বাইন্যান্সের পাশাপাশি যে কয়টি ক্রিপ্টোমুদ্রা এক্সচেঞ্জকে প্রথম সারির বলে বিবেচনা করা হয়, এফটিএক্স তাদের অন্যতম। বেশ কিছুদিন আগেও টুইটার দেউলিয়া হবার আশঙ্কা করেছিলেন টুইটারের এসময়কার নির্বাহী ইলন মাস্ক। তবে, তার চেয়েও বড় সঙ্কটে পড়েছে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ এফটিএক্স। মার্কিন আইন অনুসারে চ্যাপ্টার ১১ দেউলিয়া সুরক্ষা চেয়ে সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রাইড। চ্যাপ্টার ১১ দেউলিয়া সুরক্ষার আবেদন মানেই যে কোম্পানি পুরোপুরি লোকসানের মুখে পড়ে গেছে এমন নয় বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
পাওনাদারের অর্থ ফেরতের পরিকল্পনার পাশাপাশি কোম্পানিকে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেয় এটি। তবে, এই অবস্থান থেকে ফিরে আসা বেশ জটিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ পর্যায়ে গেলে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। দেউলিয়া ঘোষণার জন্য জমা দেওয়া নথিতে নাম আছে এফটিএক্স ট্রেডিং, এফটিএক্স ইউএস, আলামেডা রিসার্চসহ এই গ্রুপের আরও প্রায় একশ ৩০টি কোম্পানি। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেটের প্রতিবেদন বলছে, এফটিএক্স অস্ট্রেলিয়া ও এফটিএক্স এক্সপ্রেস পে এর মতো কয়েকটি কোম্পানি এই আবেদনের বাইরে রয়েছে।
এক বিবৃতিতে কোম্পানির নতুন সিইও তৃতীয় জন জে. রে বলেন, চাপ্টার ১১ এর তাৎক্ষণিক সুবিধা হলো, এফটিএক্স গ্রুপকে পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও অংশীদারদের সর্বাধিক অর্থ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া তৈরির সুযোগ দেওয়া। বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারির পর ডুবতে বসা মার্কিন কর্পোরেট জায়ান্ট এনরনের শেষ পর্যায়ে সম্পদের তরলীকরণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন জন জে. রে। এফটিএক্স গ্রুপের বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ আছে, যা কেবল গোছানো ও যৌথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
তিনি প্রত্যেক কর্মী, গ্রাহক, পাওনাদার, চুক্তিধারী, অংশীদার, বিনিয়োগকারী, সরকারী কর্তৃপক্ষ ও অন্যদের আশ্বস্ত করতে চান যে অধ্যবসায়, পুঙ্খানুপুঙ্খতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এটি পরিচালনা করবেন তিনি। অংশীদারদের ধৈর্যশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জন জে. রে। এর সমর্থনে তিনি বলেন, ঘটনাগুলো বেশ দ্রুততার সঙ্গে ঘটছে। আর কেবল সম্প্রতিই তাদের নতুন দল এতে যোগ দিয়েছে। এদিকে, বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এফটিএক্স নিয়ে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা এসইসি।
বিচার বিভাগ কোম্পানিটির কার্যক্রম কবে থেকে নজর রাখছে, সেটি পরিষ্কার নয়। তবে, এসইসি এর তদন্তের বিষয়টি জোড়ালো হয়েছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। বৃহস্পতিবার এ রকম পরিস্থিতির কারণে টুইটারে ক্ষমা চান ব্যাংকম্যান-ফ্রাইড। তিনি আরও বলেন, তহবিল বাড়াতে ও ব্যবহারকারীর জন্য সঠিক কাজ করতে নিজের সাধ্যমতো সবই করছেন তিনি। তবে, এর একদিন পরই পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এর মানে এই নয়, এতে এইসব কোম্পানি শেষ হয়ে গেছে বা এর গ্রাহকদের মূল্যমান ও তহবিল প্রদানের সক্ষমতা হারিয়ে গেছে।
অন্যান্য উপায়ে এতে সামঞ্জস্য আসতে পারে। নথি দায়েরের পর টুইট করে কথাগুলো জানান ব্যাংকম্যান-ফ্রাইড। ব্যবহারকারীরা যেন দ্রুত তাদের অর্থ ফেরত পান সেটি স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, এফটিএক্স এর সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে শীঘ্রই বিস্তারিত জানাবেন তিনি। নিজেদের এফটিটি টোকেনের মূল্যপতনের পর থেকেই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে কোম্পানিটি। এরইমধ্যে নিজস্ব ক্রিপ্টোমুদ্রা তুলে ফেলেছেন অনেক কারবারী।
এফটিএক্স তারল্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে, বিভিন্ন প্রতিবেদনে এমন খবর উঠে আসার পর প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি বাইন্যান্সের সিইও চ্যাংপেং ঝাও জানিয়েছেন, তার কোম্পানি প্রায় ৫৩ কোটি ডলার সমমূল্যের এফটিটি বিক্রি করবে। এর ফলেই, টোকেনটির মূল্যমান কমে গেছে। পরবর্তীতে, কোম্পানি অধিগ্রহনের মাধ্যমে এফটিএক্স কে বাঁচাতে রাজী হয়েছিল বাইন্যান্স। তবে, এর একদিন পর চুক্তিটি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয় তারা। পাশাপাশি, এর পরিচালনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে কোম্পানিটি।