অনলাইন প্রতারণা, যার শিকার হন নানান পেশার এবং বয়সের লোকজন। প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে অনলাইনভিত্তিক প্রতারণা ঘটেই চলছে। আর এই প্রতারণার শিকার ২৬ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে, আর ৩৬ থেকে ৫০ বছর বয়সীর বেলায় সেটি ২৬ শতাংশ। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেমঘটিত জালিয়াতির বেলায় একাধিকবার আর্থিক লেনদেন একটি সাধারণ বিষয়। ব্রিটিশ ব্যাংকিং কোম্পানি টিএসবির গবেষণায় উঠে এসেছে, স্ক্যামাররা আর্থিক সহায়তা চাওয়ার আগে বিভিন্ন ডেটিং সাইট ও সামাজিক মাধ্যমে নকল প্রোফাইল তৈরি করে।
এরপর এরা এমন লোকজনের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে যারা নিঃসঙ্গ বা কারও সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী। নিজেদের গ্রাহকদের ওপর চালানো টিএসবির গবেষণায় উঠে এসেছে, কোনো প্রেম প্রতারকের কাছে শিকারের প্রথম ও সর্বশেষ আর্থিক লেনদেনের গড় সময় ৫৩ দিন। সংখ্যার হিসাবে টিএসবির কাছে অভিযোগ আসা প্রেম সংশ্লিষ্ট প্রতারণার শিকার ২৬ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। আর ৩৬ থেকে ৫০ বছর বয়সীর বেলায় সেটি ২৬ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের বেলায় ২৫ শতাংশ ও ৬৫ এর উর্ধ্ব ব্যক্তির বেলায় ২২ শতাংশ।
২০২২ সালে টিএসবির বিশ্লেষণ করা সকল প্রেমঘটিত জালিয়াতির ঘটনার তিন পঞ্চমাংশ অর্থাৎ ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই স্ক্যামাররা বিভিন্ন বিল, বা জীবনযাত্রার খরচকে কারণ দেখিয়ে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা সহায়তা, বাড়ি উন্নয়ন বা গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের মতো গল্প বললেও বাকিরা কোনো রকমে প্রয়োজন মেটানোর কথা বলে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে। ব্যাংকিং কোম্পানি টিএসবির অনুসন্ধান বলছে, নিজেদের সম্পর্কের পেছনে সামষ্টিকভাবে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন ৫১ থেকে ৬৫ বছর বয়সীরা।
এর মানে দাঁড়ায়, সামগ্রিক প্রেমঘটিত আর্থিক জালিয়াতির ৪৬ শতাংশই আসে এই বয়সীদের কাছ থেকে। কোম্পানি জানায়, কেউ কখনও অর্থ পাঠাতে বলার মানেই হচ্ছে যোগাযোগ বন্ধ করার সময় হয়ে এসেছে। ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোকজন প্রেমঘটিত স্ক্যামারের সঙ্গে এতটাই জড়িয়ে পড়েন যে, তারা এই সম্পর্কের মানুষটিকে সাহায্য করতে ঋণ নিয়ে থাকেন। টিএসবির এমন এক চতুর্থাংশ ঘটনায় ১১ হাজার ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। স্ক্যামারদের ২১ শতাংশ দাবি করেছে, তারা বিদেশে আটকা পড়ে বাড়িতে ফেরার উপায় খুঁজছে।
ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এর মধ্যে অনেকেই তেল উত্তোলন ক্ষেত্রে কাজ করাকে এর অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। প্রতি ১২ ঘটনার একটিতে আট শতাংশ শিকার ব্যক্তির সঙ্গে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে স্ক্যামার। চার শতাংশ ঘটনায়, শিকার ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, প্রতারকদের কাছে পাঠানো বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি বা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য। টিএসবি ব্যবস্থাপক পল ডেভিসবলেন, প্রেম সংশ্লিষ্ট প্রতারকদের থামানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো অর্থ চাওয়া শুরু হলেই বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা।
পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর তথ্য হাতছাড়া না করার পরামর্শও দিয়েছে ব্যাংকটি।
তারা আরও বলেছে, সামগ্রিক জালিয়াতির চার শতাংশই ঘটে প্রেমের কারণে।