সমস্যা।

আপডেট: আপনি যদি কোন একটি চাবি নরম পান, তবে আপনি চাবিটি ঘুরিয়ে সেট করতে পারেন। এতে সুইচ পুনরায় কাজ করা শুরু করবে।

যদিও ওয়ালটনের এটি প্রথম মেকানিক্যাল কিবোর্ড, তবুও ওয়ালটন এটির প্রচার চালাচ্ছে না, কারন সম্ভবত এটি ওয়ালটনের একটি পরীক্ষামূলক বা ট্রায়াল বিক্রয় ক্যাম্পেইন এবং ওয়ালটন এটির ফিচারসেট কম ইচ্ছে করেই রাখতে চাচ্ছে। যদি এটি সত্যি হয় তবে আমরা দ্রুতই এই কিবোর্ডের পাশাপাশি অন্যান্য মেকানিক্যাল কিবোর্ডও দেখতে পাবো যা এর চাইতে ভালো হবে। হয়তো আরেকটু দামে আমরা গেমিং কিবোর্ড-সহ আরো অনেক ধরনের মেকানিক্যাল দেখতে পাবো। হয়তো ওয়ালটন এই কিবোর্ডের মাধ্যমে নতুন একটি লাইন-আপ চালু করতে যাচ্ছে।

আমার কি এটি কেনা উচিৎ?

এর উত্তর নির্ভর করে আপনার চাহিদার ওপর। আপনি এই প্রথম মেকানিক্যাল কিবোর্ড কিনতে যাচ্ছেন? আপনি কি কমদামে ট্যাকটাইল কিবোর্ড চান? আপনি কি হোম-অফিসের জন্যে উপযুক্ত একটি কিবোর্ড খুজছেন? এইসকল ক্ষেত্রেই ওয়ালটনের এই কিবোর্ডটি বেশ ভালো কাজে আসবে। যারা মেমব্রেন কিবোর্ড হতে মেকানিক্যাল কিবোর্ডে এই প্রথম যাচ্ছেন, তাদের কাছে অবশ্য এটি মোটেও খারাপ লাগবে না, বরং অনেকখানি পরিবর্তন অনুভব করতে পারবে। কিন্তু যারা দামি মেকানিক্যাল কিবোর্ড ব্যবহারে অভ্যস্থ এবং যারা গেমার, তাদের এই কিবোর্ড একদমই ভালো না লাগতে পারে, যেহেতু এতে গেমিং ফিচার, আরজিবি এবং ম্যাক্রো-কি সমূহ নেই। এবং এর তারটি অতটাও উচ্চমানের নয়, এবং এতে ব্রেডেড ইনসুলেশন নেই।

উপসংহার

বর্তমানে মেকানিক্যাল কিবোর্ডের বাজার সয়লাব বিভীন্ন রকম ব্র্যান্ড এর প্রোডাক্টে। মূলধারার ব্র্যান্ডের পাশাপাশি কিছু নামহীন ব্যান্ডও বাজারে কিবোর্ড বিক্রি করছে। মূলত একেবারে সর্বনিম্ন মূল্য ৩ হাজার দিয়ে বিভীন্ন চাইনিজ ব্র্যান্ডগুলি মেকানিক্যাল কিবোর্ড বিক্রি করছে ওয়ারেন্টি ছাড়াই। যেহেতু মেকানিক্যাল কিবোর্ডের চাবি এবং সুইচ পরিবর্তন করা যায়, সেহেতু অনেকে মানিয়ে নিচ্ছেন অফব্র্যান্ডেই। কিন্তু দেশের বাজারে মূলধারার কোন একটি ব্র্যান্ড বিগত সময়ে খুবই কমদামে মেকানিক্যাল ছেড়েছে, ব্যাপারটি অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন।

একে তো ২৩৫০ টাকা মেকানিক্যাল কিবোর্ড হিসেবে বেশ প্রতিযোগীতামূলক, তারওপর এর সুইচ কোয়ালিটিও খারাপ নয়। ওয়ালটন WKM001WB যদিও অতটা ফিচারযুক্ত নয় এবং এটি গেমারদের জন্যে নয়, তবুও এটি একটি নির্দিষ্ট দলের জন্যে বেশ ভালো একটি অপশন। অনলাইন মার্কেটপ্লেস হতে এটি কিনতে গেলে মাঝেমধ্যে সুইচ সমস্যা পেতে পারেন, তাই আমাদের পরামর্শ আপনার এলাকায় ওয়ালটন প্লাজা থাকলে সেখান থেকে নিজে দেখে কিনতে পারেন। সাধারনত প্লাজা হতে কিনলে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ও পাওয়া যায়।

ধন্যবাদ আমাদের রিভিউ পড়ার জন্যে, আশা করি এই আর্টিকেলটি তথ্যপূর্ন ছিলো। এই প্রোডাক্ট সম্পর্কে যে কোন প্রশ্ন জানান কমেন্টে, এবং আমি তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.