Reading Time: 2 minutes

নাসা গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএস এ ‘ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার’ বসিয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকা ধুলা আর বিশ্বের যে অঞ্চলগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ হয় সেগুলো খুঁজে বের করা। আর স্পেকট্রোমিটার নির্মাণের পেছনে নাসার মূল লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর মরুভূমি আর শুষ্ক অঞ্চলগুলো থেকে আসা যে ধুলোবালি বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকে তার খনিজ কাঠামো চিহ্নিত করা।

মধ্য-এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৫০টির বেশি মিথেন গ্যাসের সুপার-এমিটার এলাকা চিহ্নিত করেছে নাসার এই স্পেকট্রোমিটার। মঙ্গলবারেই সুুপার-এমিটার অঞ্চলগুলোর ছবি প্রকাশ করেছে নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি বা জেপিএল। এর একটি ছবিতে তুর্কমেনিস্তানের তেল ও গ্যাসক্ষেত্র থেকে নিঃসরণ হওয়া মিথেন গ্যাস উঠে এসেছে। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট রয়টার্স জানিয়েছে, এর মধ্যে এক জায়গায় জমাট বাঁধা মিথেন গ্যাসের দৈর্ঘ্য ছিল ৩২ কিলোমিটারের বেশি।

নাসার গবেষকদের অনুমান, তুর্কমেনিস্তানের উৎসগুলো থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৫০ হাজার ৪০০ কিলোগ্রাম মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। মিথেন গ্যাসের বড় দুটি উৎসের সন্ধান মিলেছে নিউ মেক্সিকো এবং ইরানে। এ দুটি উৎস থেকে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৯ হাজার কেজি মিথেন গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে নাসা। জেপিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিথেন গ্যাসের উৎস হিসেবে এই দুটি অঞ্চলের ব্যাপারে আগে থেকে বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না।

টানা এক বছরের মিশন শেষে ইএমআইটি ভূপৃষ্ঠে মিথেন গ্যাসের কয়েকশ বড় বড় উৎস আবিষ্কার করবে বলে আশা করছে নাসা। রয়টার্স বলছে, নাসার স্পেকট্রোমিটার যে এলাকাগুলোকে মিথেন গ্যাসের সুপার-এমিটার হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তার কয়েকটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগে থেকে জানা থাকলেও বাকিগুলো নতুন আবিষ্কার, বেশ কয়েকটি তেল ও গ্যাসক্ষেত্র আছে এর মধ্যে। আর্থ সারফেস মিনারেল ডাস্ট ইনভেস্টিগেশন বা ইএমআইটি প্রকল্পের মাধ্যমে মিথেন গ্যাসের উৎপত্তি অনুসন্ধান চালানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বায়ুমণ্ডলে ভেসে ওঠা ধুলাবালি ভূপৃষ্ঠের তাপ বায়ুমণ্ডলের মধ্যে আটকে রাখতে ভূমিকা রাখে নাকি প্রতিফলিত করে সেটি বোঝার চেষ্টা করছেন গবেষকগণ। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২০ কিলোমিটার উচ্চতায় ভাসমান আইএসএসে চড়ে প্রতি ৯০ মিনিটে একবার করে পৃথিবীকে ঘিরে চক্কর দিচ্ছে স্পেকট্রোমিটার। ফুটবল মাঠের সমান তুলনামূলক ছোট স্থান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি একই সময়ে বেশ কয়েক মাইল এলাকা জুড়ে নজর রাখার সক্ষমতাও আছে এর।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

জেপিএল এর গবেষক দলের সদস্য অ্যান্ড্রু থর্প বলেন, ইএমআইটি যত জায়গায় জমাট বাঁধা মিথেন গ্যাস চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে কয়েকটি এযাবৎকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ মহাকাশ থেকে পর্যবেক্ষণে আগে এমন কিছু ধরা পরেনি। নাসা এর মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধুলার ভূমিকা পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করছে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা মিথেন গ্যাসের সুপার-এমিটার আবিষ্কার প্রসঙ্গে নাসার জেপিএল এর গবেষকদের ভাষ্য, মিথেন গ্যাস এমন একটি অভিনব কাঠামোয় ইনফ্রারেড আলো শোষণ করে।

যা ইএমআইটি স্পেকট্রোমিটারের জন্য চিহ্নিত করা খুবই সহজ। পঁচে যাওয়া জৈবিক বর্জ্য আর পাওয়ার প্ল্যান্ট মিথেন গ্যাসের সবচেয়ে বড় উৎস বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে নাসা। মানব সভ্যতার কারণে বায়ুমণ্ডলে যে গ্রিনহাউজ গ্যাস ছড়িয়ে পরছে তার মধ্যে সামান্যই মিথেন গ্যাস।

কিন্তু সমান ওজনের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের তুলনায় মিথেনের তাপ ধরে রাখার সক্ষমতা কয়েক গুণ বেশি। তবে, ইতিবাচক দিক হচ্ছে কার্বন ডাইঅক্সাইড টানা কয়েক শতক বায়ুমণ্ডলে টিকে থাকলেও মিথেন বায়ুমণ্ডলে টিকে থাকে কম-বেশি এক দশক।

অর্থাৎ, মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এর ফলাফলও পাওয়া যাবে তুলনামূলক দ্রুত। 

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.