Reading Time: 5 minutes

টেসলা প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক নিয়ম নীতির অগ্রাহ্য করে সাফল্যের ছোয়া পেতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সম্প্রতি মার্কিন রাজনীতি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য আর যৌন হয়রানির অভিযোগ টেসলার জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। একজন বিমানবালা আলোচিত ও সমালোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেন। ওই ঘটনা চেপে যেতে স্পেসএক্স ভুক্তভোগী ওই নারীকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে খবর ছেপেছে।

ইনসাইডারের দাবি, উক্ত বিমানবালাকে আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বদলে মাস্ক এবং তার দুই প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ও টেসলা নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ না করার এবং যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘চুক্তি’ করতে হয়েছিল। বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন বলছে যে ২০১৮ সালে স্পেসএক্সের মানবসম্পদ বিভাগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উক্ত বিমানবালা অভিযোগ করেন। স্পেসএক্স কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে শুরুতেই মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে অভিযোগ মীমাংসা করার চেষ্টা করে।

যদিও বিমানবালা নিজে অভিযোগ না করলেও তার এক পরিচিত বন্ধু অভিযোগটি তোলেন। বিজনেস ইনসাইডার জানায় যে যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মাস্কের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছিল। মাস্ক ইমেইলে বলেছেন যে এর উত্তর দিতে তার আরও সময় প্রয়োজন এবং এ গল্পে আরও অনেক কিছু আছে। তবে তার দাবি, এ অভিযোগের সাথে রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে মাস্ক টুইট করে মিথ্যাবাদী অপবাদ দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা বিমানবালার বন্ধুকে চ্যালেঞ্জ করছেন।

সে যদি তাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে থাকে তাহলে কী দেখেছে সে দাগ বা চিহ্ন শুধু একটা বর্ণনা দিক, যেটা সাধারণ মানুষ জানে না। বিজনেস ইনসাইডারের দাবী আড়াই লাখ ডলারের মীমাংসা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মাস্ক নিজেও উপস্থিত ছিলেন। চুক্তির শর্ত ছিল, আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বদলে যৌন হয়রানির অভিযোগে কোনো মামলাও করতে পারবেন না এবং মাস্ক বা তার মালিকানাধীন স্পেসএক্স বা টেসলা প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী মুখ খুলতে পারবেন না। বিজনেস ইনসাইডার লিখেছে যে মাস্কের মালিকানাধীন দুই কোম্পানি টেসলা ও স্পেসএক্সে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে কর্মীরা আগেও অভিযোগ তুলেছিলেন। 

আর মানবসম্পদ বিভাগের ব্যর্থতা নিয়ে টেসলা একাধিক মামলা লড়ছে। টেসলার মানবসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ায় এমন আচরণের মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ আছে। স্পেসএক্সের এক কর্মী অভিযোগ করেছেন, এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কোম্পানি। আবার এরইমধ্যে আবার প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি ডলারে প্রভাবশালী সামাজিক মাধ্যম টুইটার কেনা নিয়ে আলাপ আর দরকষাকষি চলছে।

সে সময় মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের বদলে রিপাবলিকানদেরই সমর্থন দেবেন। তার মতে ডেমোক্রেটিক দলটি বিভাজন আর ঘৃণার চর্চা করছে। পুঁজিবাজার থেকেও চাপ এসেছে। ডাও জোন্স পুঁজিবাজারের প্রভাবশালী এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ইএসজি তালিকা থেকে টেসলার নাম বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর তালিকা থেকে বাদ যাওয়াতে বৈদ্যুতিক গাড়ির এই শীর্ষ নির্মাতা পিছিয়ে গেল।

টেসলা আর মাস্ক এতটাই ঘনিষ্ট যে টেসলাই মাস্ক এবং মাস্কই টেসলা। টেসলার বাদ পড়ে যাওয়া ঘটনা ছাড়াও তিনি ধারাল মন্তব্যের শিরোনাম হিসেবে গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছেন। ধারাল মন্তব্যের ধারে তিনি টেসলার ক্ষতি করছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে এখন, বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ায়। এক সমালোচককে শিশু নিপীড়ক বলে পরে সেজন্য ক্ষমা চাওয়া মাস্ক এখন নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি। গত বছর গোটা মার্কিন বাজারে টেসলার গাড়ি নিবন্ধনের শতকরা ৪০ ভাগ হয়েছে।

প্রভাবশালী কোম্পানির তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর টেসলা নির্মাতা ইলন মাস্ক বলেন যে এই ইএসজি বা এনভায়রনমেন্টাল সোশাল অ্যান্ড গভর্নমেন্ট ইসডেস্ক হলো আসলে এক প্রকার প্রতারণা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যেখানে তেল-গ্যাস উৎপাদক কোম্পানির নাম এই তালিকায় রয়েছে, সেখানে কী করে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতার নাম তারা বাদ দিতে পারলো। ক্যালিফোর্নিয়া নিউ কার ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য বলছে যে গেল বছরে সেখানে টেসলার বিক্রি বেড়েছে শতকরা ৭০ ভাগ।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

এটি গোটা মার্কিন বাজারের সাড়ে ছয় শতাংশ। আর এখন টুইটারে টেন্ডিং অংশে টেসলা বয়কটের হ্যাশট্যাগ চলে এসেছে। শুক্রবারই শতকরা প্রায় নয় ভাগ এক ধাক্কায় টেসলা কোম্পানির শেয়ার মূল্য পড়ে যায়। বাজারে প্রায় ছয় হাজার ছয়শ কোটি ডলার টেসলার মূল্য থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে। গত বছরের আগস্টের পর টেসলা শেয়ারের মূল্য এতটা কমার নজির আর নেই। টুইটার কেনার বিশ্লেষকরা একে বলছেন যে এটি বিভ্রান্তিকর, যদিও মাস্ক নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন তার মনোযোগের কেন্দ্র টেসলাই।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে বিনিয়োগকারীরা হয়তো বাজারে টেসলার শক্ত অবস্থানের কারণে এখনই টেসলার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করবেন না। তবে তার মানে এই নয় যে লোকজন হতাশ হচ্ছেন না। স্নোবুল ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী টেইলার ওগান বলেন যে তাদের কাজ মোটামুটি ভাল হলেও দুঃখজনক হয়ে ওঠে যখন ওইসব ভালো কাজ ইলন মাস্কের এরকম হেয়ালীপনা এবং অনৈতিকতার কারনে জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলে। টেইলার তার কোম্পানিও টেসলায় বিনিয়োগ করেছে।

জে ইয়েহ নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী বলেন যে অতীতে পরিবেশবান্ধব ব্যবসার জন্য আমি তার প্রশংসা করেছি, বিশেষ করে তিনি জ্বালানী সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা দেখিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনি দিন দিন ট্রল হয়ে উঠছেন। তিনি নিজেকে একজন আইনজীবী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন শহরে বসবাস করা জে বলছেন, তিনি তার টেসলা অর্ডার বাতিল করবেন। তিনি হতাশ হয়ে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে মাস্ক পণ্যমানের জন্য আর আগের মতো দায়িত্বশীল।

জার্মানি থেকে উটে বাউয়ার নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী জার্মান ভাষায় মাস্ককে লিখে জানান যে তিনিও মাস্কের টেসলা অর্ডার বাতিল করেছেন। ‎তবে টেসলার কোনো অর্ডার আসলেই বাতিল হয়েছে কিনা তা রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি। ‎‎বলেন প্রযুক্তি প্রতিভা খোঁজার এজেন্সি ক্যাডারের প্রতিষ্ঠাতা জেসন স্টোমেল‎ জানান টেসলা এবং স্পেসএক্স কর্মীরাও মাস্কের ডেমোক্রেটিক পার্টিবিরোধী মন্তব্যের কারণে খানিকটা বিচলিত এবং হতাশ হয়ে উঠতে পারেন, কারণ ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রযুক্তি কর্মীরা সাধারণত রাজনীতির প্রশ্নে উদারপন্থী।

বলেন জেনারেল মোটর্সের সাবেক গ্রুপ ভাইস প্রেসিডেন্ট জন স্মিথ বলেন কাজের পরিবেশে যেখানে কর্মীদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা ওয়াটার কুলার বা অন্য কোনো কারিগরি বিষয়ে, সেখানে যদি মাস্কের যৌন হয়রানির বিষয়টা উঠে আসে এবং ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়, তাহলে এর ফলাফল টেসলা ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর হতে বাধ্য। বৈশ্বিক পণ্য পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিক কোয়ালম্যান ইলন মাস্ক কি উন্মাদ না কি শিয়ালের মতো ধূর্ত প্রশ্ন তুলেছেন।

তবে এ প্রশ্নের জবাব সম্ভবত মাস্ক নিজেই দিয়েছিলেন টিভির কাল্ট কমেডি শো ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ উপস্থাপনায়। এখানেও তিনি তাচ্ছিল্যের স্বরে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন যে তারা কি মাস্ককে আদৌ স্বাভাবিক মানুষ ভাবেন নাকি। অনলাইনে মাস্কের এখনও অসংখ্য ভক্ত রয়েছে। জেভেগা১০৩ নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী বলেন যে তিনি রিপাবলিকান দলের সমর্থক। টেসলা গাড়ির মালিক এবং মাত্রই টেসলা সোলার প্যানেল কেনার জন্যও তিনি নাম লিখিয়েছেন। টুইটে তিনি মাস্ককে যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন।‎

আবার ‎নাসা প্রধান বিল নেলসনের ভরসা মাস্কের ওপরই আছে। মাস্কের মহাকাশযান কোম্পানি স্পেসএক্সে কর্মীদের একটি নির্ভরযোগ্য ও একটি শক্তিশালী দল রয়েছে এবং নাসার সঙ্গে তাদের কাজ ঝামেলাহীনভাবেই চলছে বলে তিনি রয়টার্সকে জানিয়েছেন। নাসা মহাকাশে নভোচারীদের আনা নেয়ার কাজে এখন স্পেসএক্সের ওপরই নির্ভর করছে। এসব কিছুর ফলেই কিছু শিল্প পর্যবেক্ষক অপেক্ষায় আছেন যে শেষ পর্যন্ত মাস্ক এবং টেসলা কি অবস্থান আসে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.