সম্প্রতি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের একটি নতুন আপডেট উইন্ডোজ ১১ কিছুদিন আগে লিক হয়েছে। আগামী ২৪ তারিখ রিলিজ হওয়ার কথা থাকলেও তার একটি উন্নয়ন চলাকালীন বিল্ড বের হয়ে গিয়েছে কিছুদিন আগেই। অর্থাৎ এমনটিও হতে পারে যে মাইক্রোসফট অফিসিয়াল ভাবে যে ভার্সন টি নিয়ে আসবে সেটি সাথে এই ভার্সন টির মিল নেই। কিন্তু তবুও এটি আমাদের অগ্রিম জানান দেয় যে উইন্ডোস ১১ কি কি নিয়ে আসতে পারে। অবশ্য বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে এখানে যেমন: সেটাপ প্রসেসে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, টাস্কবারের আইকন গুলো Chrome OS বা mac OS এর মতো মাঝখানে আনা হয়েছে, স্টার্ট মেনুর লেআউট পরিবর্তন ইত্যাদি।
উইন্ডোজ ১০ এর আপডেট এর মতো এবারও উত্তেজিত হওয়ার মতো বেশ কিছু আকর্ষণীয় পরিবর্তন রয়েছে। কিন্তু লিক হওয়া বিল্ডটি ব্যবহার করার পর আমার মনে হলো এটি আহামরি কোনো কিছু না যাকে উইন্ডোজ ১১ নামে আখ্যায়িত করা যায়। উইন্ডোজ তাদের পূর্ববর্তী আপডেটগুলোতে প্রতিবারই প্রায় আশ্চর্য মূলক নতুন কিছু নিয়ে এসেছে যেমন: উইন্ডোজ ১০ এ Directx 12, সিস্টেম অ্যাপ গুলোর ইন্টারফেস পরিবর্তন করেছে। কিন্তু এর প্রধান ফ্রেমওয়ার্কে বৃহৎ কোনো পরিবর্তন আসেনি প্রায় ৩০ বছর ধরে। কিন্তু তবুও এটি উল্লেখযোগ্যভাবে বিবর্তন হচ্ছে দিনে দিনে।
উইন্ডোজ ১১ এর আপডেট টি সেই সমস্ত পরিবর্তন নিয়ে এসেছে যেগুলো আমরা উইন্ডোজ ১০ এর আপডেট এই দেখতে পারতাম। যদিও এটি শুধু মাত্র একটি ডেভেলপার ভার্সন, সুতরাং এমনটিও হতে পারে যে অফিসিয়াল আপডেট এ নতুন কিছু রয়েছে যা এখানে এখনো দৃশ্যমান নয়। তাছাড়া উইন্ডোজ ১১ এর যে যে বিষয় গুলো পরিবর্তন করা উচিৎ ছিলো তার অনেক কিছুই সরানো হয়নি। এর ইন্টারফেস এবং সিস্টেম অ্যাপলিকেশন গুলো এখনো সেই উইন্ডোজ 7 এমনকি উইন্ডোজ XP এর যুগের।
ফাইল ম্যানেজার, যা কিনা উইন্ডোজ এর একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ সেটি এখনো অপরিবর্তিত। সর্বশেষ উইন্ডোজ ৮ এ এর ইন্টারফেস পরিবর্তন করা হয়েছিলো। টাস্ক ম্যানেজারও আগের উইন্ডোজ ৮ এবং ১০ এর মতো দেখতে। পুরনো cmd.exe কমান্ড লাইন এখনো রয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সেটিং গুলো এখনো কন্ট্রোল প্যানেল থেকে সেট করে নিতে হয় অর্থাৎ সেগুলো উইন্ডোজ সেটিং অ্যাপ এ আনা হয়নি।
নতুন আপডেট এ উইন্ডোজ ১০ এর কিছু জঘন্য ট্রেন্ড রয়েই গিয়েছে যেমনঃ উইন্ডোজ ১১ হোম এ লোকাল একাউন্ট খোলা যাচ্ছে না। এটি আপনাকে মাইক্রোসফট একাইন্ত ব্যবহার করতে বাধ্য করছে। তবে উইন্ডোজ ১১ প্রো তে আবার এ বিষয়টি ছিলো না। মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ১০ এর আপডেট এর মাধ্যমে সকলকে অনলাইন একাউন্ট ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং উইন্ডোজ ১১ ও একই পালের নৌকা। হয়তো একসময় এই অপশন টি বন্ধই করে দিবে তারা।
উইন্ডোজ ১১-এর লিক হওয়া বিল্ড টি দেখায় যে মাইক্রোসফট এখনও উইন্ডোজের মূল কার্যাবলী এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলির পুনরুদ্ধার করতে রাজি নয়, একটি সাধারণ কারণে – বড় সংস্থা পরিবর্তন পছন্দ করে না। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ XP এর মুক্তির প্রায় ১৩ বছর পরে, এপ্রিল ২০১৪ সাল পর্যন্ত এর মূলধারার সাপোর্ট বাড়িয়েছিলো, কেননা অনেক ব্যবসায়ীরা তখনও সেই পুরানো অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহার করে চলেছিল। তাছাড়া মাইক্রোসফট এখনো উইন্ডোজ ৭ প্যাচ করে চলেছে যা কিনা এক দশক আগে উইন্ডোজ ৮ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিলো।
উইন্ডোজ ১০ এ আপগ্রেড করা সংস্থাগুলিরও প্রায়শই লেগ্যাসি সফ্টওয়্যার চালানো দরকার পরে। যার কারণে উইন্ডোজ খুব পুরানো অ্যাপ্লিকেশনগুলির সাথেও সামঞ্জস্য বজায় রাখে। এটি একটি ভোগান্তির বিষয় কেননা একারণে উইন্ডোজ অনেক সময় মূল অ্যাপ্লিকেশন এবং সিস্টেমের উপাদানগুলো পরিবর্তন করতে পারে না। বিশেষ কিছু কারণে উইন্ডোজ ৮ এর পর থেকে কেবলমাত্র ফাইল এক্সপ্লোরার সামান্য কিছু উন্নতি পেয়েছে। উইন্ডোজের আধুনিক সংস্করণগুলিতে ইতিমধ্যে অনেক পুরানো অ্যাপ্লিকেশন এবং গেমগুলি সমস্যা করছে এবং অপারেটিং সিস্টেমের বড় রকমের পরিবর্তন বেশি সফটওয়্যারকে প্রভাবিত করবে।
উইন্ডোজের বড় রকমের আপডেটের জন্য একমাত্র উপায় ছিল ৩২ বিটের সফটওয়্যারগুলোকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে রেখে তাদেরকে পরিচালনা করা। অর্থাৎ কোন ভার্চুয়াল মেশিন ব্যবহার করে লেগেসি অ্যাপ গুলো ব্যবহার করা। এই উদ্দেশ্যকে লক্ষ করে তারাও উইন্ডোজ ১০x নিয়ে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তা বোঝার হচ্ছে না তার পরিবর্তে আমরা পাচ্ছি সেই পুরনো পরিচিত উইন্ডোজ এক নতুন নাম উইন্ডোজ ১১ তে।
একটা সফট হয়তো কোনো বড় পরিবর্তনের কথা ভেবে রেখেছে কিন্তু উইন্ডোজ 11 আপডেটে আমরা সেই পরিচিত উইন্ডোজ 10 পাচ্ছি নতুন নামে। কয়েকটি ইন্টারফেসের সংমিশ্রণে তৈরি সেই একই বাগ এবং ইস্যু নিয়ে। যা কিনা তারা যুগ যুগ ধরে ডেভেলপ করে আসছে। আমার মতে মাইক্রোসফ্ট পারে, এবং পারা উচিত আরো ভালো কিছু করতে। সকলকে ধন্যবাদ।
credit / main: XDA