ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহারকারীকে ট্র্যাকিং করে তাদের বিভিন্ন তথ্য তাদের কাছে জমা রাখে। এরকম ট্র্যাকিং করে তথ্য সংগ্রহ কমিয়ে আনার জন্য গুগলের পরিকল্পনা এবার অ্যান্ড্রয়েড-ভিত্তিক স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। ডেটা ট্র্যাকিং কমিয়ে আনার এই পরিকল্পনাটিকে গুগল প্রাইভেসি স্যান্ডবক্স নামে অভিহিত করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিজ্ঞাপনদাতারা ব্যবহারকারীর যে পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে সেগুলো কমিয়ে আনা।
বাজারে দুই প্রকার অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোন পাওয়া যায়। এর মধ্যে অ্যান্ড্রয়েডের নির্মাতা গুগল এবং আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম আইওএস-এর নির্মাতা অ্যাপল। এদের মধ্যে অ্যাপল তাদের নতুন অপারেটিং সিস্টেমে ডেটা ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার অপশন দেয়া হয়েছে। কুকি নামক তৃতীয় পাক্ষিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। আর এই একই পদ্ধতি গুগল ও প্রয়োগ করে যাচ্ছিল এতদিন।
যদিও গুগল বলেছে যে তারা ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রাউজারে কুকি ব্যবহার করা বন্ধ করে দেবে। আর এবারের ঘোষণায় গুগল বলছে তারাও উক্ত সেই একই নীতিমালা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপের বেলাতেও প্রয়োগ করবে। প্রাইভেসি স্যান্ডবক্স নামের এই প্রকল্পের ফলে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে একই অনুমতি সকল অ্যাপের জন্য ব্যবহারের পথ বন্ধ হবে। তবে গুগল এ ব্যাপারে এখন ব্যাখ্যা দেয়নি। গুগল বলছে যে তারা ব্যবহারকারীর ডেটা ট্র্যাকিং বন্ধ ছাড়াও এমন প্রযুক্তিও খুঁজছে যা গোপন তথ্য সংগ্রহের সম্ভাবনা কমিয়ে আনে।
এর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞাপন সফটওয়্যার ডেভলপার কিট এর সঙ্গে অ্যাপগুলোর যোগাযোগের নিরাপদ উপায় বের করা। গোপনীয়তা বান্ধব ব্যবস্থায় যেতে যুক্তরাজ্যের কম্পিটিশনস মার্কেট অথরিটিনগুগলের উদ্যোগটির ওপর নজর রাখছে। গুগল ব্রাউজারে গোপনীয়তা বাড়ানোর উদ্যোগটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া বিষয়ে সংস্থাটির বক্তব্য দেয় যে তারা এর ওপরও কাছ থেকে নজর রাখবে। এছাড়াও এর বিস্তারিত বিষয়গুলো সম্পর্কে গুগলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো ডেটা ট্র্যাক করার জন্য মোবাইল অ্যাপে তাদের কোড যোগ করে। অর্থাৎ, ফোনে নিজেদের বিজ্ঞাপনী কোড রাখার বেলায় অ্যাপল নতুন নিয়ম চালু করেছে যাতে প্রতিবার এই কোড এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর অনুমতি নিতে হয়। যদিও প্রায় সব ব্যবহারকারীই উক্তি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা গেছে। এখন গুগল বলছে তারাও একই রাস্তা অবলম্বন করছে। স্মার্টফোন বাজারে শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ
অ্যাপলের দখলে।
বাকি ৮৫ ভাগ বাজার অ্যান্ড্রয়েডের দখলে। ফেসবুক প্রতিষ্ঠান মেটা বলছে যে অ্যাপলের পরিবর্তনের জন্য তাদের বছরে প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের আয় কমে যাবে। গুগলের এই উদ্যোগ এর ফলে তারা সরাসরি ব্যবহারকারীর ডেটা ট্র্যাক করতে পারবে না, ট্র্যাকের পূর্বে অবশ্যই ব্যবহারকারীর অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হবে। যদিও গুগল অ্যাপলের পন্থা অবলম্বন করছে তবে অ্যাপল অনুমতি ছাড়াও বিভিন্ন কৌশলে এখনো ব্যবহারকারীর ডেটা ট্র্যাকিং করে আসছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলে যে এই সিদ্ধান্ত মেটার মতো প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি শিক্ষা দিতে পারবে। মেটার মত গুগল ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতো করতো। ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই তাদের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করার পেছনে একমাত্র দানব প্রতিষ্ঠান মেটাকেই ধারণা করা হয়। এর মাধ্যমে মেটার মোটা অংকের মুনাফা আসতো। এমনকি ট্র্যাকিং ব্যাপারে আগে থেকেই অ্যাপল এবং গুগলের মধ্যে বাজারে প্রতিযোগীতাও চলে আসছে।