সোমবার একাধিক টুইটে ইলন মাস্ক দাবি করেন, টুইটারে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে আইফোন নির্মাতা কোম্পানি অ্যাপল, আর এর কারন কি তা এখনো তিনি জানাননি। প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের বিরুদ্ধে অ্যাপ স্টোর থেকে টুইটার অ্যাপ সরানোর হুমকির অভিযোগ তুলেছেন প্ল্যাটফর্মটির প্রধান ইলন মাস্ক। তিনি আরও বলেন, কনটেন্ট মডারেশন প্রশ্নে টুইটারকে প্রতিনিয়ত চাপ দিয়ে আসছিল অ্যাপল। তিনি টুইটে বলেন, টুইটারে বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন বন্ধ রেখেছে অ্যাপল।
তারা কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাক স্বাধীনতা ঘৃণা করে কিনা পরবর্তীতে আরেক টুইটে অ্যাপল প্রধান টিম কুকের টুইটার অ্যাকাউন্ট ট্যাগ করে তিনি জিজ্ঞেস করেন, এখানে হচ্ছেটা কী? ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটাল হিল দাঙ্গায় সমর্থনের কারণে মার্কিন রক্ষণশীলদের কাছে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম পারলার অ্যাপ মুছে দিয়েছিল অ্যাপল ও গুগল। তবে, নিজস্ব কনটেন্ট ও মডারেশন ব্যবস্থা আপডেট করায় ২০২১ সালে পুনরায় অ্যাপটি ফিরিয়ে আনে অ্যাপল। এই প্রসঙ্গে রয়টার্স অ্যাপলের মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো জবাব মেলেনি।
অ্যাপল এই কার্যক্রমের কথা নিশ্চিত না করলেও, তা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স। এর আগেও নিজস্ব নীতিমালার নিয়মিত প্রয়োগের পাশাপাশি অ্যাপ স্টোর থেকে গ্যাব ও পারলারের মতো বেশ কিছু অ্যাপ সরিয়েছে কোম্পানিটি। বিজ্ঞাপনের হিসাব রাখা কোম্পানি প্যাথমেটিক্সের তথ্য অনুসারে, ১০ নভেম্বর ও ১৬ নভেম্বরের মধ্যে টুইটারে বিজ্ঞাপনের পেছনে আনুমানিক এক লাখ ৩১ হাজার ছয়শ ডলার খরচ করেছে অ্যাপল।
যা মাস্কের টুইটার অধিগ্রহনের এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ, ১৬ অক্টোবর ও ২২ অক্টোবরের মধ্যকার খরচ দুই লাখ ২০ হাজার আটশ ডলারের চেয়ে থেকে অনেক কম। তারও আগে, ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে টুইটারের শীর্ষ বিজ্ঞাপনদাতা ছিল অ্যাপল। এর পেছনে তারা সে সময় খরচ করেছে চার কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা ওই সময় কোম্পানির মোট আয়ের চার শতাংশ ছিল। এসব তথ্য মিলেছে ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। এতে টুইটারের অভ্যন্তরীন নথির উদ্ধৃতি দিয়েছে মার্কিন দৈনিকটি।
ওই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে রয়টার্স টুইটারের মন্তব্য জানতে চাইলেও মুখ খোলেনি কোম্পানিটি। গত কয়েকদিনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পসহ প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ হওয়া বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে এনেছেন মাস্ক। নিজেকে বাক স্বাধীনতার ধারক হিসেবে দাবি করা ইলন মাস্ক বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্ট দলকে দায়ী করেছেন, যাদের তারণে বিজ্ঞাপনদাতারা টুইটার থেকে সরে যাচ্ছে। গবেষণা সংস্থা ‘ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিস’ এর ভোক্তা প্রযুক্তি প্রধান বেন বাজারিন বলেছেন, অ্যাপ রিভিউ সংশ্লিষ্ট অ্যাপলের নিয়মিত প্রক্রিয়া নিয়ে হয়তো একটু বেশিই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন ইলন মাস্ক।
অ্যাপলের অ্যাপ রিভিউ ব্যবস্থা কোনো অর্থেই নিখুঁত নয়। এই প্রক্রিয়ার কারণে নিয়মিতই বিপাকে পড়েন অ্যাপ নির্মাতারা। তবে, যা শোনা যাচ্ছে তা হলো, এখানে দ্বিমুখী কথোপকথন হয়। ইলন মাস্কের টুইট করা অভিযোগের তালিকায় ছিল বিভিন্ন সফটওয়্যার নির্মাতার কাছে অ্যাপলের ৩০ শতাংশ ফি কেটে রাখার বিষয়টিও। তার একাউন্টে পোস্ট করা এক মিম থেকে ইঙ্গিত মিলছে, কমিশন পরিশোধের বদলে বরং অ্যাপলের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে চান তিনি।
এই ফি নিয়ে সমালোচনা আর মামলাও নতুন নয়। এর আগে ফোর্টনাইট গেমের নির্মাতা এপিক গেমসের মতো কোম্পানি আদালতেও গিয়েছে অ্যাপলের বিরুদ্ধে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। এই কমিশনের প্রভাব পড়তে পারে ইলন মাস্কের টুইটার গ্রাহক সেবা থেকে আয় বাড়ানোর চেষ্টাতেও। এর পাশাপাশি কনটেন্ট মডারেশন নিয়ে শঙ্কার মুখে বিজ্ঞাপনদাতাদের প্ল্যাটফ্লর্ম ছেড়ে চলে যাওয়ার ক্ষতি সামাল দেওয়ার মাথাব্যাথা তো আছেই।