সম্প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে এসেছে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে। একজন বিমানবালা আলোচিত ও সমালোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেন। ওই ঘটনা চেপে যেতে স্পেসএক্স ভুক্তভোগী ওই নারীকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে খবর ছেপেছে। ইনসাইডারের দাবি, উক্ত বিমানবালাকে আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বদলে মাস্ক এবং তার দুই প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ও টেসলা নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ না করার এবং যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘চুক্তি’ করতে হয়েছিল।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন বলছে যে ২০১৮ সালে স্পেসএক্সের মানবসম্পদ বিভাগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উক্ত বিমানবালা অভিযোগ করেন। স্পেসএক্স কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে শুরুতেই মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে অভিযোগ মীমাংসা করার চেষ্টা করে। বিজনেস ইনসাইডারের দাবী আড়াই লাখ ডলারের মীমাংসা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মাস্ক নিজেও উপস্থিত ছিলেন। চুক্তির শর্ত ছিল, আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বদলে যৌন হয়রানির অভিযোগে কোনো মামলাও করতে পারবেন না এবং মাস্ক বা তার মালিকানাধীন স্পেসএক্স বা টেসলা প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী মুখ খুলতে পারবেন না।
যদিও বিমানবালা নিজের মুখে এ বিষয়ে কথা বলেনি তবে নিজে না বললেও তার এক বন্ধু এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। আর নথিপত্র ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্বেষণ করে আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ইনসাইডার নিশ্চিত হয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া অর্থ নিয়ে মুখ খোলার সুযোগ থাকবে না উক্ত নারীর এমনটি ধরে নেয়া হয়েছিল। তবে উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে মাস্ক অভিযোগকারীকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ভুক্তভোগীর বন্ধুর বরাত দিয়ে ইনসাইডার লিখেছে যে উক্ত নারী মাস্কের গালফস্ট্রিম জি৬৫০ইআর বিমান ক্রুদের একজন ছিলেন।
মাস্ক প্রায়শই তাকে প্রাইভেট কেবিনে ডেকে শরীর মাসাজ করে দিতে বলতেন। এমনকি স্পেসএক্সও ওই কর্মীকে মাসাজ করার বৈধ লাইসেন্স নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ভুক্তভোগীর বন্ধু ইনসাইডারকে বলেছেন যে ইলন মাস্ক ও স্পেসএক্সের সঙ্গে আপস চুক্তি করার সময় বিমানবালার আইনজীবী ওই বন্ধুর কাছ থেকেও লিখিত বক্তব্য নিয়েছিলেন। ইনসাইডার প্রতিবেদনে আরো জানা যায় যে উক্ত বিমানবালা তার বন্ধুকে বলেছেন, এক ফ্লাইটে মাসাজ নেওয়ার সময় দেহের নিচের অংশের আবরণ সরিয়ে ফেলেন মাস্ক এবং মালিশের চেয়ে বেশি দাবি করেন বিমানবালার কাছে।
বিনিময়ে মাস্ক তাকে একটি ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিমানবালা ব্যক্তিগত জীবনে ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করেন এবং মাস্ক বিষয়টি জানতেন। বিমানবালার বন্ধু আরও বলেছেন যে ওই ঘটনার পর থেকে তাকে শিফট দেওয়া কমিয়ে দেয় স্পেসএক্স। মাস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর কর্মক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েন উক্ত বিমানবালা। এক পর্যায়ে তিনি নিশ্চিত হন যে মাস্ককে প্রত্যাখ্যান করার ফলে তার কাজের সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উক্ত বিমানবালার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে পরে আরও সময় দিলেও মাস্ক আর যোগাযোগ করেননি বলে বিজনেস ইনসাইডার বিষয়টি তুলে ধরে।
বিজনেস ইনসাইডার জানায় যে যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মাস্কের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছিল। মাস্ক ইমেইলে বলেছেন যে এর উত্তর দিতে তার আরও সময় প্রয়োজন এবং এ গল্পে আরও অনেক কিছু আছে। তবে তার দাবি, এ অভিযোগের সাথে রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে মাস্ক টুইট করে মিথ্যাবাদী অপবাদ দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা বিমানবালার বন্ধুকে চ্যালেঞ্জ করছেন। সে যদি তাকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে থাকে তাহলে কী দেখেছে সে দাগ বা চিহ্ন শুধু একটা বর্ণনা দিক, যেটা সাধারণ মানুষ জানে না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন অভিযোগকারী কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না, কারণ ওরকম কিছু কখনও ঘটেনি। আরেক টুইটে মাস্ক বলেছেন, সামনের মাসগুলোতে তার ওপর রাজনৈতিক আক্রমণ লক্ষ্যণীয় হারে বাড়বে বলে তার ধারণা। বিজনেস ইনসাইডার লিখেছে যে বিমানবালার বন্ধু তাদের সঙ্গে যোগাযোগের আগে ভুক্তভোগী উক্ত নারীর কাছ থেকে অনুমতি নেননি, কারণ তিনি মনে করেছেন এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আনা উচিত আর সেই বিমানবালা চুক্তিতে আটকা থাকলেও তার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না। জন কুক নামে সংবাদমাধ্যমটির সম্পাদকদের টুইট করে লিখেছেন যে তার সংবাদমাধ্যম যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে মাস্কের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করার পরপরই উক্ত রাজনৈতিক আক্রমণ প্রসঙ্গে মাস্ক টুইট করেছেন।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ লিখেছে যে টুইটারের ঘটনা প্রবাহ থেকে ইঙ্গিত মিলছে, সম্ভবত ইনসাইডারের প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই মাস্ক পাঠকদের দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছিলেন। এদিকে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইলন মাস্ক খবরের শিরোনামের আসার পেছনে আরেকটি কারন যোগ হল। মাইক্রোব্লগিং সেবা টুইটার নিয়ে ইলন মাস্ক নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে প্রায় মাসখানেক ধরে খবরের শিরোনাম দখল করে রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় হলিউড তারকা অ্যাম্বার হার্ডের বিরুদ্ধে তার সাবেক স্বামী জনি ডেপের করা মানহানি মামলার শুনানিতেও মাস্কের নাম একাধিকবার এসেছে।
হার্ড বিচ্ছেদের আগেই মাস্কের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিজনেস ইনসাইডার লিখেছে যে মাস্কের মালিকানাধীন দুই কোম্পানি টেসলা ও স্পেসএক্সে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে কর্মীরা আগেও অভিযোগ তুলেছিলেন। আর মানবসম্পদ বিভাগের ব্যর্থতা নিয়ে টেসলা একাধিক মামলা লড়ছে। টেসলার মানবসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ায় এমন আচরণের মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ আছে। স্পেসএক্সের এক কর্মী অভিযোগ করেছেন, এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কোম্পানি।